ওজন কমাতে আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম
ওজন কমাতে আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম ও আপেল সিডার ভিনেগার এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান কিন্তু জানতে পারছেন না? তাহলে এই আর্টিকেলটি শুধুমাত্র আপনার জন্য যেখানে জানতে পারবেন- ওজন কমাতে আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম এবং আপেল সিডার ভিনেগার এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পকে।
আমি আপনাদের আরো জানাবো- আপেল সিডার ভিনেগার এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, আপেল সিডার ভিনেগার দাম কত এবং আপেল সিডার ভিনেগার কোনটা ভালো হবে।
ভূমিকা
আপেল সিডার ভিনেগার হলো সিদ্ধ করা আপেলের রস থেকে তৈরী এক ধরনের ভিনেগার। যা প্রাচীন কাল থেকে রান্নার স্বাধ বৃদ্ধি করতে, কোন কিছু পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে এবং ঔষধ হিসেবে ব্যবহিত হয়ে আসছে। আপেল সিডার ভিনেগারে রয়েছে অ্যাসেটিক এসিড, প্রোবায়োটিক, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সহ আরো নানা পুষ্টিগুন।
আরো পড়ুনঃ ওজন কমাতে মধু খাওয়ার নিয়ম
রক্তচাপ, ডায়েবেটিকস নিয়ন্ত্রন, ওজন কমানোর পাশাপাশি চর্ম ও চুলের যত্নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ওজন কমাতে আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম
ওজন কমানোর তথাকথিত পদ্ধতি গুলোর মধ্যে আপেল সিডার ভিনেগার একটি প্রচলিত পদ্ধতি। এটি আপনার ওজন কমানোর পাশাপাশি প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ ও এন্টি এক্সিডেন্ট বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। যা আপনাকে শারীরিক শক্তি যোগানোর পাশাপাশি আপনার ওজন কমাতেও সাহায্য করে। চলুন জেনে নেই ওজন কমাতে আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে:
আপেল সিডার ভিনেগার প্রতিদিন দুই থেকে তিন টেবিল চামচ বা ৩০ থেকে ৪৫ মিলিগ্রাম এর বেশি খাওয়া উচিত নয়। চিকিৎসা শাস্ত্রে প্রতিদিন এক থেকে দুই টেবিল চামচ বা ১৫ থেকে ৩০ মিলিগ্রাম আপেল সিডার ভিনেগারের ব্যবহার করা কথা বলা হয়েছে। আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার শুরু দিকে এক চা চামচ ৫ মিলিগ্রাম খাওয়া উচিত এবং ধীরে ধীরে এর পরিমাণ বাড়ানো উচিত। একেবারে অধিক পরিমাণে খাওয়া উচিত নয়।
কখন খাবেন এবং কিভাবে খাবেন:
খাবারের ৩০ মিনিট পূর্বে ১ গ্লাস পানিতে ১ থেকে ২ টেবিল চামচ বা ১৫ থেকে ৩০ মিলিগ্রাম আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে খেতে পারেন। এটি আপনার ক্লান্তি দূর করে পূর্ণতা বাড়াবে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করবে।
শারীরিক কোষারদ বা ব্যায়াম করার পর আপেল সিডার ভিনেগার পানিতে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এটি বেশি ব্যথা কমাতে কিছু করে।
সালাদে বা স্মুদিতে ১ টেবিল চামচ বা ১৫ মিলিগ্রাম আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে খেতে পারেন। এটি আপনাকে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ থেকে বিরত রাখবে ফলে আপনার ওজন অনেকটা কমে যাবে।
আপেল সিডার ভিনেগার এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
