বাচ্চাদের আপেল খাওয়ার নিয়ম - ভরা পেটে আপেল খেলে কি হয়
আপনি বাচ্চাদের আপেল খাওয়ার নিয়ম নিয়ে চিন্তিত বা ভরা পেটে আপেল খেলে কি হয় সে সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে আপনি ঠিক জায়গাতেই ক্লিক করেছেন। আমি আপনাদের জানাবো বাচ্চাদের আপেল খাওয়ার নিয়ম সহ ভরা পেটে আপেল খেলে কি হয় এবং আপেল খেলে কি ওজন বাড়ে সে সম্পর্কে।
আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন আশা করছি বাচ্চাদের আপেল খাওয়ার নিয়ম সহ আপেল সম্পর্কে যাবতীয় সকল কিছু জানতে পারবেন।
ভূমিকা
আপেল হলো Rosaceae পরিবারের Malus domesticaপ্রজাতির গাছের ফল। আপেল বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফলগুলোর মধ্যে একটি এবং এটি ১০০ টিরও বেশি দেশে উৎপাদিত হয়। আপেলের উৎপত্তি মধ্য এশিয়া এবং ককেসাস পর্বতমালার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে। আপেল একটি অত্যন্ত পুষ্টিশালী, স্বাস্থ্যকর এবং আকর্ষণীয় ফল যা প্রায় সব বয়সের মানুষের কাছে প্রিয়।
বাচ্চাদের আপেল খাওয়ার নিয়ম
পুষ্টি সমৃদ্ধিতে বাচ্চাদের আপেল খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে আপেল খাওয়ার ক্ষেত্রে বাচ্চাদের কিছু সাবধানতা রয়েছে এবং কিছু নিয়ম মেনে বাচ্চাদের আপেল খাওয়ালে তাদের স্বাস্থ্যের জন্য আপেল বেশ উপকারী হতে পারে। নিম্নে বাচ্চাদের আপেল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
আমরা সকলেই জানি, ৬ মাস বয়সের আগে কোন শিশুকে মায়ের দুধ ছাড়া অন্য কোন খাবার খাওয়ানো উচিত নয়। বাচ্চার বয়স ৬ মাস সর্ম্পন হলে বাচ্চাকে আপেলের পিউরি খাওয়ানো যেতে পারে। পিউরি তৈরী করার জন্য একটি আপেলের উপরের আবরণ ছাড়িয়ে নিয়ে আপেল ভালো ভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
আরো পড়ুনঃ ওজন কমাতে মধু খাওয়ার নিয়ম
ভালো ভাবে ধোয়ার পর আপেল সেদ্ধ করে নিন যাতে আপেল অনেকটা নরম হয়। সেদ্ধ আপেল ঠান্ডা করে নিন। এরপর ব্লেন্ডারে খুব ভালো ভাবে ব্লেন্ড করে নিন। খেয়াল রাখুন যাতে খুব ভালো ভাবে মসৃণটি হয় এবং কোন আপেলের টুকরো অবশিষ্ট না থাকে। পিউরি হয়ে গেলে বাচ্চাকে অল্প অল্প করে খাওয়ান। শিশুর আপেলে অ্যালার্জির লক্ষণ দেখা দিলে বা পেটে সমস্যা হলে আপেল খায়ানো থেকে বিরত থাকুন।
ভরা পেটে আপেল খেলে কি হয়
ভরা পেটে আপেল খেলে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়। নিম্নে কিছু ভরা পেটে আপেল খাওয়ার উপকারিতা উল্লেখ করা হলো:
পেটের সমস্যা দূর করার মহা ঔষধ হলো আপেল। আপেলে রয়েছে অধিক পরিমানে ফাইবার এবং পানি। ফাইবার এবং পানি খাবারের সাথে মিশে খাবার সর্ম্পন ভাবে শোষিত করে, যা পেটের এসিডিটি দূর করার পাশাপাশি পেটের আরো অন্যান্য সমস্যা দূর করে।
আপেলে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বা জিআই এর পরিমান অনেক কম থাকে, যা রক্তে থাকা শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়াতে বাধা দেয়। ভরা পেটে আপেল খেলে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা আরো স্থিতিশীল হয়।
