সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতা - পাকা কলা খাওয়ার নিয়ম

প্রিয় পাঠক, সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতা ও পাকা কলা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে অবগত নন বলেই এই আর্টিকেলটিতে ক্লিক করেছে। আশা করছি কলা খাওয়ার যাবতীয় সকল বিষয়ে আপনার যত কনফিউশন বা সন্দেহের বিষয় রয়েছে সব দূর হবে ইনশাল্লাহ। কাজেই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। যেখানে জানতে পারবেন কলা খাওয়ার উপকারিতা এবং পাকা কলা খাওয়ার নিয়ম।
সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতা
আরও জানতে পারবেন কাঁঠালি কলা খাওয়ার উপকারিতা, দিনে কয়টি কলা খাওয়া উচিত এবং কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।

ভূমিকা

কলার জন্মভূমি ভারতবর্ষ ও চীনে এই মন্তব্য করেন উদ্ভিত বিজ্ঞানী মালান। অর্থাৎ এশিয়া মহাদেশের উষ্ণ আবহাওয়া কলা চাষের জন্য বেশ উপযোগী। আমাদের বাংলাদেশ যেহেতু নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল এবং দক্ষিণ এশিয়ার একটি দেশ তাই সাড়া বছর জুড়ে কলা চাষ হয়।
বাংলাদেশের উত্তরের অঞ্চল যেমন গাইবান্ধা, রংপুর, জয়পুরহাট,বগুড়া এমনকি ময়মনসিংহ, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, যশোর, বরিশাল, কুষ্টিয়া ইত্যাদি অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে কলা চাষ হয়ে থাকে। ফলে সারা বছরই সুলভ মূল্যে পাওয়া যায়।

সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতা

প্রিয় পাঠক, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ছোট বড় সব বয়সের মানুষের কলা খাওয়া শরীরের জন্য অনেক উপকারী। দেহে শক্তি যোগাতে সাহায্য করে। কলা তে প্রচুর পরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম ও পটাসিয়াম এর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। একদম সকালে শূন্য পেট এ কলা খেলে এই সব উপাদান শরীরে প্রবেশ করে রক্তে অবস্থিত অন্যান্য উপাদান এর ভারসাম্য নষ্ট করে।
যাদের হজম সংক্রন্ত বা গ্যাসের সমস্যা রয়েছে তারা সকালে খালি পেট এ কলা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কারন কলায় 'রেজিসট্যান্ট স্টার্চ’ বা প্রতিরোধী শ্বেতসার থাকে, যা অনেকটা আঁশের মতো। খালি পেটে আঁশ জাতীয় খাদ্য সম্পূর্ণ হজম হয়না আংশিক পরিমাণ হজম হতে পারে। যার কারনে এসিডিটির মত সমস্যা হতে পারে।

পাকা কলা খাওয়ার নিয়ম

পুষ্টির ঘাটতি মিটাতে কলার বিকল্প নেই। অনেকেই কলা খেতে চান না, আসুন জেনে নেই পাকা কলা কি কি উপায়ে খেলে পুষ্টি এবং টেস্টি হবে।

কলার স্মুদিঃ একটি পাকা কলা, ওটস, দুধ এবং কিছু কাজু বাদাম একত্রে ব্লেন্ড করে সেবন করলে ওজন কমাতে সাহায্য করে। প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন ও কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ একটি খাবার।

পাকা কলার পিঠাঃ পাকা কলা ও সুজি শুধু মাত্র এই দুটি উপকরণ দিয়ে কলার পিঠা তৈরি করা যায়। খুব সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর মুচমুচে এই পিঠাটি শীতকালসহ সারা বছর খাওয়া যেতে পারে।
কলার প্যানকেকঃ একটি পাকা কলা ম্যাস করে ময়দা, বাদাম, এবং দারুচিনি গুঁড়া সহ প্যানকেক ব্যাটার তৈরি করে সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর নাস্তা তৈরি করা যেতে পারে।

কলা রুটিঃ পাকা কলা ব্যাবহার করে সব থেকে হেলদি রেসিপি কলার রুটি। ম্যাশ করা কলা, ময়দা এবং মাখন যোগ করে রুটির বাটার তৈরি করা হয় যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই পুষ্টিকর।

