গর্ভাবস্থায় নাশপাতি খাওয়ার উপকারিতা - নাশপাতি খাওয়ার নিয়ম

প্রিয় পাঠক, গর্ভাবস্থায় নাশপাতি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন, আরো জানতে চেয়েছেন নাশপাতি খাওয়ার নিয়ম ও এর দাম সম্পর্কে। আমি আপনাদের জানাবো গর্ভাবস্থায় নাশপাতি খাওয়ার উপকারিতা কি? নাশপাতি খাওয়ার নিয়ম এবং বর্তমান বাজারে নাশপাতি ফলের দাম কেমন সে বিষয়ে।
নাশপাতি খাওয়ার নিয়ম
সময় দিয়ে সাথে থাকুন গর্ভাবস্থায় নাশপাতি খাওয়ার উপকারিতা সহ নাশপাতির সকল অজানা তথ্য জানতে পারবেন।

ভূমিকা

নাশপাতি হল পুম জাতীয় উদ্ভিদের (Rosaceae) গাছের একটি ফল। এটি বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়, এবং বিভিন্ন আকার, রঙ এবং স্বাদের হয়ে থাকে। নাশপাতি কাঁচা বা রান্না করে খাওয়া যায় এবং এটি বিভিন্ন খাবার এবং পরিবেশনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। নাশপাতির পুষ্টিগুনের কারনে প্রায় সব বয়সের মানুষ খেতে পছন্দ করে।
নাশপাতির উৎপত্তি হয় ইউরোপ ও মধ্য এশিয়াতে। বহুবছর আগে থেকেই এটির চাষ হয়ে আসছে। বর্তমান বিশ্বে সব চেয়ে বেশি নাশপাতি উৎপাদনকারী দেশ চীন। নাশপাতির গাছ সাধারণত সামুদ্রিক অঞ্চলে বেশি পাওয়া যায়।

গর্ভাবস্থায় নাশপাতি খাওয়ার উপকারিতা

নাশপাতি একটি পুষ্টি সমৃদ্ধ ফল। গর্ভাবস্থায় কোন মা নাশপাতি খেলে এটি মা ও শিশুর উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং শিশুর স্বাস্থ্য উন্নতিতে সাহায্য করে। নাশপাতিতে রয়েছে প্রয়োজনীয় পটাশিয়াম, ভিটামিন, ফলেট ও এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান, যা মা ও শিশুর দরকারি পুষ্টি নিশ্চিত করে। নিম্নে গর্ভাবস্থায় নাশপাতি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
গর্ভাবস্থায় নাশপাতি খাওয়ার উপকারিতা
  • শিশু গর্ভ অবস্থায় থাকায় শিশুর কোষ ও টিস্যু গঠনে নাশপাতি অনেক দরকারে একটি খাবার। কারণ নাশপাতিতে রয়েছে ভিটামিন সি, যা প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং কোন রোগের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে পাশাপাশি শিশুর কোষ ও টিস্যু গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়ের নাশপাতি খাওয়া উচিত। কারণ নাশপাতিতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম শিশুর হাড় বিকাশে সাহায্য করে এবং গর্ভবতী মায়ের দাঁত ও হাড় ভালো রাখে।
  • পানি শূন্যতা রোধে গর্ভবতী মা নাশপাতি খেতে পারেন। কারণ নাশপাতিতে রয়েছে প্রায় ৮৪ ভাগ পানি। যা গর্ভবতী মায়ের শরীরকে হাইড্রেট রাখে এবং পানি শূন্যতা রোধে কাজ করে।
  • শিশু গর্ভাবস্থায় থাকায় এক ধরনের ক্ষতিকর ফ্রি রেডিক্যালস শিশু বিকাশে কোষগুলোতে আক্রমণ করে। প্রতিনিয়ত নাশপাতি খেলে নাশপাতিতে থাকা অ্যান্টি এক্সিডেন্ট শরীরের ক্ষতিকর ফ্রি রেডিক্যালস দূর করে।
  • গর্ভবতী মায়ের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে নাশপাতি একটি প্রয়োজনীয় খাবার। যা নিয়মিত খাওয়ার ফলে নাশপাতিতে থাকা পটাশিয়াম, মা ও শিশুর হার্ট ভালো রাখে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।

