রাতে ঘুমানোর আগে গরম দুধ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানুন
রাতে ঘুমানোর আগে গরম দুধ খাওয়ার উপকারিতা ও প্রতিদিন কতটুকু দুধ খাওয়া উচিত জানতে চেয়ে আর্টিকেলটিতে ক্লিক করেছেন। আমি আপনাদের জানাবো রাতে ঘুমানোর আগে গরম দুধ খাওয়ার উপকারিতা এবং প্রতিদিন কতটুকু দুধ খাওয়া উচিত সহ গর্ভাবস্থায় দুধ খাওয়ার সঠিক সময় সম্পর্কে বিস্তারিত।
সমস্ত আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন- রাতে ঘুমানোর আগে গরম দুধ খাওয়ার উপকারিতা সহ দুধ খাওয়া সম্পর্কে আলোচনা।
ভূমিকা
প্রকৃতির অমূল্য উপহার দুধ। দুধ ছোট থেকে বড় সবাই খেতে পছন্দ বোধ করে। দুধ পুষ্টির এক অপরিহার্য উৎস। দুধে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, রিবোফ্লাভিন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। যা আমাদের সুস্থতা বজায় রাখতে এবং মানসিক বিকাশ ঘটাতে গুরুত্বপূর্ণ।
আরো পড়ুনঃ ড্রাগন ফল খাওয়ার সঠিক সময়
আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় দুধ রাখা উচিত এবং আমাদের খাদ্যাভাসে পরিনত করা উচিত। গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া এবং উটসহ অন্যান্য প্রানীর দুধ আমাদের পুষ্টির সংগ্রহে অপরিহার্য।
রাতে ঘুমানোর আগে গরম দুধ খাওয়ার উপকারিতা - গরম দুধের উপকারিতা - রাতে দুধ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের ধারনা, রাতে ঘুমনোর আগে গরম দুধ পান করা ঘুম আসাতে প্রতিকার হিসেবে কাজ করে। আবার অনেকেই মনে করেন, দুধে থাকা উপাদান সমূহ শরীরকে শিথিল করে ঘুম আসাতে ভূমিকা রাখে। নিম্নে রাতে ঘুমানোর আগে গরম দুধ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
- বিজ্ঞানীদের মতে, দুধে থাকা ট্রিপটোফ্যান নামক একধরনের অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে, যা শরীরে সেরোটোনিনে রূপান্তরিত হয়। সেরোটোনিন একটি নিউরোট্রান্সমিটার যা মেজাজ এবং ঘুম নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করো।
- দুধে থাকা ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স এবং ম্যাগনেসিয়াম মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক। গরম দুধ খাওয়াতে মানসিক প্রশান্তি আসে এবং আমাদের রাগ কমাতে সাহায্য করে।
- গরম দুধে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম ভিটামিন-ডি এবং প্রোটিন থাকে, যা আমাদের শরীরে পুষ্টি যোগান দেয়। গরম দুধ খাওয়ার পরে আমাদের দাঁত এবং হাড় ভালো থাকে।
- রাতে গরম দুধ খাওয়ার ফলে আমাদের হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকে এবং পেটে থাকা গ্যাস ও হজমের সমস্যা নিরাময় করেন।
- রাতে গরম দুধ পান করার ফলে আমাদের শরীরে হাইড্রেশন স্বাভাবিক রাখতে সহায়ক। এটি আমাদের সারাদিনের ক্লান্তি দূর করে শরীরকে পুনরুজ্জীবিত করে।
- আমাদের সারা দিনে পরিশ্রমের ফলে আমাদের পেশি ব্যাথা ও ক্লান্তি অনুভব হয়। যা রাতে গরম দুধ খেলে কমে যায়। গরম দুধে থাকা প্রোটিন এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান সে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
- রাতে গরম দুধ খাওয়ার ফলে, দূরে থাকা প্রোটিন শরীরের কোষ ও টিসু গঠনে কার্যকারী। যা আমাদের শারীরিক উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