কাঁঠালি কলা খাওয়ার উপকারিতা

কাঁঠালি কলা কে আইটা কলা নামে চিনে থাকে বাংলাদেশ এর গ্রাম বাংলার অনেক মানুষ। 'সর্ব ঘটে কাঁঠালি কলা' এটি একটি বাংলা প্রবাদ বাক্য। এই প্রবাদ বাক্য থেকে বোঝা যায় কত টা গুরুত্বপূর্ণ ফল কাঁঠালি কলা।
  • শরীরের ব্যথা, মাথা ব্যথা বাতজনিত সমস্যা, দূর হয় কাঁঠালি কলা নিয়মিত খেলে।
  • রক্তশূন্যতা দূর করতে ও কাঁঠালি কলা বেশ কার্যকর।
  • মানসিক চাপ কমাতে কাঁঠালি কলা খেলে উপকার পাওয়া যায়।
  • কাঁঠালি কলা কার্বোহাইড্রেট ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় পাকস্থলিতে হজম কার্যকরীতা স্বাভাবিক রাখে।
  • নিদ্রাহীনতা দূর করতে রাতে একটি কলা খেয়ে ঘুমাতে পারেন। কাঁঠালি কলা নিদ্রাহীনতা দূর করে।
  • শরীরে অ্যালার্জি সমস্যা দূর হবে যদি নিয়মিত অন্তত একটি কাঁঠালি কলা খান।
  • ডায়বেটিকস নিয়ন্ত্রন রাখতেও এই কাঁঠালি কলা বেশ উপকারী।

দিনে কয়টি কলা খাওয়া উচিত

স্বাস্থ্য গুনে ভরপুর হওয়া সত্বেও কলা অনেক বেশি খাওয়া ঠিক নয়। যাঁদের এসিডিটি সমস্যা রয়েছে তাদের কলা খাওয়া উচিত নয়। প্রতিদিন এক থেকে দুইটি কলা খাওয়া শরীরের জন্য ভালো। শিশুদের ক্ষেত্রে দিনে একটি কলা খাওয়ায় যথেষ্ট।
পাকা কলা খাওয়ার নিয়ম
কলায় রয়েছে অধিক পরিমাণের ফ্রূকটোজ গ্লুকোজ থাকে সুতরাং যারা ডায়াবেটিক্স রোগী রয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে অর্ধেক কলা অথবা না খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে ।

যারা ওজন বাড়াতে চান তারা দিনে দু থেকে তিনটি কলা খেতে পারেন কিন্তু যারা ওজন কমাতে চান তারা একটি কলার অর্ধেক অথবা একটি গোটা কলা খেতে পারেন।

কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

কলা এমন একটি ফল যা কাঁচা ও পাকা দুই ভাবেই খাওয়া যায়। কাঁচা কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন যা শরীরে ইমিউন সিস্টেম, পেশী শক্তি এবং লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনে সহায়তা করে। এছাড়াও মস্তিষ্কের বিকাশ এবং শরীরকে অধিক কর্মক্ষম করার কাজে কাঁচা কলা বেশ উপকারী।

ডায়রিয়া বা পেটের সমস্যা জনিত রোগের ওষুধ হিসাবে চিকিৎসকরা কাঁচা কলার ভর্তা, পাতলা ঝোল বা কাঁচা কলা ভাজি খাওয়ার পরামর্শ দেন। কাঁচা কলাই রয়েছে এক বিশেষ এনজাইম যা পেটের ইনফেকশন ছাড়াতে বেশ কার্যকরী।

তবে প্রয়োজনের থেকে অধিক পরিমাণের কাঁচা কলা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য বা হজম শক্তি কমে যায় তাই পরিমিত কাঁচা কলা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন কাঁচা কলা খেলে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক থাকে।

পাকা কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম এবং ক্যালসিয়াম যার হৃদ রোগের ঝুঁকি কমায় তবে পেটে পাকা কলা খেলে এর হিতে বিপরীত বা অসুবিধা হতে পারে। রক্তচাপ কমায়। ত্বকের যত্নে কলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এমনকি চলেও ব্যবহার করা যায় কলা চুল ঝলমলে সিল্কি করতে অনেকেই কলা ম্যাশ করে চুলে দিয়ে থাকে।

ফাইবারে ভরপুর এই ফলটি হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে সকাল ৮টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত কলা খাওয়ার ভালো সময় এই সময় কলা খেলে সারাদিন শরীর ও মন চাঙ্গা থাকে। কলা খাওয়ার ১ ঘন্টার মধ্যে পানি খাওয়া যাবে না। কারণ কলা একটি ভারী খাবার এটি হজম হতে সময় লাগে।

রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা

রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা প্রচুর পরিমানে রয়েছে। কলা একটি স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিসমৃদ্ধ ফল। রাতে কলা খেলে কি কি উপকারিতা পাওয়া যায় তা নিম্নরুপ:

ঘুম ভালো হয়: কলাতে রয়েছে ট্রাইপ্টোফান নামক উপাদান যা রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে, পেশী শিথিল রাখে ফলে ঘুম ভালো হয়। কলাতে আরো রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম। এটি শরীরে মেলানিন নামক হরমোন তৈরীতে সহায়তা করে, যা ঘুম নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।

হজমশক্তি বৃদ্ধি: কলাতে প্রচুর পরিমানে ফাইবার রয়েছে, যা হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।