আপেল সিডার ভিনেগারের অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যবহার বা সঠিক উপায়ে না খাওয়ার জন্য এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যা আমাদের শারীরিক বা মানসিক ভাবে ক্ষতি করতে পারে। চলুন জেনে নেই আপেল সিডার ভিনেগার এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে:
আপেল সিডার ভিনেগার একটি অম্ল যুক্ত খাবার, যা পেটের অম্লতা বৃদ্ধি করে, হজম শক্তিতে বাধা দেয় ফলে বদহজম হয় এবং বমি বমি ভাব হয়।
আপেল সিডার ভিনেগার দীর্ঘ মেয়াদী ব্যবহারের ফলে দাঁতের এনামেল ক্ষয় হয় এবং অকালে দাঁত পড়ে যেতে পারে।
আপেল সিডার ভিনেগার সরাসরি ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বক জ্বালা, লালচে ভাব এবং চুলকানি অনুভব হতে পারে।
যারা ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ধরনের ওষুধ খাচ্ছেন বা কিডনি সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য আপেল সিডার ভিনেগার ক্ষতির কারণ হতে পারে।
গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী মহিলাদের জন্য আপেল সিডার ভিনেগার নিরাপদ নয় এড়িয়ে চলা উচিত।
নির্দিষ্ট মাত্রার বাহিরে অতিরিক্ত মাত্রায় আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার ফলে আপনার মুখ বা গলা জলা অনুভব হতে পারে।
আপেল সিডার ভিনেগার দাম কত - আপেল সিডার ভিনেগার কোনটা ভালো
আমরা অনেকেই আপেল সিডার ভিনেগার কিনতে গিয়ে দাম নিয়ে দ্বিধা-দন্ডে পরি। দাম নির্ভর করে কোন ব্র্যান্ডের আপেল সিডার ভিনেগার কিনছেন, কি পরিমান কিনছেন এবং কোথায় থেকে কিনছেন তার উপর। তবে যেখান থেকেই কিনুন না কেন দাম-দর করে কিনা উচিত। দাম সব সময় একই রকম থাকে না কম বা বেশি হতে পারে।
চলুন জেনে নেই কিছু আপেল সিডার ভিনেগারের দাম-
- ব্র্যাগ আপেল সিডার ভিনেগার- ৪৭৩ মিলি গ্রাম। যার বর্তমান বাজার মূল্য- ৫৫০ টাকা।
- ইতালিয়ানো অর্গানিক আপেল সিডার ভিনেগার- ১ লিটার। যেটির বর্তমান বাজার মূল্য- ১২০০ টাকা।
- ডিসকভারি অর্গানিক আপেল সিডার ভিনেগার- ৫০০ মিলি গ্রাম। যার বর্তমান বাজার মূল্য- ৭৫০ টাকা।
- কারকুমা অর্গানিক আপেল সিডার ভিনেগার- ৪৮০ মিলি গ্রাম। যেটির বর্তমান বাজার মূল্য- ৫৬০ টাকা।
- ব্যাগ অর্গানিক আপেল সিডার ভিনেগার উইথ দ্যা মাদার- ৪৭৩ মিলি গ্রাম। যার বর্তমান বাজার মূল্য- ৪১৫ টাকা।
- ব্যাগ অর্গানিক আপেল সিডার ভিনেগার উইথ দ্যা মাদার- ৯৪৬ মিলি গ্রাম। যার বর্তমান বাজার মূল্য- ১২৮০ টাকা।
- হেইঞ্জ আপেল সিডার ভিনেগার- ৪৭৩ মিলি গ্রাম। যেটির বর্তমান বাজার মূল্য ৩৫০ টাকা।
বলে রাখা ভালো নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মত আপেল সিডার ভিনেগারের দাম কম বা বেশি হতে পারে। কিনার আগে অবশ্যই দাম সর্ম্পকে অবগত হয়ে আপেল সিডার ভিনেগার ক্রয় করুন।
আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার সময়
আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার কোন সময়সীমা নেই। আপনি যেকোন সময় খেতে পারেন। তবে দিন বা রাতের যেকোন একটি নিদিষ্ট সময়ে প্রতিদিন খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়। ধরুন আজ সকাল ৭ টার সময় খেলেন, পরের দিন ৮ টা, তারপর দিন ৯ টা। এভাবে না খেয়ে আজ ৭ টার সময় খেলেন, পরদিন ও ৭ টার সময় খান এভাবে নিদিষ্ট একটি সময় নির্ধারন করুন।
সেই সময় অনুযায়ী রেগুলার আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার চেষ্টা করুন। এতে ভালো ফল পাবেন। আপেল সিডার ভিনেগার খালি পেটে খাওয়া উত্তম। অনেকের মতে খালি পেটে খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়। এটি খাওয়ার সময় অবশ্যই পানি মিশ্রিত করে পাতলা করে সেবন করুন।
