সংশোধিত মোটরযান আইন - ট্রাফিক আইন ও জরিমানার তালিকা

সংশোধিত মোটরযান আইন, ট্রাফিক আইন ও জরিমানার তালিকা আয়ত্ব করতে বা জানতে আজকের আর্টিকেলটিতে ক্লিক করেছেন। বাংলাদেশে আমরা অনেকেই আছি মোটরযান আইন বা ট্রাফিক আইন এবং এগুলোর জরিমানা সর্ম্পকে জানি না। সমস্ত আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন সংশোধিত মোটরযান আইন এবং ট্রাফিক আইন ও জরিমানার তালিকা সর্ম্পকে অবগত হবেন।
সংশোধিত মোটরযান আইন
আরো জানতে পারবেন বাংলাদেশ ট্রাফিক আইন ও মোটরসাইকেল ট্রাফিক আইন সর্ম্পকে। কাজেই নিম্নে বর্ণিত আইনগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়ুন এবং সেগুলো মেনে চলার চেষ্টা করুন।

ভূমিকা

বৈধভাবে গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হয় এই নিয়ম কানুন গুলোকে ট্রাফিক আইন বা মোটরযান আইন বলে। এই নিয়ম কানুন গুলো সরকার বা পার্লামেন্ট কর্তৃক অনুমোদনকৃত। কাজেই আমাদের সকলের উচিত যথাযথভাবে ট্রাফিক আইন বা মোটরযান আইন মেনে বৈধ হবে গাড়ি চালনা করা।
ট্রাফিক আইন বা মোটরযান আইন জানার পাশাপাশি আমাদের আরো উচিত এই আইনগুলো ভঙ্গ করলে বা মেনে না চললে তার পরিপ্রেক্ষিতে যে জরিমানা হয় সে সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান রাখা। আমাদের থেকে কোন আইন ভঙ্গ হলে নিম্নে উল্লেখিত তথ্য অনুযায়ী জরিমানা দেওয়া উচিত। সচেতন নাগরিক হিসেবে এটি আমাদের কর্তব্য।

সংশোধিত মোটরযান আইন

সংশোধিত মোটরযান আইন- সংশোধিত নতুন ট্রাফিক আইন ভঙ্গজনিত অপরাধের বিবরণ, আইনের ধারা এবং শাস্তি:
১. অপরাধের বিবরণ: লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালাইলে
অপরাধের শাস্তি: সর্বোচ্চ ২৫০০০ হাজার টাকা জরিমানা বা ৬ মাসের জেল।
২. অপরাধ: ভূয়া লাইসেন্স নিয়ে গাড়ি চালাইলে।
অপরাধের শাস্তি: ১-৫ লক্ষ টাকা জরিমানা বা ৬ মাস থেকে ২ বছর কারাদন্ড।

৩. অপরাধের বিবরণ: রেজিষ্ট্রেশন বিহীন গাড়ি চালাইলে।
অপরাধের শাস্তি: সর্বোচ্চ ৫০০০০ হাজার টাকা জরিমানা বা ৬ মাস জেল।

৪. অপরাধের বিবরণ: ফিটনেস বিহীন গাড়ি চালাইলে।
অপরাধের শাস্তি: সর্বোচ্চ ২৫০০০ হাজার টাকা জরিমানা বা ৬ মাস জেল।

৫. অপরাধের বিবরণ: ট্রাফিক আইন অমান্য করলে।
অপরাধের শাস্তি: সর্বোচ্চ ১০০০০ হাজার টাকা জরিমানা।

৬. অপরাধের বিবরণ: অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালাইলে।
অপরাধের শাস্তি: সর্বোচ্চ ১০০০০ হাজার টাকা জরিমানা।

৭. অপরাধের বিবরণ: অবৈধ্য র্পাকিং করলে।
অপরাধের শাস্তি: সর্বোচ্চ ৫০০০ হাজার টাকা জরিমানা।

৮. অপরাধের বিবরণ: উল্টোপথে গাড়ি চালাইলে।
অপরাধের শাস্তি: সর্বোচ্চ ১০০০০ হাজার টাকা জরিমানা।

৯. অপরাধের বিবরণ: হেলমেট না থাকলে।
অপরাধের শাস্তি: সর্বোচ্চ ১০০০০ হাজার টাকা জরিমানা।
১০. অপরাধের বিবরণ: যত্রতত্র রাস্তা পাড়াপাড়।
অপরাধের শাস্তি: সর্বোচ্চ ১০০০০ হাজার টাকা জরিমানা।

১১. অপরাধের বিবরণ: ‍সিট বেল্ট না বাধলে।
অপরাধের শাস্তি: সর্বোচ্চ ৫০০০ হাজার টাকা জরিমানা।

১২. অপরাধের বিবরণ: চালক ফোনে কথা বললে।
অপরাধের শাস্তি: সর্বোচ্চ ৫০০০ হাজার টাকা জরিমানা।

