নিম পাতার রস খাওয়ার নিয়ম - চুলের জন্য নিম পাতার উপকারিতা
নিম পাতার রস খাওয়ার নিয়ম ও চুলের জন্য নিম পাতার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? আমি আপনাদের জানাবো নিম পাতার রস খাওয়ার নিয়ম ও চুলের জন্য নিম পাতার উপকারিতা সহ নিমপাতার গুড়া খেলে কি হয় এবং নিম গাছের ছাল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। চলুন জেনে নেয়া যাক বিস্তারিত।
আপনাদের মনোযোগ আর্কষন করছি, সমস্ত আর্টিকেলটি ভালো ভাবে পড়ুন। আশা করি নিম পাতার রস খাওয়ার নিয়ম সহ যাবতীয় সকল বিষয়ে জানতে পারবেন।
ভূমিকা
নিম গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Azadirachta indica. এই গাছ সাধারণত বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্থান সহ দক্ষিন এশিয়ার অনেক দেশে পাওয়া যায়। এটি এমন একটি গাছ যার শিখর থেকে মূল কান্ড পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়। নিম গাছ প্রাচীনকাল থেকেই নানা ঔষধের প্রতিকার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
আরো পড়ুনঃ নিম পাতার বিজ্ঞানসম্মত নাম
এই নিম গাছের কাঠ অনেক শক্তিশালি হয়ে থাকে, যার দ্বারা নানা ধরনের টেকসই আসবাবপত্র সহ বিভিন্ন নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হয়। নিম্ন গাছের ছাল থেকে যে রং পাওয়া যায়, তা টেক্সটাইল রং হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
নিম পাতার রস খাওয়ার নিয়ম
নিম পাতা নানা উপায়ে খাওয়া যায়, তার মধ্যে একটি উপায় হলো নিম পাতা রস করে খাওয়া। নিম পাতার রসের অনেক কার্যকারি ক্ষমতা রয়েছে কিন্তু তা নিয়ম মেনে খেতে হবে। নিয়মিত নিয়ম মেনে নিম পাতার রস খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়। চলুন জেনে নেই নিম পাতার রস খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে-
নিম পাতার রস খেতে প্রথমে আমাদের নিম পাতা সংগ্রহ করতে হবে। এক মুষ্টি পরিমান তাজা এবং পরিষ্কার নিম পাতা নিয়ে নিন। সেগুলো ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর পাতাগুলো একটি ছুরি দিয়ে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিন। টুকরোকৃত নিম পাতা ব্লেন্ডারে দিয়ে অল্প পরিমান পানি ব্যবহার করে পেস্ট তৈরী করতে হবে। তারপর একটি পরিষ্কার ছাকনী দিয়ে পেস্টটাকে ছেকে নিতে হবে।
আরো পড়ুনঃ মেথি চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিম পাতার রস খাওয়া সব থেকে উপকারি। কোন খাবার না খাওয়ার কারনে নিম পাতার রসের প্রয়োজনীয় উপাদান খুব দ্রুত শরীর গ্রহন করে। প্রতিদিন সকালে ১০ থেকে ১৫ মিলি বা ১ থেকে ২ চামচ পরিমান নিম পাতার রস খাওয়া উচিত এবং এটি পরিমান খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত।
নিম পাতার রস অনেক তিতা হয়ে থাকে। আপনি যদি নিম পাতার রস তিতার কারনে না খেতে পারেন? তাহলে তার সঙ্গে পানি, লেবুর রস, চিনি বা গুড় অথবা মধু ব্যবহার করতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন এগুলোর পরিমান যাতে সীমিত পরিমানে হয়ে থাকে। এভাবে নিয়মিত নিম পাতার রস খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি।
চুলের জন্য নিম পাতার উপকারিতা
