এল নিনো ও লা নিনা কাকে বলে - এল নিনো ও লা নিনা পার্থক্য

এল নিনো ও লা নিনা কাকে বলে এবং এল নিনো ও লা নিনা পার্থক্য সর্ম্পকে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে এই আর্টিকেলটি শুধুমাত্র আপনার জন্য। যেখানে আপনি জানতে পারবেন এল নিনো ও লা নিনা কাকে বলে, এল নিনো ও লা নিনা পার্থক্য সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনা।
এল নিনো ও লা নিনা কাকে বলে
যেখানে আরও জানতে পারবেন এল নিনো এবং লা নিনা ২০২৪,এল নিনোর প্রভাবে কোথায় বেশি বৃষ্টিপাত হয় সহ আরো অজানা তথ্য।

ভূমিকা

প্রিয় পাঠক, আপনি কি জানেন কত টা ভয়ঙ্কর ক্ষতির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে ২০২৪ সালে আমদের এই বায়ুমণ্ডল ? বায়ুমণ্ডল এর এই ভয়ঙ্কর রুপ ধারন করার আগেই জেনে নিন এল নিনো ও লা নিনা কাকে বলে ও এল নিনো ও লা নিনা পার্থক্য সম্পর্কে ।

এল নিনো ও লা নিনা কাকে বলে

এল নিনো: এল নিনো এই শব্দ টি একটি স্প্যানিশ শব্দ। এল নিনো এই শব্দ টির বাংলা অর্থ ছোট বালক বা ছোট ছেলে। অর্থ ছোট বালক নাম হলেও এর কর্মকাণ্ড মোটেও ছোট বালক সুলভ নয়। এল নিনো হচ্ছে এক ধরনের নিরবিচ্ছিন্ন তাপমাত্রা পরিবর্তন সমুদ্রের উপরে অবস্থিত পানির তাপমাত্রার সাথে গর মানের। পূর্ব- কেন্দ্রীয় গ্রীষ্মমণ্ডলীও অঞ্চলে অবস্থিত শান্ত সাগরে সমুদ্রপৃষ্ঠে যখন তাপমাত্রার বিস্তর পার্থক্য (সাধারনত ০.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস) তখন এটি পুরা পৃথিবী আবহাওয়া কে প্রভাবিত করে যেমন বন্যা, খরা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ এর কারন হয়ে দাঁড়ায়।
লা নিনা: লা নিনা এই শব্দ টিও একটি স্প্যানিশ শব্দ। লা নিনা এই শব্দ টির বাংলা অর্থ ছোট বালিকা বা ছোটা শিশু। এটি আবহাওয়ার একটি শীতল ঘটনা আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রুনেই, কম্বোডিয়া দেশ গুলোতে অস্বাভাবিক ঠাণ্ডা সমুদ্রের তাপমাত্রা দ্বারা বৃদ্ধি পায় । এই রুপ ঘটনা কে মূলত লা নিনা বলে।
 
এল নিনো এবং লা নিনা পার্থক্য এর জন্য অস্বাভাবিক বন্যা, খরা, ঝড়, সাইক্লোন, তুষারপাত ইত্যাদির মতো ঘটনা ঘটে।এল নিনো এবং লা নিনা এদেরকে মূলত চিহ্নিত করা হয় সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা এবং বায়ুমণ্ডলীয় চাপের ক্রমাগত পরিবর্তন থেকে।

এল নিনো শব্দটি কে প্রথম ব্যবহার করে?
এল নিনো এবং লা নিনা পার্থক্য নিয়ে সর্ব প্রথম অনুধাবন করে প্রশান্ত উপকূল এর পার্শ্ববর্তী দেশ গুলোর জেলেরা । এই শব্দ সর্ব প্রথম ব্যাবহার করেন জ্যাকব জার্কনেস । ১৯৬৯ সালে এল নিনো উত্তর শান্ত সমুদ্রে একটি ভিন্নধর্মী উষ্ণ বিন্দু উত্তর-দক্ষিণ তাপমাত্রার পার্থক্যর কারনে উষ্ণ স্রোত কে দক্ষিনে ঠেলে দেয়। এর ফলে পূর্বাঞ্চলে গরম বেশি হয়।

