ওজন কমাতে মধু খাওয়ার নিয়ম - রাতে মধু খাওয়ার নিয়ম
প্রিয় পাঠক ওজন কমাতে মধু খাওয়ার নিয়ম ও রাতে মধু খাওয়ার নিয়ম নিয়ে আমরা দ্বিধায় ভুগি। এই ছোট ছোট বিষয়গুলো না জানার কারণে মধু খেয়ে আমাদের উপকার হওয়ার থেকে ক্ষতি হয়ে থাকে। কাজেই পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সময় নিয়ে পড়ুন জানতে পারবেন ইসলামে মধু খাওয়ার নিয়ম, ছেলেদের মধু খাওয়ার উপকারিতা।
যেখানে আরো জানতে পারবেন- সকালে খালি পেটে মধু খাওয়ার নিয়ম, মধু ও কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সহ আরো বিস্তারিত আলোচনা।
ভূমিকা
হাজারো মৌমাছির দিন রাত পরিশ্রমের ফসল হলো মধু। মধু হলো একটি প্রাকৃতিক খাবার। যা ছোট বড় সব বয়সের মানুষ থেকে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। মধু প্রাচীনকাল থেকে খাদ্য ও ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মধুতে ভিটামিন, খনিজ সহ আরো অনেক প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান রয়েছে। মানব দেহের জন্য মধু অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি খাবার যা ঠান্ডা কাশি দূর করতে, ক্ষতস্থান এবং ব্যথা নিরাময় করতে ঔষধের মতো কাজ করে করে।
ওজন কমাতে মধু খাওয়ার নিয়ম
মধুতে চর্বির পরিমান নেই বললেই চলে। মধু আমাদের পেট পরিষ্কার করে, চর্বি কমায়, ফলে আমাদের ওজন কমাতে ভূমিকা রাখে। হালকা কুসুম গরম পানি ও লেবুর সাথে মধু মিশিয়ে খেলে ওজন কমে। চা বা কফি তে চিনির পরিবর্তে মধু মিশিয়ে খেলে শরীরের জন্য উপকার হয়।
আরো পড়ুনঃ তুলসী পাতার উপকারিতা
সাধারণত মধু চিনির চেয়ে বেশি মিষ্টি হয়ে থাকে, তাই এটি কম পরিমানে খাওয়া যায় দীর্ঘ সময় পযর্ন্ত শরীরকে ক্লান্তিহীন রাখে ফলে অতিরিক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা যায়।
রাতে মধু খাওয়ার নিয়ম
মধু অনিদ্রার ভাল ওষুধ। রাতে মধু খেলে প্রচুর ঘুম হয়। ম্যাগনেসিয়াম নামক পদার্থ মধুতে বিদ্যমান থাকায় পর্যাপ্ত ঘুম হয়। যারা ওজন অথবা মেদ কমাতে চান তারা নিয়মিত ঘুমানোর আগে মধু সেবন করতে পারেন।
রাতে ঘুমানোর আগে ১ গ্লাস হালকা কুসুম গরম পানির সাথে ১ চামচ মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে ঘুম ভালো হবে। এই পানীয় টি রাতের খাবার খাওয়ার পর মিনিমাম চার থেকে পাঁচ ঘন্টা পর পান করা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
আরো পড়ুনঃ ভরা পেটে আপেল খেলে কি হয়
ওজন কমাতে রাতে ঘুমানোর আগে লেবু, কুসুম গরম পানি, চিয়া সিড এবং এক চামচ মধু যোগ করে খেলে শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরে পড়বে। কারন লেবু তে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি থাকে এবং চিয়া সিড জিঙ্ক, কপার সমৃদ্ধ এবং মধু তে রয়েছে এমাইনো এসিড এসব উপাদান মিলিত হয়ে শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সাহায্য করে।
ওজন বাড়াতে রাতে ঘুমানোর আগে দুধ, বাদাম (কাজু, কাঠ, পেস্তা), কাঁচা হলুদ সাথে ১ চামচ মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। অনেক প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, এমিনো এসিড, ভিটামিন সমৃদ্ধ এই মিশ্রণ টি ওজন বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে থাকে।
ইসলামে মধু খাওয়ার নিয়ম
প্রিয় পাঠক, আপনি কি জানেন মধু খাওয়া সুন্নত? আমাদের প্রিয় মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রিয় পানীয় ছিল মধু। তাই মধু পান করা সুন্নত এই সুন্নত পালন করার একটি নিয়ম আছে। ইসলামী তরিকায় মধু সেবনে সুন্নত আদায় এর সাথে সাথে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