নাশপাতি খাওয়ার নিয়ম

সুস্বাস্থ্য রক্ষার্থে নাশপাতি একটি দরকারি খাবার। যা আমাদের নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত। কিন্তু নাশপাতি খাওয়ার কিছু নিয়ম বা পদ্ধতি রয়েছে। যেগুলো মেনে নাশপাতি খেলে অনেক বেশি উপকারিতা পাওয়া যায়। এই নিয়মগুলো অনুসরণ না করে নাশপাতি খেলে আপনার কিছুটা অস্বস্তি বা ক্ষতি হতে পারে। নিম্নে নাশপাতি খাওয়ার নিয়ম বলা হলো-
  • নাশপাতি কেনার আগে তা পাকা কিনা তা ‍দেখুন। কাঁচা নাশপাতি খেতে কষ্টা লাগে যা প্রায় স্বাদহীন।
  • কেনার সময় নাশপাতি হালকা নরম ও সুগন্ধযুক্ত কিনা তা দেখে কিনুন। পাকা নাশপাতি হলুদ ও লাল রঙ্গের হয়ে থাকে।
  • নাশপাতি খাওয়ার আগে ভালোভাবে ধোয়া উচিত। করন নাশপাতিতে রাসায়নিক পর্দাথ ও ধূলাবালি বা জীবানু থাকতে পারে। সেজন্য নাশপাতি খাওয়ার আগে অবশ্যই ধোয়া উচিত যদি খোসাসহ খেতে চান।
  • নাশপাতি খোসাসহ বা খোসা ছাড়া খেতে পারেন। তবে খোসা ছাড়িয়ে খাওয়া সবচেয়ে ভালো কারন নাশপাতির খোসাতে রয়েছে ফাইবার। যা আমাদের অ্যার্লাজির কারন হতে পারে।
  • প্রতিদিন ১ থেকে ২ টি নাশপাতি না খাওয়াই ভালো। কারন অতিরিক্ত নাশপাতি খাওয়ার ফলে আমাদের ওজন বাড়ার সাথে সাথে বদহজম সহ ডাইরিয়া পর্যন্ত হতে পারে।
  • নাশপাতি এমন একধরনের খাবার যা সব ধরনের খাবারের সাথে খাওয়া যায়। সালাত, দই, ওটমিল সহ স্মুদিতে ও খাওয়া যায় এবং এর পুষ্টিগুন আরো বাড়িয়ে তোলে।
  • নাশপাতির বীজ এবং ভিতরের অংশটুকু বাদ দিয়ে সম্পর্ন অংশই খাওয়া যায়। এটি আপেলে মত করে কেটে অথবা অস্ত খেতে পারেন।

নাশপাতি ফল এর উপকারিতা

নাশপাতি একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর ফল যা সারা বছর পাওয়া যায়। এটি ভিটামিন, খনিজ, এবং ফাইবার অনেক পরিমানে পাওয়া যায়, যা সব বয়সের মানুষ ও গর্ভবতী মহিলাদের জন্য স্বাস্থ্যকর একটি খাবার। নিম্নে নাশপাতি ফল এর উপকারিতা আলোচনা করা হলো-

নাশপাতিতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি-৬ এবং ভিটামিন কে। ভিটামিন সি আমাদের শরীরের রোগ প্র্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ভিটামিন বি-৬ আমাদের রক্ত শূন্যতা দূর করে, লোহিত রক্তকণিকা বৃদ্ধি করে। যার কারনে আমাদের অ্যামনিয়া হয় না। ভিটামিন কে আমদের শরীরের হাড়কে শক্ত করে।
পেশির কার্যকারতা বৃদ্ধিতে ও উচ্চ রক্তচাপ রোধে নাশপাতির বিকল্প নেই। নাশপাতিতে থাকা পটাশিয়াম আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করে। ম্যাগনেশিয়াম পেশির কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে এবং ফলেট অ্যাসিড আমাদের কোষ গঠনে সাহায্য করে এবং গর্ভবতী মায়েদের জন্য বেশ উপকারি হয়ে থাকে।

নাশপাতিতে বিদ্যমান রয়েছে ফাইবার। এটি হজম প্রক্রিয়ায় দ্রুত কাজ করে এবং আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং পেটে থাকা গ্যাস্টিকের সমস্যা দূর করে। নাশপাতি খাওয়ার ফলে আমাদের ওজন না বেড়ে স্বাভাবিক থাকে। যাদের ওজন অনেক বেশি তারা ডায়েট খাদ্য তালিকায় নাশপাতি রাখতে পারেন।

আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এবং ত্বক টানটান রাখতে নাশপাতি খাওয়া যেতে পারে। কারন নাশপাতিতে ভিটামিন সি রয়েছে, যা কোলাজেন তৈরীতে সাহায্য করে। ফলে আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়, ত্বক কুচকে যাওয়া থেকে বাঁচে এবং ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয়না, ত্বক টানটান রাখে।