ভরা পেটে আপেল খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়, যা পেট ফোলাভাব, বদহজম বা গ্যাস দূর করতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিক পালন করে। আপেল দীর্ঘ সময় পেটের পূর্ণতা প্রদান করে, যা অধিক খাবার খাওয়া থেকে দূরে রাখে। ফলে আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রনে থাকে।
আপেল খেলে কি ওজন বাড়ে
এক কথায় বলতে গেলে আপেল খেলে ওজন বাড়ে না বরং ওজন নিয়ন্ত্রনে থাকে। আপেল একটি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর খাবার যা আমাদের শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ রাখে। আপেলে অধিক পরিমানে ফাইবার রয়েছে। আপেল খাওয়ার পর আপেলে থাকা ফাইবারের কারনে আমাদের পেট অনেক সময় পর্যন্ত ভরা রাখে এবং ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে।
ফলে অন্য কোন খাবার গ্রহন না করার কারনে আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রনে থাকে। সাধারনত একটি আপেলে মাত্র ৯৫ ক্যালোরি থাকে। তাই আপেল খেলে ওজন বাড়ে না বরং তা আমাদের শরীরে পুষ্টিগুন সরবরাহ করে এবং আমাদের ওজন স্বাভাবিক থাকে।
একটি মাঝারি ধরনের আপেলে ৭৬ থেকে ৭৯ ভাগ পানি থাকে, যা আমাদের শরীরকে হাইড্রেটের রাখতে এরং মেটাবলিজম বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ফলে আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রনে থাকে। তবে অন্য যেকোন খাবারের মত অতিরিক্ত আপেল খেলে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কাজেই আমাদের নিয়মিত পরিমান মত আপেল খাওয়া উচিত।
প্রতিদিন ১ থেকে ২ টি আপেল খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত। যা আমাদের স্বাভাবিক ওজন বজায় রাখে। আমরা প্রতিদিন খাবারের সাথে বা স্ন্যাকস হিসেবে আপেল খেতে পারি। আপেলের সাথে অন্যান্য পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার যেমন ওটমিল, বাদাম, দই মিশিয়ে খেলে আরো বেশি উপকারিতা পাওয়া যায়।
আমাদের উচিত নিয়মিত সুষম খাদ্য গ্রহণ করা এবং নিয়মিত শরীর চর্চা করা পাশাপাশি অতিরিক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা। তবে আমাদের ওজন বাড়বে না বরং স্বাভাবিক থাকবে।
আপেল কি ভিটামিন আছে
আপেল ভিটামিনে পরিপূর্ন একটি খাবার। আপেলে রয়েছে ভিটামিন সি, যা আমাদের শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি এর ১০ ভাগ পূর্ন করে। এছাড়া ও রয়েছে ভিটামিন কে, যা আমাদের রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। আর রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন এ চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে।
আপেলের রয়েছে ভিটামিন ই, যা আমাদের শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ করে এবং তা মৃত কোষগুলোকে সতেজ করতে সাহায্য করে। আপেলে রয়েছে ভিটামিন বি৬, যা আমাদের দাঁতের মাড়ি ভালো রাখে এবং রক্তকোষ তৈরি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এছাড়াও আপেলে রয়েছে ক্যারোটিনযুক্ত এন্টি এক্সিডেন্ট, যা আমাদের শরীরে ক্যান্সার এবং অন্যান্য অসুস্থতা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। আপেলে আরো রয়েছে থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, নিয়াসিন, প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড এবং ফোলেটের মত প্রয়োজনীয় ভিটামিন। কাজেই নিয়মিত আপেল খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যোপযোগী।