প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগায়: মানুষ স্বাভাবিক ভাবে বাঁচতে স্বাস্থ্যকর পুষ্টির প্রয়োজন আর কলাতে প্রয়োজনীয় সকল স্বাস্থ্যকর পুষ্টি পাওয়া যায়। যেমন- ভিটামিন সি, পটাসিয়াম, ফোলেট, প্রোটিন ও ফাইবার ।

ক্ষুধা মেটায়: কলা একটি ভারসাম্যপূর্ণ খাবার যা আমাদের দীর্ঘক্ষন শক্তি যোগায়। রাতের বেলায় অতিরিক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে বা ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে বা ক্ষুধা মেটাতে কলা একটি বিকল্প পুষ্টি সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যকর খাবার।

শক্তি সঞ্জয়: কলা খাওয়ার পর শরীরে তৎক্ষণাৎ শক্তি সঞ্চয় হয় এটি আমাদের সকলেরই জানা। কলাতে পাওয়া যায় শর্করা ও ফাইবার, যা দ্রুত শক্তি প্রদান করে এবং দীর্ঘ সময় ধরে ক্লান্তি দূর করে আপনাকে রাখে প্রাণবন্ত।

নিয়মিত কলা খাওয়ার উপকারিতা

নিয়মিত কলা খাওয়ার আমরা শারীরিক ভাবে যেমন সুস্থ থাকতে পারি ঠিক তেমনি মানসিকভাবে। নিয়মিত কলা খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নে কিছু উপকারিতা আলোচনা করা হলো:
নিয়মিত কলা খাওয়ার উপকারিতা
কলা একটি পুষ্টি সমৃদ্ধ ফল যাতে ভিটামিন, খনিজ, প্রোটিনসহ আরো অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাওয়া যায়। এই উপাদানগুলি শরীরের যথাযথভাবে কাজ করে এবং আমাদের শরীরে শক্তি প্রদান করে।

কলাতে বিদ্যমান রয়েছে পটাশিয়াম ও ফাইবার যার কারণে কোলেরেস্ট্রল ও ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণে থাকে ফলে আমাদের হার্ড ভালো থাকে।

কলাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও অন্যাণ্য পুষ্টি পাওয়া যায় যার ফলে আমাদের ত্বক ভালো থাকে এবং ত্বক হয় উজ্জ্বল ও মসৃণ।

নিয়মিত কলা খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে রোগ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, আর হয় শক্তিশালী পাশাপাশি দৃষ্টিশক্তি ও বৃদ্ধি পায়।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত কলা খাওয়ার ফলে কিডনি ক্যান্সার এবং কোলন ক্যান্সারে ঝুঁকি থেকে আমরা পরিত্রাণ পেতে পারি।

ভরা পেটে কলা খেলে কি হয়

সাধারণত ভরা পেটে কলা খেলে তেমন কোন অসুবিধা হয় না তবে কিছু মানুষের ভরার পেটে কলা খেলে হজম প্রক্রিয়ায় অসুবিধা হয়ে থাকে। যদিও কলা একটি স্বাস্থ্যকর উপস্থিত সমৃদ্ধ খাবার, কিন্তু কলায় থাকা ফাইবার ও ফসফরাসের মাত্রা বেশি হওয়ায়, সেক্ষেত্রে পেটে গ্যাস, পেট ফোলা ফোলা ভাব, হজম প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি বা পেটে অন্যান্য অসুবিধা অনুভব হতে পারে।

তবে ভরা পেটে কলা খাওয়ার কিছু উপকারিতা ও রয়েছে:

কলাতে পটাশিয়াম রয়েছে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। ভরা পেটে কলা খেলে পটাশিয়াম আরো ভালোভাবে শোষিত হয় এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।

অতিরিক্ত খাদ্য এড়িয়ে চলতে ধরা পেটে কলা খাওয়া যেতে পারে। কলাতে রয়েছে শর্করা এবং ফাইবার যা আপনাকে খিদে অনুভব থেকে দূরে রাখবে আজ যখন ক্ষুধা অনুভব হবে না তখন আপনি অতিরিক্ত খাদ্য পরিহার করতে পারবেন।

লেখকের মন্তব্য: সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতা - পাকা কলা খাওয়ার নিয়ম

প্রিয় পাঠক, আশা করছি সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতা ও পাকা কলা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন। কলা একটি স্বাস্থ্যসম্মত খাবার। এটি খেলে তৎক্ষণাৎ আমাদের শরীরে শক্তি সঞ্চয় হয়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বা সময়ে কলা খেলে অসুবিধা হতে পারে। সেজন্য উপরে উল্লেখিত তথ্য অনুযায়ী কলা খাওয়া বা গ্রহণ করা উচিত।

এতক্ষণ আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। এরকম তথ্যবহুল বা আপনার উপকারে আসে এমন আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন এবং কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত দিন। নিজে ভালো থাকুন, অন্যকে ভালো রাখুন। পৃথিবী হোক সুন্দরময়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অ্যামপ্লি ইনফোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url