এল নিনো ও লা নিনা পার্থক্য

প্রিয় পাঠক, এল নিনো ও লা নিনা পার্থক্য সম্পর্কে নিচের বিস্তারিত তথ্য পড়লে আপনি আরও বিস্তারিত ভাবে বিষয় টি সম্পর্কে জানতে পারবেন-
এল নিনো ও লা নিনা পার্থক্য
নামের অর্থ:
এল নিনো এর বাংলা অর্থ ছোট বালক বা শিশু খ্রিস্ট।
লা নিনা এর বাংলা অর্থ ছোট বালিকা বা শিশু কন্যা।

উদ্ভব:
এল-নিনো এবং লা-নিনা হলো সামুদ্রিক-বায়ুমণ্ডলীয় সঞ্চালনের ফলাফল।
এল-নিনো থার্মোক্লাইন নামক একটি সমুদ্রে পানির পাতলা স্তর যখন অনেক গভীরে অবস্থান করে শীতল জলের ঊর্ধ্বমুখী আবর্ত তৈরি হয় তখন এল নিনো উদ্ভব হয়।
লা নিনা থার্মোক্লাইন স্তর সমুদ্রপৃষ্ঠের কাছাকাছি চলে আসে এই সময় লা নিনা শীতলতর সমুদ্র স্রোতের আগমন হয় এই ভাবে লা নিনা উদ্ভব হয়।

সময়কাল:
এল নিনো ও লা নিনা এর আগের ৫০ বছরের এল নিনো হয়েছিল ১৪ বার এবং লা নিনা হয়েছিল ১২ বার।

বায়ুচাপ:
এল-নিনোর ফলে অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, ব্রুনেই অঞ্চলের ওপর উচ্চচাপ ক্ষেত্র তৈরি হয় এবং পেরু, চিলি, ইকুয়েডরের উপকূলে নিম্নচাপ ক্ষেত্র তৈরি হয়।

লা-নিনার ফলে অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, ব্রুনেই অঞ্চলের উপর নিম্নচাপ ক্ষেত্র তৈরি হয় এবং পেরু, চিলি, ইকুয়েডর উপকূল সংলগ্ন অংশে উচ্চচাপ ক্ষেত্র তৈরি হয়।

প্ল্যাঙ্কটন এর প্রভাব:
এল-নিনো বছরগুলিতে মৎস্যজীবী দের মাছ ধরার পরিমাণ কমে যায়। এদের উপার্জন কম হয়।
লা-নিনার সময় মৎস্যজীবীরা প্রচুর পরিমাণে মাছ ধরে। ফলে এদের প্রচুর উপার্জন হয়।

এল নিনো কোন মহাসাগরে দেখা যায়
দক্ষিণ আমেরিকার একটি দেশ পেরু। পেরুর উপকূলের বাসিন্দা যারা বাস করে প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম প্রান্তে এল নিনোর প্রভাব লক্ষ করা যায়।

লা নিনা কোন মহাসাগরে দেখা যায়
প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিমে শীতল আবহাওয়া বিরাজ করে, সেই অঞ্চল এ লা নিনা দেখা যায়। লা নিনা র প্রভাব এ নিম্নচাপ দেখা যায়।

এল নিনো এবং লা নিনা ২০২৪

এল নিনো ও লা নিনার বিষয় টি যেহেতু পর্যায়ক্রমিক ভাবে ঘটে সেহেতু এখানে মোট ৩ টি ধাপ বা দশা রয়েছে। প্রথমত লা-নিনা দশা, দ্বিতীয়ত নিরপেক্ষ দশা, এবং তৃতীয়ত এল-নিনো দশা। এই বিষয় গুলো বুঝতে হাই প্রেসার এবং লো প্রেসার এই দুটি বিষয়ে বুঝতে পারলে আপনি এল নিনো ও লা নিনা সহ আবহাওয়া সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে ধারনা পেয়ে যাবেন, তাই মনোযোগ দিয়ে পুরো আর্টিকেলটি পড়ুন।
এল নিনো এবং লা নিনা ২০২৪
মনে করুন দুটি পানি ভর্তি পাত্র কিছু দূরত্বে রয়েছে, এখন এদের একটি কে যদি ক্রমাগত গরম করা হয় এবং অপরটি কে যদি ক্রমাগত ঠাণ্ডা করা হয় তবে কি পরিবর্তন হবে? যেই পাত্র কে গরম করা হবে সেই পাত্রের পানি বাষ্প হয়ে উপরে উঠতে থাকবে অর্থাৎ সেখানকার বায়ু হালকা হয়ে উপরে উঠে যাবে এখন এই যে পরিমান বাতাস উপরে উঠে যাচ্ছে এর কারনে এই জায়গার চাপ কমে যাবে তারমানে এখানে লো প্রেসার জোন তৈরি হবে।