সকালে ঘুম থেকে উঠে সম্পূর্ণ খালি পেটে, হাতের তালুতে এক চামচ পরিমাণের খাঁটি মধু নিতে হবে। জিহ্বা দ্বারা হাতের তালুতে স্পর্শ করে চেটে চেটে মধু খেতে হবে। মধু এবং জিহ্বার লালা মিশ্রিত হয়ে শরীরে প্রবেশ করলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং এভাবেই মধু সেবন করা সুন্নত। এভাবে মধু খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে স্বয়ং মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম হাদীস শরীফে এ কথা উল্লেখ করেছেন
আমাদের সৃষ্টিকর্তা জান্নাতের কিছু খাবার পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন তার মধ্যে মধু একটি। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন যে ঘরে মধু আছে অবশ্যই সে ঘরের অধিবাসীদের জন্য ফেরেশতারা মাগফেরাত কামনা করেন।
ছেলেদের মধু খাওয়ার উপকারিতা
টেস্টোস্টেরন নামক যৌন হরমোন ক্ষরণ ও বৃদ্ধিতে মধুর বিশেষ ক্ষমতা আছে। মধু তে রয়েছে জিঙ্ক ও ভিটামিন - ই এই উপাদান সমুহ সেক্স স্টিমুল্যান্ট হিসাবে কাজ করে। প্রতিদিন মধু সেবন করার ফলে ছেলেদের শুক্রাণুর পরিমাণ ও গুন গত মান বৃদ্ধি করে।
ছেলেরা নিয়মিত ব্যায়াম করে থাকেন তাদের জন্য মধু আশীর্বাদ স্বরূপ। পেশী শক্তি বৃদ্ধি করে মধু। ব্যায়াম করার ফলে শরীরের পেশীতে ব্যাথা অনুভূত হয়। এই ব্যাথা নিরাময়ে কোন ওষুধ খাওয়া যায় না এই সময় কুসুম গরম পানি তে মধু মিশিয়ে খেলে ব্যাথা দূর হয় এবং পেশী শক্ত ও মজবুত হয়।
আরো পড়ুনঃ ওজন কমাতে লেবু পানি খাওয়ার নিয়ম
যে সব ছেলেদের যৌন জীবনে সুখী নয় তারা নিয়মিত মধু সেবন করলে সমস্যা সমাধান হবে। কারন মধু খেলে শরীরের তাপশক্তির থেকে অতিরিক্ত তাপশক্তি পাওয়া যায়। এর মাধ্যমে শরীর গরম থাকে। টেস্টোস্টেরন ক্ষমতা বুস্ট করে।
সকালে খালি পেটে মধু খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
প্রাকৃতিক ভাবে প্রাপ্ত এই মহৌষধিতে উপস্থিত রয়েছে ৪৫ টি খাদ্য উপাদান। সকালে খালি পেটে এক সাথে ৪৫ টি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সেবন করলে শরীরে কি পরিবর্তন হতে পারে ভাবতে পারেন? সঠিক ভাবে সেবন করলে মধুর গুণাবলী শরীরে অনেক উপকার হয়।
- সকাল বেলা খালি পেটে একটি ডিটক্স পানীয় সেবন করা খুবই উপকারী । এই ডিটক্স তৈরি করতে লেবু এবং মধু হালকা গরম পানির সঙ্গে মেশানো হয়, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে মধু সেবন করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। ১-২ চামচ মধু মধু খেলে পেট বেথা, বদহজম দূর হয়। এমনকি মধুর সাথে কালোজিরা ফুলের মধু মিশিয়ে খেলে সর্দি-কাশি থেকেও অনেক আরাম পাওয়া যায়।
- ভোরবেলা খালি পেটে এক চামচ মধু খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কাটে। ব্লাড প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে থাকবে
- একটি কাচের জারে মধু এবং রসুন মিশিয়ে রেখে দীর্ঘদিন ধরে খাওয়া যায়। সকাল এ খালি পেটে মধু মিশ্রিত রসুন খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। মধুতে ‘অ্যালিসিন‘ নামক উপাদান বিদ্যমান যা শরীরের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে । রক্ত জমাটে সাহায্য করে।
- ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা বা পেটের যেকোনো সমস্যা সমাধানে বিশেষভাবে কাজ করে রসুন এবং মধুর মিশ্রণ। রসুনে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে যা সব ধরনের ইনফেকশন দূর করতে পারে। নিয়মিত নিয়মে মধু ও রসুন খেলে শরীরের বিভিন্ন স্থানের ফাঙ্গাল ইনফেকশন দূর হয়। তাই আপনি নিশ্চিন্তে খালি পেটে রসুন ও মধু খেতে পারেন।
মধু ও কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
সর্বরোগের প্রাকৃতিক মহৌষধ কালোজিরা এবং আয়ুর্বেদ গুন সমৃদ্ধ মধু এক সাথে মিশিয়ে খেতে হবে। এতে রয়েছে জাদুকরী নিরাময় ক্ষমতা। কালোজিরায় রয়েছে এন্টি অক্সিডেন্ট এবং মধুতে রয়েছে
অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও এন্টি-ফাঙ্গাল উপাদান যা ত্বক সজীব রাখে এবং ব্রণ মুক্ত রেখে। অ্যান্টিসেপটিক হিসাবে কাজ করে।
আরো পড়ুনঃ কালোজিরা খাওয়ার ইসলামিক নিয়ম
