দৈনিক কত গ্লাস পানি পান করা উচিত - ইসলামে পানি খাওয়ার নিয়ম

প্রিয় পাঠক, দৈনিক কত গ্লাস পানি পান করা উচিত এবং ইসলামে পানি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চাওয়ার ইচ্ছা নিয়ে আর্টিকেলটিতে ক্লিক করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন যেখানে জানতে পারবেন দৈনিক কত গ্লাস পানি পান করা উচিত, ইসলামে পানি খাওয়ার নিয়ম এবং বেশি পানি পান করার উপকারিতা সম্পর্কে।
দৈনিক কত গ্লাস পানি পান করা উচিত
তাছাড়াও দৈনিক পানি পান করার নিয়ম, দিনে কত লিটার পানি খাওয়া উচিত, রাতে পানি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।

ভূমিকা

জীবনের অমূল্য উপাদান পানি। পানি অতি সাধারন একটি পদার্থ. তবু জীবনের জন্য অপরিহার্য। আমাদের দেহের ৬০ ভাগের ও বেশি পানি রয়েছে। পানি আমাদের দেহের কোষ গুলোকে সতেজ রাখে, আমাদের দেহে থাকা বিষাক্ত বা ক্ষতিকর পদার্থ িইউরিনের মাধ্যমে বের করে দেয় এবং আমাদের শরীরের অঙ্গগুলো কে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে।

দৈনিক কত গ্লাস পানি পান করা উচিত

দৈনিক কত গ্লাস পানি পান করা উচিত তা আমাদের শরীরের ওজন, শারীরিক কাজের পরিমান, আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে। বয়স অনুযায়ী শিশু, কিশোর, প্রাপ্তবয়স্ক ও বৃদ্ধদের পানি পানের প্রয়োজনীয়তা ভিন্ন হয়ে থাকে। সাধারণত মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের বেশি পান করা প্রয়োজন হয়। যদি গরম বা আর্দ্র আবহাওয়া বেশি হয় তা হলে বেশি পানি পানের প্রয়োজন হয়।
এছাড়া ও আপনি যদি নিয়মিত ব্যায়াম করেন বা শারীরিক পরিশ্রম করেন তাহলে অনেক বেশি পানি পান করা উচিত। আপনার যদি কিডনি রোগ বা হৃদরোগ জনিত সমস্যা হয়ে থাকে সেক্ষেত্রেও আপনার অভি পরিমাণে পানি পান করা উচিত। বিশেষজ্ঞদের মতে সাধারণ নির্দেশিকা অনুসারে পানি পানের নিয়ম হলো-
একজন স্বাভাবিক পুরুষের প্রতিদিন ৩.৭ ‍লিটার বা ১৫ গ্লাস পানি পান করা উচিত এবং একজন স্বাভাবিক মহিলার প্রতিদিন ২.৭ লিটার বা ১১ গ্লাস পানি পান করা উচিত। তবে আপনার ব্যক্তিগত শারীরিক চাহিদা পূরণ করার ক্ষেত্রে পানি পানের পরিমান কম বা বেশি হতে পারে।

ইসলামে পানি খাওয়ার নিয়ম - পানি পান করার ৬ টি সুন্নত - পানি খাওয়ার নিয়ম হাদিস

ইসলামে পানি পান করার কিছু নিয়ম বা সুন্নত রয়েছে যা আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) শিখিয়েছেন। এই নিয়মগুলো মেনে পানি পান করলে সুন্নত পালনের পাশাপাশি আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারি। চলুন জেনে নেই ইসলামে পানি খাওয়ার নিয়ম এবং পানি পান করার ৬ টি সুন্নাত সম্পর্কে যা আমাদের ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিক জিবন যাপনের জন্য গুরুত্বপূর্ন।
দৈনিক কত গ্লাস পানি পান করা উচিত
১. ডান হাতে পানি পান করা: সহিহ মুসলিম ২/১৭২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পানি পান করার ক্ষেত্রে ডান হাত ব্যবহার করা সুন্নত।

২. বসে পানি পান করা: সহিহ মুসলিম ২/১৭৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দাড়িয়ে পানি পান করা নিষেধ এবং বসে পানি পান করা সুন্নত।
৩. বিসমিল্লাহ বলে শুরু করা: সুনানে তিরমিযী ২/১০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পানি খাওয়ার পূর্বে বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম বলে শুরু করা উচিত।