অন্যদিকে, যে পাত্রের পানি ঠাণ্ডা করা হচ্ছিল সেখানে যেহেতু কোন বাষ্প তৈরি হবে না বরং সেখানকার বাতাস ঠান্ডা হয়ে ঘন হয়ে যাবে ফলে এখানে প্রেসার বাড়তে থাকবে অর্থাৎ এই অংশে হাইপ্রেসার জোন তৈরি হবে।
যেহেতু হাই প্রেসার রুম থেকে বাতাস লো প্রেসার জনে বইতে থাকে সেহেতু হাই প্রেসার অংশ থেকে লো প্রেসার অংশের দিকে বায়ুপ্রবাহ দেখা যাবে এটা অনেক স্বাভাবিক প্রক্রিয়া মনে হলেও মূলত এই প্রক্রিয়ার কারণেই কোন অঞ্চলে ক্রমাগত অতি বন্যা অতি বৃষ্টি আবার কখনো অতি ক্ষরা, মরুভুমির মত ঘটনা ঘটে থাকে।

প্রিয় পাঠক, ২০২৪ সালে এল- নিনোর প্রকোপ বেড়ে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যাবে। এ পর্যন্ত সব বছরের রেকর্ড ভেঙ্গে ২০২৪ সাল এ সর্বোচ্চ উষ্ণতম বছর হতে যাচ্ছে। ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা বাড়তে পারে বিশ্বে।

উষ্ণতা বাড়তে পারে অস্ট্রেলিয়া এবং এশিয়া মহাদেশ এর অংশে। আফ্রিকার খরা আরও তীব্র আকার ধারন করতে পারে যাতে অনিক ক্ষয় ক্ষতি হয়ার আশঙ্কা করা যাচ্ছে।

এল নিনোর প্রভাবে কোথায় বেশি বৃষ্টিপাত হয়

সাগর থেকে বয়ে আসা মৌসুমি বায়ু বর্ষার বৃষ্টিপাত শুরু করে। ভারতীয় উপমহাদেশে মৌসুমি বৃষ্টির ১৬-১৭ শতাংশ হয়ে থাকে জুন মাসে। উত্তর পশ্চিম উপকূলবর্তী অঞ্চলে এল নিন র প্রভাব বিরাজ করে।

লেখকের মন্তব্য: এল নিনো ও লা নিনা কাকে বলে - এল নিনো ও লা নিনা পার্থক্য

প্রিয় পাঠক, সমুদ্রকে জানতে হলে সমুদ্রের গতিপ্রকৃতির সংলগ্ন বায়ুমণ্ডল অর্থাৎ সাগরের সাথে সামগ্রিক আবহাওয়ার পরিবর্তনগুলো জানা জরুরি। কারন আমদের পৃথিবীর ৭০ শতাংশের বেশি অংশ আবৃত করে রেখেছে সমুদ্র। এই সমুদ্র কে ঘিরে জীবিকা নির্বাহ করছে অনেক মানুষ। এল-নিন ও লা নিনা র পার্থক্যের কারণে সংগঠিত খরা, বন্যা, মরুভূমি, অতিবৃষ্টি অনাবৃষ্টি, সাইক্লোন এর মতো ভয়াবহ দুর্যোগ যা প্রত্যক্ষ পরোক্ষ ভাবে আমদের সকলের জীবনের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।

এতক্ষণ আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। আশা করছি এল নিনো ও লা নিনা কাকে বলে এ বিষয়ে বুঝেছেন। এরকম তথ্যবহুল বা আপনার উপকারে আসে এমন আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন এবং কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত দিন। নিজে ভাল থাকুন, অন্যকে ভালো রাখুন। পৃথিবী হোক সুন্দরময়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অ্যামপ্লি ইনফোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url