ঘরোয়া পরিবেশে চুলের যত্নে সব চেয়ে প্রচলিত এবং কার্যকারি পদ্ধতি হলো নিম পাতার ব্যবহার। নিম পাতায় রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি সহ আরো অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান। যা আমাদের চুলের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ সকল সমস্যা সমাধানে সহায়ক।
আরো পড়ুনঃ কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম
চুলে নিম পাতা ব্যবহার করার ফলে, এর অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ঠ আমাদের চুলের খুশকি দূর করতে সক্ষম। নিমপাতা চুল পড়া থেকে দেয় মুক্তি, পাশাপাশি আমাদের চুলের গোড়া খানিকটা শক্তিশালি করে তোলে। নিম পাতাতে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুন আমাদের মাথার ত্বককে বিভিন্ন সংক্রমন থেকে রক্ষা করে।
নিম পাতা আমাদের চুল বৃদ্ধিতে অপরিহার্য একটি উপাদান। যা নিয়মিত ব্যবহারের ফলে আমাদের চুল হয় আজান-লম্বিত। চুলে মাথা ফেটে যায় না এবং চুল হয় কমল ও মসৃণ। নিয়মিত নিম পাতা ব্যবহার করার ফলে চুলে উজ্জ্বলতা ফিরে আসে। নিম পাতার রস উকুন নিধনে অনেক কার্যকারি।
ব্যবহারের নিয়ম:
মাথায় নিম পাতা ব্যবহারের নানা পদ্ধতি রয়েছে, তার মধ্যে সহজ পদ্ধতি হলো নিম পাতা বেটে বা ব্লেন্ড করে সরাসরি চুল এবং চুলের গোড়ায় ভালো করে লাগিয়ে ২০-৩০ মিনিট রেখে দিতে হবে। শুকালে মাথা ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। এই পদ্ধতি অধিকতর সহজ এবং কার্যকারি।
আরো পড়ুনঃ কাঁচা পেঁপের উপকারিতা
২য় মাধ্যটি হলো চুলে নিম পাতার রস ব্যবহার করা। আপনি সামন্য কিছু নিম পাতা নিয়ে বেটে বা ব্লেন্ড করে তা ছেঁকে রস বের করতে পারেন। নিম পাতার রস চুলে লাগিয়ে ২০ থেকে ২৫ মিনিট পর চুলে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এটি চুলের যত্নে অনেক ফলপ্রদ। নিম পাতার রস চুলে ব্যবহারের মাথা ঠান্ডা থাকে।
৩য় মাধ্যমটি হলো নিম পাতা ফুটিয়ে সেই পানি ঠান্ডা করে মাথায় ব্যবহার করা। একটি পাত্রে ২ থেকে ৩ লিটার পানি নিন। সেই পানিতে অল্প পরিমান নিম পাতা ছেড়ে দিন। পানি ফুটতে শুরু করলে পাত্রটি নামিয়ে পানি ঠান্ডা করে নিন। পানি থেকে পাতা গুলো আলাদা করে, মাথা ধুয়ে নিন। এতে খশকি দূর হয়।
নিম পাতার গুড়া খেলে কি হয়
প্রাচীনকাল থেকেই নিম পাতার গুড়া বা নিম পাউডার বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। নিম পাতার গুড়োয় বিদ্যমান প্রাকৃতিক উপাদান আমাদের শরীরে নানা উপাকারে আসে। নিম্নে নিম পাতার গুড়া খেলে কি হয় তা নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
আরো পড়ুনঃ
আমাদের রক্তে বিভিন্ন ধরনের বর্জ্র জমা হয়ে থাকে। যার ফলে আমাদের শরীরে নানা সমস্যা হওয়ার পাশাপাশি ত্বকে ব্রণ, ফুসকরি এবং লালচে ভাব হয়ে থাকে। নিম পাতার গুড়া খেলে আমাদের রক্ত থাকা বর্জ্র পরিষ্কার হয়ে রক্ত পরিশোধিত হয়। যা ফলস্বরুপ আমাদের শরীরে সকল সমস্যা থেকে মুক্তির সাথে সাথে ব্রণ ও লালচে ভাব কমে যায়।
রক্তে অতিরিক্ত শর্করা থাকার কারনে আমাদের ডায়াবেটিস বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। প্রতিদিন নিম পাতার গুড়া খেলে আমাদের রক্তে থাকা শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রনে থাকে। ফলে আমাদের ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি মেলে। ডায়াবেটিস রোগীদের উচিত, তাদের খাদ্য তালিকায় নিম পাতার গুড়া রাখা।
আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন যাদের কোন রোগ নেই কিন্তু তাদের বিভিন্ন অঙ্গে ব্যথা অনুভব হয়। এই ব্যথাকে বলে বাত ব্যথা। এই ব্যথা দিন দিন বেড়ে যায়। নিম পাতার গুড়া খেলে এর অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি উপাদান বাত ব্যথা দূর করতে এবং অন্যান্য ব্যথা দূর করতে সক্ষম।
পাকস্থলী সমস্যা দূর করতে এবং যকৃত ভালো রাখতে নিম পাতার বিকল্প খুব কমই রয়েছে। নিম পাতার গুড়া পেটে পরজীবী দূর করে পাকস্থলী ভালো রাখে। যকৃতের কার্যক্ষমতা বেড়ে তোলে এবং যকৃতের সুরক্ষা প্রদান করে। কাজেই পাকস্থলী ও যকৃত ভালো রাখতে ২ থেকে ৩ দিন পর পর নিম পাতার গুড়া খেতে পারেন।
নিম গাছের ছালের উপকারিতা
নিম গাছ এমন একটি গাছ যার পাতা থেকে ছাল সব কিছুই আমাদের উপকারে আসে। এই গাছ আমাদের সমাজে ঔষধি গাছ হিসেবে পরিচিত। নিম পাতার রস বা গুড়ার যেমন উপকারিতা রয়েছে, নিম গাছের ছালের ও উপকারিতা অনেক। নিম্নে নিম গাছের ছালের উপকারিতা উল্লেখ করা হলো-
পোকামাকর তাড়ানোর সবচেয়ে সহজ মাধ্যম নিম গাছের ছাল ব্যবহার করা। পোকামাকড় নিম গাছের ছালের গন্ধ সহ্য করতে পারে না। তাই সবাই পোকামাকড়ের কামড় থেকে বাঁচতে বা পোকামাকড় তাড়াতে নিম গাছের ছাল ব্যবহার করে থাকে এবং এটি খুব কার্যকারি।
নিম গাছের ছাল পানিতে ভিজিয়ে রেখে সেটি মাউথওয়াস হিসেবে ব্যবহার করা যায়। নিয়মিত নিম গাছের ছাল পানিতে ভিজিয়ে সেই পানি দিয়ে প্রতিদিন কুলি করলে, মুখের জীবাণু দূর হওয়ার পাশাপাশি দাঁত ভালো থাকে মাড়ি শক্তিশালী হয় এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে।
নিম গাছের ছাল ভালো করে ধুয়ে নিয়ে সেগুলো বেটে পেস্ট তৈরী করে, সেই পেস্ট কোন ক্ষতস্থানে লাগালে বা ত্বকের যেখানে ব্রণ বা ফুসকুড়ি রয়েছে সেখানে লাগান। খুব তাড়াতাড়ি ব্রণ বা ফুসকড়ি ভালো হওয়ার সাথে সাথে আপনার ত্বকের যেকোন সমস্যা সেড়ে যাবে।
নিমের ছাল গরম পানিতে ফুটিয়ে তা চায়ের মত পান করুন। আপনার শরীরের রক্ত পরিষ্কার হবে এবং পাকস্থলীর সমস্যা দূর হবে। নিম গাছের ছাল গরম পানিতে খেলে এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে এবং আপনাকে জ্বর, সর্দি-কাশি থেকে রক্ষা করবে।
লেখকের মন্তব্য: নিম পাতার রস খাওয়ার নিয়ম - চুলের জন্য নিম পাতার উপকারিতা
প্রিয় পাঠক, আশা করি নিম পাতার রস খাওয়ার নিয়ম এবং চুলের জন্য নিম পাতার উপকারিতা সম্পর্কে সমস্ত কিছু বুঝতে পেরেছেন। নিম গাছ গুলো খুব অবহেলায় বেড়ে ওঠে। এই গাছ গুলো প্রতি যত্নবান হওয়া উচিত। কারণ নিম গাছ একমাত্র গাছ যার আপাতমস্তক ব্যবহার করা যায় এবং তা মানুষের উপকারে ব্যবহৃত হয়। তাই এর ফল উপভোগ করতে, নিম গাছ যত্নে বড় করা উচিত।
এতক্ষণ আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। এরকম তথ্যবহুল বা আপনার উপকারে আসে এমন আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন এবং কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত দিন। নিজে ভাল থাকুন, অন্যকে ভালো রাখুন। পৃথিবী হোক সুন্দরময়।
অ্যামপ্লি ইনফোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url