প্রতিদিন কতটুকু দুধ খাওয়া উচিত
দিনে কতটুকু দুধ খাওয়া উচিত তা সম্পূর্ণ নির্ভর করে আপনার বয়স, আপনার স্বাস্থ্য অবস্থা এবং আপনার শারীরিক কর্মক্ষমতার উপরে। তবে এক্ষেত্রে আরো একটি বিষয় পরিলক্ষিত হওয়ায় আপনি কিসের দুধ পান করছেন তার উপর। নিম্নে প্রতিদিন কতটুকু দুধ খাওয়া উচিত আলোচনা করা হলো-
আরো পড়ুনঃ কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম
০-৬মাস: শূন্য থেকে ছয় মাস পর্যন্ত শিশুকে মায়ের দুধ ছাড়া অন্য কিছু খাওয়ানো বা দুধ খাওয়ানো উচিত নয়।
১ - ৩ বছর: এক থেকে তিন বছর বয়স পর্যন্ত বাচ্চাদের প্রতিদিন ২ থেকে ৩ কাপ বা ৪৮০ থেকে ৭২০ মিলিমিটার দুধ খাওয়ানো উচিত।
৪ - ৮ বছর: চার থেকে আট বছরের শিশুদের জন্য প্রতিদিন ২ থেকে ২.৫ কাপ বা ৪৮০ থেকে ৬০০ মিলিলিটার দুধ খাবার খাওয়ানো উচিত।
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম
৯ - ১৩ বছর: নয় থেকে তের বছর বয়স পর্যন্ত প্রতিদিন ৩ কাপ বা ৭২০ মিলিলিটার দুধ খাওয়ানো উচিত।
১৪-১৮ বছর: ১৪ থেকে ১৮ বছর: ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ কাপ বা ৭২০ থেকে ৯৬০ মিলিমিটার গরুর দুধ খাবার খাওয়ানো যেতে পারে।
১৯-৫০ বছর: ১৯ থেকে ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিদিন ২ থেকে ৩ কাপ বা ৪৮০ থেকে ৭২০ মিলিলিটার গরুর দুধ বা দুগ্ধজাতীয় খাবার খাওয়ানো যেতে পারে।
৫১ এর বেশি বছর: ৫১ থেকে বেশি বছর বয়সের মানুষদের প্রতিদিন ২ থেকে ৩ কাপ বা ৪৮০ থেকে ৬২০ মিলিলিটার গরুর দুধ বা দুগ্ধজাতীয় খাবার খাওয়ানো যেতে পারে।
উপরে উল্লেখিত দুধ খাওয়ার পরিমাণ গুলো গরুর দুধের সাথে সম্পৃক্ত। যদি গরুর দুধ না হয়ে অন্য কোন প্রাণী বা কৃত্রিম হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে এর পরিমাণ আলাদা হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় দুধ খাওয়ার সঠিক সময় - দুধ খাওয়ার উপযুক্ত সময়
গর্ভবতী মায়েদের জন্য দুধ এক পুষ্টিগুনে ভরা গুরুত্বপূর্ন একটি খাবার। গর্ভাবস্থায় দুধ খেলে মা ও গর্ভাশয়ে থাকা শিশুর সুস্থ্যতা বজায় থাকে। কারন দুধে রয়েছে অনেক বেশি ভিটামিন-ডি, প্রোটিন এবং ক্যালসিয়াম। স্বাভাবিক মানুষ যেকোন সময় দুধ খেতে পারেন। গর্ভবতী মা ও তার ব্যতিক্রম নন। আপনার যখন খেতে ভালো লাগে তখন খেতে পারেন।
সারা দিনের জন্য শরীরে দরকারী শক্তি যোগাতে, সকালে নাস্তার পাশাপাশি ২ থেকে ৩ কাপ বা ৪৮০ থেকে ৭২০ মিলিলিটার দুধ খেতে পারেন। অথবা দুধের সাথে ওটমিল বা সিরিলেক্স মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
দুপুরে খাবার পর ২ থেকে ৩ কাপ বা ৪৮০ থেকে ৭২০ মিলিলিটার পরিমান দুধ পান করলে, হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকে। যা আপনাকে সুস্থ্য রাখতে সাহায্য করে।
আরো পড়ুনঃ বাচ্চাদের আপেল খাওয়ার নিয়ম
রাতে ঘুমানোর আগে ২ থেকে ৩ কাপ বা ৪৮০ থেকে ৭২০ মিলিলিটার পরিমান গরম দুধ পান করলে, দুধে থাকা ট্রিপটোফ্যান এবং মেলাটোনিনের কারনে রাতের ঘুম অনেকটা ভালো হয়। যা একজন স্বাভাবিক মানুষ বা গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য বেশ উপকারি।
