নিম পাতার বিজ্ঞানসম্মত নাম - চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার
নিম পাতার বিজ্ঞানসম্মত নাম খুঁজছেন? বা চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার জানতে চান? তাহলে এই আর্টিকেলটি শুধুমাত্র আপনার জন্য। যেখানে জানতে পারবেন, নিম পাতার বিজ্ঞানসম্মত নাম এবং চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার সহ খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে কি হয় এবং নিম পাতার উপকারিতা এলার্জি ভালো করতে।
পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন- নিম পাতার বিজ্ঞানসম্মত নাম সহ নিম পাতার ব্যবহার নিয়ে আপনার যত দ্বিধা রয়েছে তা উত্তর পেয়ে যাবেন।
ভূমিকা
নিম গাছ সব ধরনের ঔষধি গুনের গুনান্বিত। কৃষিক্ষেত্রে ও আমাদের পরিবেশগত ভাবে উপকার করতে এবং অন্যান্য চাহিদার কারনে আমাদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিদ হলো নিম গাছ। এর নানা উপকারিতার জন্য নিম গাছকে গ্রামের ডাক্তার খানা বলা হয়। সুস্থ্য সুন্দর জীবন যাপনে এবং আমাদের পরিবেশ ভালো রাখতে নিম গাছের গুরুত্ব অপরিসীম।
আরো পড়ুনঃ নিম পাতার রস খাওয়ার নিয়ম
নিম গাছ প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন ধর্মীয় ও ঘরোয়া অনুষ্ঠানে ব্যবহার হয়ে আসছে। নিম গাছ একটি পবিত্র গাছ হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। বাংলাদেশ এবং ভারতের বিভিন্ন জায়গায় নিম গাছের পাতা ব্যবহার করে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করা হয়।
নিম পাতার বিজ্ঞানসম্মত নাম
নিম পাতার বিজ্ঞানসম্মত নাম হলো Azadirachta indica. নিম গাছ সাধারণক মালেয়েছি প্রজাতির একধরনের উদ্ভিদ। Azadirachta শব্দটি এসেছে পারসিক শব্দ থেকে, যার Azad শব্দের পারিভাষিক অর্থ- স্বাধীনতা আর dirachta শব্দের অর্থ- গাছ।
নিমগাছের আরো বিভিন্ন নাম রয়েছে, যেমন- ইংরেজি ভাষায় Neem tree বা Indian lilac, সিংহল ভাষায় Neemba, তামিল ভাষায় Vepaam এবং বাংলা ভাষায় Dogwood tree বা নিমগাছ বলা হয়। এই নিম গাছের উৎপত্তি হয় দক্ষিন-র্পূব এশিয়ায়। যার মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্থান, শ্রীলঙ্কা অন্যতম।
আরো পড়ুনঃ মেথি চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা
নিম গাছ সাধারণত ২০ থেকে ৩০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। পাতা লম্বা গোলাকার, যা লম্বায় ২৫-৩৫ সেমি এবং চওড়া ৫-১০ সেমি হয়ে থাকে। নিম গাছের ফুল সাদা রংয়ের এবং সুগন্ধিযুক্ত হয়ে থাকে। হলুদ রংয়ের একধরনের ফল হয় নিম গাছে, যার থেকে কেবল মাত্র একটি বাদামী রঙ্গের বীজ হয়ে থাকে।
নিম গাছ সারা বছর পাতা ধরে রাখে এর পাতা (বয়স্ক পাতা ব্যতিত) কখনো ঝরে পড়ে না। নিম গাছের বীজ থেকে তৈরী তেল বা নিম তেল বিভিন্ন ব্যথ্য সাড়াতে সাহায্য করে এবং তেল বের হওয়ার সময় যে খোল বের হয় তা কিটনাশক হিসেবে জমিতে ব্যবহার করা হয়। যার করনে জমি কিট পতঙ্গ থেকে মুক্ত থাকে এবং ফসল ভালো হয়।
চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার - চর্মরোগে নিম পাতার ব্যবহার
জ্বর, সর্দি কাশি থেকে শুরু করে সব ধরনের রোগের চিকিৎসায় নিম গাছের পাতা ব্যবহার হয়। চুলকানির ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। চুলকানি সারাতে নিমপাতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু চুলকানিতে নিমপাতা ব্যবহারের কিছু নিয়ম রয়েছে, যেগুলো মেনে চললে আপনার চুলকানি খুব দ্রুত সেরে যাবে। তো চলুন জেনে নেয়া যাক-
আরো পড়ুনঃ ওজন কমাতে লেবু পানি খাওয়ার নিয়ম
নিম পাতার পেস্ট: প্রথমে আপনাকে কিছু সবুজ বা তাজা নিম পাতা সংগ্রহ করতে হবে। সেগুলো ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। ভালোভাবে ধোয়া হয়ে গেলে সেগুলো একটি ব্লেন্ডারে দিয়ে বা পিষে পেস্ট তৈরি করতে হবে। পেস্ট তৈরি হয়ে গেলে, আপনার চুলকানোর স্থানটি ভালোভাবে ধুয়ে নিয়ে সেখানে নিমপাতার টেস্ট লাগাতে হবে।
১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে নিয়মিত ২ থেকে ৩ দিন পরপর নিম পাতার পেস্ট ব্যবহার করন আপনার চুলকানি খুব দ্রুত সেরে যাবে। সাবানের ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। সাবানে ক্ষার থাকে, যার ব্যবহারে চুলকানি বেড়ে যায়।
নিম পাতার গুড়া: নিম পাতা রোদা শুকিয়ে গুড়া করে নিতে হবে। গুড়া করা ১ চা চামচ পাউডারের সাথে ১ চা চামচ মধু মিশেয়ে মিহি করে পেস্ট করে নিন। চুলকানোর স্থানে পেস্ট লাগিয়ে ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