ট্রাফিক আইন ও জরিমানার তালিকা

ট্রাফিক আইন ও জরিমানার তালিকা- ট্রাফিক আইন ভঙ্গজনিত অপরাধের বিবরণ, আইনের ধারা এবং শাস্তি:
সংশোধিত মোটরযান আইন
১. অপরাধের বিবরণ: ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যতীত গাড়ি চালাইলে,
আইনের ধারা: মোটরযান অধ্যাদেশ- ১৯৮৩, ধারা- ১৩৮,
অপরাধের শাস্তি: সর্বোচ্চ চার মাস কারাদণ্ড বা ৫০০ টাকা জরিমানা বা উভয়দন্ড হতে পারে।

২. অপরাধের বিবরণ: নিষিদ্ধ হর্ন বা বিকল্প হর্ন ব্যবহার করলে,
আইনের ধারা: মোটরযান অধ্যাদেশ- ১৯৮৩, ধারা- ১৩৯,
অপরাধের শাস্তি: ১০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।

৩. অপরাধের বিবরণ: আদেশ অমান্য বাধা সৃষ্টি এবং তথ্য প্রদানে অস্বীকৃতি,
আইনের ধারা: মোটরযান অধ্যাদেশ- ১৯৮৩, ধারা- ১৪০,
অপরাধের শাস্তি: সর্বোচ্চ একমাস কারাদণ্ড বা ৫০০ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড হতে পারে।

৪. অপরাধের বিবরণ: ড্রাইভিং লাইসেন্স সংক্রান্ত অপরাধ,
আইনের ধারা: মোটরযান অধ্যাদেশ- ১৯৮৩, ধারা- ১৪১,
অপরাধের শাস্তি: সর্বোচ্চ তিন মাস কারাদণ্ড বা ৫০০ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল হতে পারে।

৫. অপরাধের বিবরণ: নির্ধারিত গতির চেয়ে অধিক বা উচ্চ গতিতে গাড়ি চালাইলে,
আইনের ধারা: মোটরযান অধ্যাদেশ- ১৯৮৩, ধারা- ১৪২,
অপরাধের শাস্তি: প্রথমবার- এক মাস বা ৩০ দিন কারাদণ্ড। দ্বিতীয়বার- তিন মাস কারাদণ্ড বা ৫০০০ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড এবং যেকোনো মেয়াদের জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স স্থগিত করণ।

৬. অপরাধের বিবরণ: বেপরোয়া ও বিপদজনক ভাবে গাড়ি চালাইলে,
আইনের ধারা: মোটরযান অধ্যাদেশ- ১৯৮৩, ধারা- ১৪৩,
অপরাধের শাস্তি: ছয় মাস কারাদণ্ড বা ৫০০ টাকা জরিমানা এবং যেকোনো মেয়েদের জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স স্থগিত করণ।

৭. অপরাধের বিবরণ: মদ্যপান বা নিশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি চালাইলে,
আইনের ধারা: মোটরযান অধ্যাদেশ- ১৯৮৩, ধারা- ১৪৪,
অপরাধের শাস্তি: তিন মাস কারাদণ্ড বা ১০০০ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে।

৮. অপরাধের বিবরণ: গাড়ির রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, টেক্স টোকেন, ফিটনেস সার্টিফিকেট, ইন্সুরেন্স সার্টিফিকেট, রুট পারমিট এগুলো ব্যতীত গাড়ি চালাইলে,
আইনের ধারা: মোটরযান অধ্যাদেশ- ১৯৮৩, ধারা- ১৫২,
অপরাধের শাস্তি: তিন মাস কারাদণ্ড বা ৫০০ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড।

৯. অপরাধের বিবরণ: ইন্সুরেন্স বিহীন গাড়ি চালাইলে,
আইনের ধারা: মোটরযান অধ্যাদেশ- ১৯৮৩, ধারা- ১৫৫,
অপরাধের শাস্তি: ২০০০ টাকা জরিমান।

১০. অপরাধের বিবরণ: গাড়ির মালিক বা বৈধ ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত গাড়ি চালাইলে,
আইনের ধারা: মোটরযান অধ্যাদেশ- ১৯৮৩, ধারা- ১৫৬,
অপরাধের শাস্তি: তিন মাস কারাদণ্ড বা ২০০০ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড।

১১. অপরাধের বিবরণ: কোন যানবাহন সড়কে রাখা বা সড়কে রেখে মেরামত করা বা কোন যন্ত্রাংশ বা দ্রব্য বিক্রয়ের জন্য সড়কে রেখে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে,
আইনের ধারা: মোটরযান অধ্যাদেশ- ১৯৮৩, ধারা- ১৫৭,
অপরাধের শাস্তি: ৫০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা এবং গাড়ি বা রাস্তায় রাখা জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করতে পারবে।