আপেল খেলে কি গ্যাস হয়
আপেল খেলে সাধারনত গ্যাস হওয়ার কথা না। আপেলে রয়েছে ফাইবার যা হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং পেটের জন্য বেশ উপকারি একটি ফল। তবে অনেকেই রয়েছেন যাদের আপেল খেলে গ্যাসের সমস্যা হয়ে থাকে কারন কিছু সংখ্যক মানুষের সেলিবিয়াক বা আইবিএস রোগ থাকে। যারা এই রোগে ভোগেন তারা আপেলে থাকা ফাইবার হজম করতে পারেন না।
ফলে তাদের গ্যাসের সমস্যা হয়ে থাকে। আবার আমরা অনেকেই রয়েছি যারা পরিমানের অধিক আপেল খেয়ে থাকি, যার কারনেও গ্যাস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পেটে থাকা অন্য খাবারের কারনেও গ্যাস হতে পারে। তবে আপনি যদি মনে করেন আপেল খাওয়ার কারনে গ্যাস হয়। তাহলে নিম্নে থাকা উপায়গুলো অনুসরন করুন।
- আপেল কম পরিমানে গ্রহন করুন।
- আপেল ধীরে ধীরে এবং ভালো করে চিবিয়ে খান।
- আপেল খাওয়ার সময় পানি পান করুন।
- আপেল বা অন্য খাবার খাওয়ার পর কিছুক্ষন হাঁটুন।
আপেল সিদ্ধ খেলে কি হয়
৬ মাস বয়সের পর থেকে সাধারনত আমরা আপেল সিদ্ধ করে খাইনা। আপেল তাজা অবস্থায় খেলে শরীরের জন্য বেশ উপকারি। কিছু খাবার বা রেসিপি রয়েছে যেখানে আপেল সিদ্ধ করে খাওয়া হয়।যেমন- রুটি, কেক ইত্যাদি। আপেল সিদ্ধ করে খেলে এর পুষ্টিগুন কিছুটা কমে যায়। যা আমাদের স্বাস্থ উপকারিতা কমিয়ে দেয়।
তবে আপেল সিদ্ধ করে খেলে পুষ্টিগুন সম্পর্ন ভাবে নষ্ট হয় এই কথাটি সঠিক নয়। আপেল সিদ্ধ করে খেলে অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়। যেমন- আপেল সিদ্ধ করে খেলে ভিটামিন সি সংরক্ষিত থাকে। আপেল সিদ্ধ করার ফলে আপেলে থাকা ফাইবার অনেকটা নরম হয়, যা হজমশক্তি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে।
আপেল সিদ্ধ করার ফলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টর পরিমান অনেকটা বৃদ্ধি পায়, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং ক্যান্সারের মত বড় ধরনের রোগ থেকে রক্ষা করে। আপেল সিদ্ধ করলে পটাসিয়ামের গুনমান ঠিক থাকে। যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে। সিদ্ধ আপেল খেলে শরীরে থাকা পেকটিন কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। আপেল সিদ্ধ করলে ক্যালোরির পরিমান কমে যায়।
লেখকের মন্তব্য: বাচ্চাদের আপেল খাওয়ার নিয়ম - ভরা পেটে আপেল খেলে কি হয়
প্রিয় পাঠক, আশা করছি বাচ্চাদের আপেল খাওয়ার নিয়ম - ভরা পেটে আপেল খেলে কি হয় তা বুঝতে পেরেছেন। আপেল একটি পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার, আপেল কিনার আগে ভেজাল বা ফরমালিনমুক্ত আপেল দেখে কিনুন। আপেলের পুষ্টি সম্পর্কে আবগত হয়ে আপেল খাদ্য তালিকাতে রাখুন। একদিনে ২ টি আপেলের বেশি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
এতক্ষণ আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। এরকম তথ্যবহুল বা আপনার উপকারে আসে এমন আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন এবং কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত দিন। নিজে ভাল থাকুন, অন্যকে ভালো রাখুন। পৃথিবী হোক সুন্দরময়।
অ্যামপ্লি ইনফোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url