নাশপাতি ফলের দাম

নাশপতি দাম খানিকটা মৌসুমের উপর, গুনমান এবং কোথায় থেকে কিনছেন তার উপর নির্ভর করে। স্থান ভেদে নাশপাতির দাম ভিন্ন হতে পারে, যেমন- ঢাকাতে একদাম, চট্টগ্রামে একদাম এবং রাজশাহীতে অন্যদাম হতে পারে। তবে যেখান থেকে কিনুন না কেন এখান থেকে েএকটি ধারনা নিতে পারেন। ঢাকা কাঁটা বাজার এবং বাদামতলী বাজার অনুযায়ী আজকে নাশপাতি ফলের দাম-
  • মাঝারি আকারের নাশপাতি প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৮০ টাকা।
  • বড় আকারের নাশপাতি প্রতি কেজি- ১৮০ টাকা থেকে ২২০ টাকা। এবং
  • নিউজিল্যান্ড থেকে আমদানি করা নাশপাতির দাম প্রতি কেজি- ২২০ থেকে ২৮০ টাকা।
বাজারে প্রতিদিন দাম কম বেশি হতে পারে। উপরে উল্লেখিত দাম থেকে ১০ বা ২০ টাকা এদিক-সেদিক হতে পারে। কাজেই নাশপাতি কেনার আগে বাজারে দাম যাচাই করুন। এছাড়া ও বিভিন্ন অনলাইন শপে নাশপাতি বিক্রি হয়ে থাকে, কিনার আগে যাচাই করে দেখতে পারেন।

নাশপাতি খাওয়ার সময়

নাশপাতি খাওয়ার নিদিষ্ট কোন সময় নেই। আপনি দিনে বা রাতে যেকোন সময় নাশপাতি খেতে পারেন। তবে নিদিষ্ট কিছু সময়ে খেলে আমদের শরীরে যে শক্তি সঞ্চয় হয় তার যথাযথ ব্যবহার করা যায়। নিম্নে নাশপাতি খাওয়ার সময় উল্লেখ করা হলো-
নাশপাতি ফল এর উপকারিতা
আপনি সকালের নাস্তায় নাশপাতি খেতে পারেন। নাশপাতিতে থাকা ফাইবার এবং ভিটামিন সি আপনাকে সারাদিন কর্মক্ষেত্রে সঠিক পুষ্টি যোগন দিয়ে কাজ করার জন্য আরো উদ্যামী করে তোলে এবং আপনি কম ক্লান্তি অনুভব করেন। তাই সারাদিন সতেজ থাকতে প্রতিদিন সকালের নাস্তায় নাশপাতি খাওয়া যেতে পারে।

দুপুরের খাবারের আগে ও নাশপাতি খেতে পারেন। দুপুরের খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে নাশপাতি খেতে পারেন। এতে করে দুপুরের খাবার কম পরিমানে খেতে পারবেন এবং নাশপাতির পুষ্টিগুন আপনাকে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত পূর্ণতা দেবে। যার কারনে আপনার ওজন বাড়ার সম্ভমনা কমে যাবে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করবে।

বিকালের নাস্তাতে ভারী খাবার না খেয়ে নাশপাতি খাওয়া যেতে পারে। শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করার পর নাশপাতি খেতে পারেন। এটি আপনাকে তৎক্ষনাত শক্তি প্রদান করবে এবং শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়ামের পর আপনাকে ক্লান্তি রোধে সাহায্য করবে। নাশপাতিতে থাকা শর্করা আপনাকে পানিশূন্যতা থেকে মুক্তি দেবে।

নাশপাতি ডেজার্ট হিসেবে ও খাওয়া যেতে পারে। রাতে ক্ষুধা পেতে কিছু খেতে ইচ্ছা করলে নাশপাতি খেতে পারেন।

Q. নাশপাতি ফল ইংরেজি
A. নাশপাতি ফলকে ইংরেজিতে Pear বলা হয়। Pear একটি জনপ্রিয় ফল যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খাওয়া হয় এবং এটি পুষ্টিগুণে ভরপুর।

লেখকের মন্তব্য: গর্ভাবস্থায় নাশপাতি খাওয়ার উপকারিতা - নাশপাতি খাওয়ার নিয়ম

প্রিয় পাঠক, আশা করি গর্ভাবস্থায় নাশপাতি খাওয়ার উপকারিতা কেমন, নাশপাতি খাওয়ার নিয়ম এবং নাশপাতির দাম সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। নাশপাতি অত্যান্ত পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার। উপরে উল্লেখিত নিয়ম অনুসারে নাশপাতি গ্রহন করুন। অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। গর্ভবতী মায়েদের নাশপাতি খাওয়ার ক্ষেত্রে সর্তক হওয়া উচিত।

এতক্ষণ আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। এরকম তথ্যবহুল বা আপনার উপকারে আসে এমন আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন এবং কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত দিন। নিজে ভাল থাকুন, অন্যকে ভালো রাখুন। পৃথিবী হোক সুন্দরময়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অ্যামপ্লি ইনফোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url