অন্যান্য সময় ও দুধ খাওয়া যেতে পারে। দিনের যে কোন সময় ২ থেকে ৩ কাপ দুধের মধ্যে চকলেট বা হলুদ মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
সকালে দুধ খাওয়ার উপকারিতা10
ঘন দুধ খাওয়ার উপকারিতা
দুধ অনেক বেশি জ্বাল দেওয়ার ফলে অতিরিক্ত পানি পানি ভাব কমে গিয়ে দুধ খানিকটা কমে যায় এবং গাঢ় হয়ে যায়। সেই দুধকে বলা হয় ঘন দুধ বা ঘনীভূত দুধ। অতিরিক্ত পানি কমে যাওয়ার ফলে, স্বাভাবিক দুধের তুলনায় পুষ্টিগুন বেশি পাওয়া যায়। নিম্নে ঘন দুধ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-- স্বাভাবিক দুধের তুলনায় ঘন দুধে প্রোটিন, ভিটামিন-ডি, ক্যালসিয়ামসহ আরো অন্যান্য দরকারি উপাদান পাওয়া যায়। যা আমাদের শরীরে সর্বোচ্চ পুষ্টি প্রদান করে এবং আমাদের কার্যক্ষমতা মেটাতে সহায়ক হয়।
- ঘন দুধে সাধারণ দুধের তুলনায় অধিক ক্যালোরি ও কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায়। যা আমাদের শরীরে দূত শক্তি যোগান দেয়।
- যাদের ওজন অনেক কম বা অপুষ্টিতে ভূগছেন, তাদের ওজন বৃদ্ধি করতে এবং পরিমান মত পুষ্টি যোগাতে ঘন দুধ খাওয়া জরুরি। ঘন দুধে রয়েছে অধিক ক্যালোরি এবং ওজন বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় উপাদান।
- চা, কফি, পুডিং এর স্বাদ বাড়াতে ঘন দুধ ব্যবহার করা হয়।
- ঘন দুধে ভিটামিন-এ থাকায় আমাদের ত্বক ভালো রাখতে এবং উজ্জ্বলতা বাড়াতে সহায়ক হিসেবে ধরা হয়।
দুধ খাওয়ার পদ্ধতি
দুধ যেভাবে ইচ্ছা খাওয়া যেতে পারে। দুধ খাওয়ার নিদিষ্ট কোন পদ্ধতি নেই। দুধের গুনোমান বজায় রেখে আপনার পছন্দমত যেকোন উপায়ে খেতে পারেন। তবু আপনাদের সুবিধার্থে নিম্নে কিছু পদ্ধতি দেয়া হলো-- গ্লাস ব্যবহার করে, দুধ গরম হোক বা ঠান্ডা আপনি খেতে পারেন। যেটি আমাদের সকলের জানা প্রচলিত উপায়।
- চা অথবা কফিতে দুধ মিশিয়ে খেতে পারেন।
- দুধে বানানো স্মুদিতে বিভিন্ন ফল বা বাদাম মিশিয়ে খেতে পারেন।
- দুধে তৈরি অন্যান্য রান্নার রেসিপিতে ব্যবহার করতে পারেন। যেমন- সেমাই, পুডিং, ডেজার্ট ইত্যাদি।
- ত্বক ভালো রাখতে দুধ দিয়ে ফেস মাস্ক তৈরি করে ব্যবহার করা যেতে পারে।
- দুধের সাথে চকলেট মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
- দুধের তৈরি দই বা ছানা তৈরি, যা প্রোবায়োটিক হিসেবে কাজ করে।
- দুধ দিয়ে বানানো মাখন, অন্যান্য খাবারের স্বাদ বাড়িয়ে দেয়।
- কমপ্লেন বা হরলিক্স এর সাথে মিশে খাওয়া যেতে পারে।
লেখকের মন্তব্য: রাতে ঘুমানোর আগে গরম দুধ খাওয়ার উপকারিতা
প্রিয় পাঠক, আশা করছি রাতে ঘুমানোর আগে গরম দুধ খাওয়ার উপকারিতা সহ দুধ খাওয়ার উপকারিতা সম্পকে জানতে পেরেছেন। গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন দুধ খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে নিদিষ্ট পরিমান ও সময়ে খাওয়া উচিত। গর্ভাবস্থায় প্যাকেটজাত দুধ পরিহার করুন।
এতক্ষণ আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। এরকম তথ্যবহুল বা আপনার উপকারে আসে এমন আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন এবং কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত দিন। নিজে ভাল থাকুন, অন্যকে ভালো রাখুন। পৃথিবী হোক সুন্দরময়।
অ্যামপ্লি ইনফোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url