নিমের তেল: নিমের তেল চুলকানি সারানোর জন্য অনেক বেশি কার্যকারি। নিম তেল তৈরির জন্য প্রথমে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। সেই বীজগুলো মেড়ে তেল তৈরী করে নিতে হবে। নিমের তেল চুলকানোর স্থানে লাগিয়ে হালকা ম্যাসাজ করুন। ২০ থেকে ২৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
উপরে উল্লেখিত তিনটি উপায়ের যেকোন একটি উপায় ২ থেকে ৩ দিন পরপর নিয়মিত ব্যবহার করলে চুলকানি খুব দ্রুত সেড়ে যাবে। প্রতিদিন ব্যবহার না করাই উত্তম। এই উপায় গুলো মেনে চলার সময় ক্ষার জাতিয় সাবান, শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন না। ব্যবহারের সময় কোন পাশ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে সাথে সাথে এগুলো ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
নিম পাতার উপকারিতা এলার্জি
আপনার যদি অনেক বেশি এলার্জি হয়ে থাকে এবং কোন ওষুধে কাজ না করে। সে ক্ষেত্রে সর্বশেষ ওষুধ হিসেবে আপনি নিম পাতার বড়ি বানিয়ে খেতে পারেন। যা আপনার অ্যালার্জি দূর করবে শতভাগ গ্যারেন্টি দিয়ে বলা যেতে পারে। চলুন জেনে নেই নিম পাতার উপকারিতা এলার্জি দূর করতে এবং কিভাবে নিম পাতার বড়ি বানানো যায় সে সম্পকে-
আরো পড়ুনঃ কাশির জন্য তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম
প্রথমে আপনাকে অল্প কিছু পরিমাণ তাজা নিম পাতা নিতে হবে। সেগুলো ভালোভাবে ধোয়ার পর কোন একটি ব্লেন্ডার বা পাটাতে পিষে একটি পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে।পেস্ট তৈরি হয়ে গেলে সেগুলো ঘড়ির মতো করে গোল গোল আকার দিতে হবে। ভেজা অবস্থায় বড়িগুলো কোন একটি পাত্রে রাখুন।
পাত্রসহ বড়ি গুলো রোদে শুকাতে দিন। বড়িগুলো শুকে গেলে সেগুলো একটি কাঁচ বা প্লাস্টিকের জারে সংরক্ষণ করুন। যাতে কোন হাওয়া বাতাস প্রবেশ না করে। এই বড়িগুলো প্রতিদিন খাবার ৩০ মিনিট পূর্বে খাওয়া উচিত। নিয়মিত তিন বেলা নিম পাতার বড়ি খেলে আপনার অ্যালার্জি অনেকটা সেরে যাবে।
নিম পাতা মুখে দিলে কি হয়
নিম পাতা মুখের সুন্দর যত রক্ষার্থে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিমপাতা মুখে থাকা দাগ, ক্ষত প্রাকৃতিক ভাবে নির্মূল করে। নিমপাতা নিয়মিত ব্যবহারের ফলে আমাদের মুখের উনফেকশন সহ মাড়ির সমস্যা এবং দাতেঁর সুরক্ষাতে ভূমিকা পালন করে। নিম্নে নিম পাতা মুখে দিলে কি হয় তা আলোচনা করা হলো-
নিম পাতা মুখে দিলে আমাদের ত্বকের মৃতকোষ গুলো সতেজ হয় এবং নতুন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। যার কারনে আমাদের ত্বক উজ্জল হয়। নিমপাতা আমাদের ত্বকের মেছতা কমাতে সাহায্য করে এবং ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখে, যার কারণে আমাদের ত্বকের কমলতা ও মসৃণতা বজায় থাকে।
আমাদের মধ্যে অনেকের ত্বক তেলতেলে হয়ে থাকে। এই তেলতেলে ভাব থেকে মুখকে সতেজ রাখতে নিম পাতার গুরুত্ব অপরিসীম। ১ থেকে ২ দিন পর নিম পাতা বেটে মুখে দিলে বা নিম পাতা পানিতে দিয়ে সেই পানি ফুটিয়ে নিন। পানি যখন হালকা গরম হবে, তখন সেই পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। তেলতেলে ভাব চলে যাবে।
আমাদের মুখে বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন, ব্র্রণ বা ফুসকুড়ি হয়ে থাকে। তার সমাধান হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে নিম পাতার রস বা পেস্ট। নিম পাতার পেস্ট বা রস ব্যবহারের ফলে, এতে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি আমাদের ত্বকে সব ধরনের ইনফেকশন বা অন্যান্য সমস্যা দূর করে।
লেখকের মন্তব্য: নিম পাতার বিজ্ঞানসম্মত নাম - চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার
প্রিয় পাঠক, আশা করছি নিম পাতার বিজ্ঞানসম্মত নাম ও চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার নিয়ে আপনাদের আর কোন সংশয় নেই। নিম পাতা, নিম রস এবং নিমের তেল আমাদের শারীরিক যেকোন সমস্যা সাড়াতে পারে। কিন্তু এর ব্যবহার করার নিয়ম না জেনে ব্যবহার করা উচিত নয়। হিতে বিপরীত হতে পারে। কাজেই সমস্ত আর্টিকেল মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
এতক্ষণ আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। এরকম তথ্যবহুল বা আপনার উপকারে আসে এমন আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন এবং কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত দিন। নিজে ভাল থাকুন, অন্যকে ভালো রাখুন। পৃথিবী হোক সুন্দরময়।
অ্যামপ্লি ইনফোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url