অন্যান্য খাবার খাওয়ার সময় সেই খাবারের সাথে ও খেতে পারেন। যেমন- সালাদ, স্মুদি ইত্যাদি। আপনি যদি অধিক পরিশ্রম করেন, কাজ শেষে আপেল সিডার ভিনেগার খেতে পারেন। এতে আপনার পেশিগুলো উৎজীবিত হবে, পাশাপাশি কোন ব্যাথা কমাতে সাহায্য করবে ফলে পুনরায় কাজ করার শক্তি পাবেন।
আপেল সিডার ভিনেগার এর উপকারিতা ও অপকারিতা
আপেল সিডার ভিনেগার যেমন আমাদের শারীরিক উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ঠিক তেমনি এর কিছু ক্ষতি দিক বা অপকারিতা রয়েছে। যা আমাদের শরীরিক উন্নতিতে বাধা সৃষ্টি করে। চলুন জেনে নেই আপেল সিডার ভিনেগারের কিছু উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে-
উপকারিতা:
- আপেল সিডার ভিনেগার প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ যা হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এমনকি ক্যান্সারের ঝুঁকি নির্মূল করতেও সাহায্য করে।
- এটি রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- আপেল সিডার ভিনেগার ওজন কমাতে এবং উচ্চ রক্ত চাপ কমাতে বেশ কার্যকারী।
- কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে. আপেল সিডার ভিনেগার এলএলপি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
- আপেল সিডর ঘৃণা করে অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি প্রচুর পরিমাণে রয়েছে যা দেখাবো প্রবাহ কমাতে সাহায্য করে।
- এটি ছত্রাক সংক্রমনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করে এবং দুর্গন্ধ দূর করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়।
- অ্যাপেল সিডার ভিনেগার টপ ও চুলের জন্য বেশ উপকারী। যা আমরা মুখ ধোয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারি, এবং চুলে কন্ডিশন হিসেবে ব্যবহার করতে পারি।
অপকারিতা:
- মাত্রাধিক আপেল সিডার ভিনেগারের ব্যবহার আমাদের মাথা ব্যথার কারণ হতে পারে।
- দীর্ঘস্থায়ী ভাবে আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহারের ফলে দাঁতের ক্ষতি হতে পারে।
- আপেল সিডার ভিনেগার অধিক ব্যবহারের ফলে মানুষের মুখের জ্বালাপোড়া বা লালচে ভাব হতে পারে।
- এটি সরাসরি চোখে লাগলে চোখে জ্বালা করতে পারে। সেক্ষেত্রে পানি দিয়ে চোখ ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।
- আপেল সিডার ভিনেগার সরাসরি টকে লাগানো যাবে না কারণ এতে ত্বক জ্বালাপোড়া করতে পারে কাজেই এটি পানিতে মিশিয়ে ব্যবহার করুন।
লেখকের মন্তব্য: ওজন কমাতে আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম
প্রিয় পাঠক, আশা করছি ওজন কমাতে আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম ও আপেল সিডার ভিনেগার এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পকে অবগত হয়েছেন। আপেল সিডার ভিনেগার কিনার আগে আসল নকল দেখে ক্রয় করুন। প্রতিদিন একটি নিদিষ্ট মাত্রায় আপেল সিডার ভিনেগার সেবন করুন।
এতক্ষণ আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। এরকম তথ্যবহুল বা আপনার উপকারে আসে এমন আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন এবং কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত দিন। নিজে ভাল থাকুন, অন্যকে ভালো রাখুন। পৃথিবী হোক সুন্দরময়।
অ্যামপ্লি ইনফোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url