ট্রাফিক আইন কত প্রকার

বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ট্রাফিক আইন অনেক ধরনের হয়ে থাকে। তার মধ্যে কিছু মৌলিক ট্রাফিক আইন রয়েছে যেগুলো আমাদের মানা আমাদের অত্যন্ত জরুরী। যেগুলো না মানলে আমাদের মোটা অংকের টাকা জরিমানা দিতে হতে পারে। চলুন জেনে নেই কিছু মৌলিক ট্রাফিক আইন সর্ম্পকে। মৌলিক ট্রাফিক আইন সাধারনত ৩ ধরনের হয়ে থাকে-
  • ১ম মৌলিক ট্রাফিক আইন
  • ২য় মৌলিক ট্রাফিক আইন
  • ৩য় মৌলিক ট্রাফিক আইন
১ম মৌলিক ট্রাফিক আইন: 
  • সকল চালককে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
  • না দেখে গাড়ি সামনে বাড়ানো যাবেনা।
  • লাল বাতি ভঙ্গ করা যাবেনা।
  • সামনে_পিছনে, ডানে_বামে না দেখে পাশ্ব রাস্তা থেকে প্রধান রাস্তায় মিলিত হওয়া যাবে না।
  • অসতর্কতার সাথে ইন্টারজেকশনে প্রবেশ না করা।
  • গতিসীমা বজায় রাখা।
  • না দেখে ডানে, বামে মোড় না নেয়া।
২য় মৌলিক ট্রাফিক আইন:
  • অপ্রয়োজনে কোন গাড়ির গতির ধারাবাহিকতার বিঘ্ন ঘটনা থেকে বিরত থাকা।
  • রাস্তার মাঝে রিভার্সে গাড়ি নেয়া থেকে বিরত থাকা।
  • যেখানে সেখানে পার্কিং করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • আঁকাবাঁকা করে গাড়ি চালানো থেকে বিরত থাকা।
৩য় মৌলিক ট্রাফিক আইন:
  • রাস্তা ব্যবহারকারী কোন গাড়ি বা ব্যক্তির ওপর সহানুভূতি জ্ঞাপন করা।
  • পায়ে চলিত যানের প্রতি সদাচার হওয়া।
  • কালো ধোয়া নিঃসরণ হয় কেমন গাড়ি ব্যবহার থেকে বিরত থাকা।

মোটরসাইকেল ট্রাফিক আইন

লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি
পুরাতন আইনে: সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা বা চার মাস জেল।
নতুন আইনে: সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা বা ছয় মাস জেল।
সংশোধিত মোটরযান আইন
ভুয়া লাইসেন্স
পুরাতন আইনে: সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা জরিমানা বা চার মাস জেল
নতুন আইনে: ১ থেকে ৫ লাখ টাকা বা ছয় মাস থেকে দুই বছর জেল

রেজিস্ট্রেশন বিহীন গাড়ি
পুরাতন আইনে: সর্বোচ্চ ২০০০ টাকা বা তিন মাস জেল
নতুন আইনে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা বা ৬ মাসের জেল।

ট্রাফিক সংকেত না মানলে
পুরাতন আইনে: ২০০ টাকা জরিমানা
নতুন আইনে: সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা।

অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালালে
পুরাতন আইনে: ৩০০ টাকা জরিমানা
নতুন আইনের: সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা

অবৈধ র্পাকিং
পুরাতন আইনে: ২০০ টাকা জরিমানা
নতুন আইনে: সর্বোচ্চ ৫০০০ টাকা জরিমান।

উল্টো পথে চালালে
পুরাতন আইনে: ২০০ টাকা জরিমানা
নতুন আইনের: সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমান

হেলমেট না থাকলে
পুরাতন আইনে: ২০০ টাকা জরিমান
নতুন আইনে: সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমান

যততত্র রাস্তা পারাপার
পুরাতন আইনে: ২০০ টাকা জরিমান
নতুন আইনের: সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা

চালক ফোনে কথা বললে
পুরাতন আইনে: ২০০ টাকা জরিমান
নতুন আইনে: সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা

লেখকের মন্তব্য: সংশোধিত মোটরযান আইন

প্রিয় পাঠক, আশা রাখছি সংশোধিত মোটরযান আইন এবং ট্রাফিক আইন ও জরিমানার তালিকা সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে ট্রাফিক আইন মেনে চলুন। কোন ক্ষেত্রে ট্রাফিক আইন অমান্য হলে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জরিমানা করা হয় তা প্রদান করুন এবং চেষ্টা করুন সব সময় বৈধ কাগজপত্র ও ট্রাফিক আইন মেনে গাড়ি চালানো।

এতক্ষণ আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। এরকম তথ্যবহুল বা আপনার উপকারে আসে এমন আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন এবং কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত দিন। নিজে ভাল থাকুন, অন্যকে ভালো রাখুন। পৃথিবী হোক সুন্দরময়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অ্যামপ্লি ইনফোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url