একটি কাচের পাত্রে মধু এবং কালোজিরার সমান অংশ মিশিয়ে ভাল করে নাড়ুন। তারপরে আপনি প্রতিদিন একটি ছোট চামচ মিশ্রণটি একা বা এক গ্লাস গরম জলের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
সকালে কালোজিরার সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। কালোজিরা আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। নিয়মিত পেট খারাপের সমস্যা থাকলে কালোজিরা সামান্য ভেজে গুঁড়ো করে ৫০০ মিলিগ্রাম হারে ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে সকালে ও বিকেলে সাত দিন ধরে খেলে উল্লেখযোগ্য ফল পাওয়া যায়।
মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
মধু একটি ঘন তরল পদার্থ, প্রাকৃতিক ভাবে প্রাপ্ত মধু সাধারনত মৌমাছি বিভিন্ন ফুল এর পরাগ রেণু থেকে সংগ্রহ করে এগুলো এক পর্যায়ে মধু তে রুপান্তর হয়। ঔষধি গুণাবলী বিদ্যমান থাকায় আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা শাস্ত্রে মধু ব্যাবহার করা যায়। মধুর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেই।
- হাঁপানি রোগীদের জন্য মধু একটি প্রাকৃতিক ঔষধ। গোলমরিচের সঙ্গে সমপরিমাণ মধু এবং আদা মেশান। দিনে অন্তত তিনবার এই মিশ্রণ খান। এটা হাঁপানি রোধে সহায়তা করে।
- হার্ট এর রোগীরা মধু সেবন করতে পারেন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে মধু আক জাদুকরী পানীয়। এক চামচ মৌরি গুঁড়োর সঙ্গে এক চামচ মধু নিয়ে খেলে এই মিশ্রণ হৃদ্রোগের টনিক হিসেবে কাজ করে। এটা হৃৎপেশিকে সবল করে এবং এর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- হাড়, দাঁত, চুল, ও নখ গঠনে মধু অনেক ভুমিকা রাখে মধুর গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়াম দাঁত, হাড়, নখ, চুলের গোড়া শক্ত রাখে, নখের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি করে, ভঙ্গুরতা রোধ করে।
- যৌন দুর্বলতা দূরী করতে মধুর ভূমিকা অপরিসীম। যেসকল পুরুষের যৌন দূর্বলতা রয়েছে তারা প্রতিনিয়ত মধু ও ছোলা মিশিয়ে খান। নিয়মিত এটা খেতে থাকলে কয়েকদিনের মধ্যেই এর উপকার বুঝতে পারবেন। পুরুষ ও মহিলা উভয়েরই যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সক্ষম মধু।
- মধুর মতো মিষ্টি গলার কন্ঠ পেতে মধুর ভূমিকা অতুলনীয়। আপনি যদি প্রতিনিয়ত মধু সেবন করেন তাহলে আপনার গলার স্বর সুন্দর এবং মধুর হয়ে ওঠে।
- গর্ভবতী মায়েদের অনেক বেশি ক্যালোরি দরকার, বাচ্চাদের অনেক ইনস্ট্যান্ট অ্যানার্জি দরকার হয়, তাঁদের জন্য মধুর জুড়ি নেই।
প্রিয় পাঠক, মধু অনেক উপকারী হওয়া সত্ত্বেও কিছু অপকারিতাও রয়েছে আসুন জেনে নেই মধু খেলে কি সমস্যা হতে পারে। এবং সতর্ক হই।
রক্তে শর্করার মাত্রাও বাড়িয়ে দিতে পারে এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি থাকে। ডায়াবেটিস রোগীরা ডাক্তার এর পরামর্শে মধু সেবন করুন। নিয়মিত ১-২ চামচ মধু খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। বাচ্চাদের বেশি মধু খাওয়া উচিত নয়।
লেখকের মন্তব্য: ওজন কমাতে মধু খাওয়ার নিয়ম - রাতে মধু খাওয়ার নিয়ম
প্রিয় পাঠক, সম্পূর্ন আর্টিকেল জুড়ে আমি ওজন কমাতে মধু খাওয়ার নিয়ম ও রাতে মধু খাওয়ার নিয়ম সহ মধু বিষয়ে সমস্ত কিছু বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি উপরের উল্লেখিত নিয়ম গুলো মেনে মধু খেলে উপযুক্ত ফলাফল পাবেন। তবে অতিরিক্ত মধু খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। কাজেই নিয়মিত পরিমাণ মতো মধু গ্রহণ করুন।
এতক্ষণ আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। এরকম তথ্যবহুল বা আপনার উপকারে আসে এমন আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন এবং কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত দিন। নিজে ভাল থাকুন, অন্যকে ভালো রাখুন। পৃথিবী হোক সুন্দরময়।
অ্যামপ্লি ইনফোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url