৪. তিন নিঃশ্বাসে পানি পান করা: সহিহ মুসলিম ২/১৭৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী একবারে পুরো গ্লাস পানি পান না করে, তিনবার নিঃশ্বাস ফেলে অল্প অল্প পরিমান পানি পান করা সুন্নত।

৫. ভাঙ্গা গ্লাস বা পাত্রে পানি পান না করা: ভাঙ্গা গ্লাস বা পাত্রে পানি পান করা সুন্নত নয়।

৬. পানি পান শেষে আলহামদু লিল্লাহ বলা: সুনানে তিরমিযী ২/১০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পানি খাওয়া শেষে আলহামদু লিল্লাহ বলা সুন্নত।

বেশি পানি পান করার উপকারিতা

পানি শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং পানি আমাদের জীবনের জন্য অপরিহার্য। শরীরের সঠিকভাবে কাজ করার জন্য প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা জরুরি। বেশি পানি পান করার অসংখ্য উপকারিতা রয়েছে। চলুন জেনে নেই বেশি পানি পান করার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত:

ওজন নিয়ন্ত্রণ করে: বেশি পানি পান করলে পেট ভরা থাকে, ফলে ক্ষুধা কম লাগে এবং খাওয়ার পরিমান অনেকটা কমে যায়। পানি বিপাক হার বৃদ্ধি করে, যা শরীরের চর্বি দ্রুত বার্ণ করতে সাহায্য করে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি: পানি ত্বকের কোষগুলিকে হাইড্রেটেড রাখে, যার ফলে ত্বক নরম, মসৃণ এবং উজ্জ্বল দেখায়। পানি ত্বক থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে, যা ব্রণ ও বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করে।

বুদ্ধিমত্তা বৃদ্ধি করে: পানি মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ করে, যা মনোযোগ, একাগ্রতা এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে পাশাপাশি পানি মাথাব্যথা ও ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে।

হজমশক্তি বৃদ্ধি করে: পানি হজমের রসের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে, যা খাবার ভালোভাবে হজম হতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে এবং মলত্যাগ নিয়মিত করে।

কিডনি ও মূত্রাশয় ভালো রাখে: বেশি পানি পান করায় মূত্রাশয় থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের হয়, যা UTI (মূত্রনালীর সংক্রমণ) রোধ করতে সাহায্য করে এবং বেশি পানি পান করার ফলে কিডনিতে পাথর হওয়া থেকে করে।

জয়েন্ট ঠিক রাখে: পানি জয়েন্টগুলিকে লুব্রিকেট করে এবং ব্যথা ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। বেশি পানি পান করলে গর্ভাবস্থায় ও স্তন্যদানের সময় কোন ঘাটতি থাকে না।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: বেশি পানি পান করলে শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের হয়, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং শরীরে তরল ভারসাম্য বজায় রাখে, যা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।

ঘুম ভালো হয়: বেশি পানি পান করলে ডিহাইড্রেশন রোধ হয়, যা বিরক্তি, ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে এবং পানি শরীরকে শীতল রাখতে সাহায্য করে, যা ভালো ঘুমের জন্য প্রয়োজন।

চুলের যত্নে: পানি চুলকে হাইড্রেটেড রাখে এবং তা শুষ্ক ও ভঙ্গুর হওয়া রোধ করে। পানি চুলের বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

দৈনিক কত লিটার পানি পান করলে মূত্রনালীর রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে

বেশি পানি পান করার পরিমানের উপর নির্ভর করে মূত্রনালীর রোগ বা মূত্রনালীর সংক্রমন হয় না। এটি সম্পর্ণ নির্ভর করে আপনি কি পানি খাচ্ছেন, কোথায় থেকে পানি খাচ্ছেন, আপনার রেগুলার পানি পান করার পরিমান, আপনার শারীরিক অবস্থা, ওজন এবং আপনার শারীরিক কার্যক্ষমতা উপর নির্ভর করে মূত্রনালীর রোগ হয়ে থাকে।

বিশেষজ্ঞদের মতে একজন স্বাভাবিক সুস্থ মানুষের পতিদিন ৮ থেকে ১০ গ্লাস বা ২ লিটারি পানি পান করা উচিত। এই স্বাভাবিক পরিমান থেকে কম বা অতিরিক্ত পানি পান করা উভয়ই মূত্রনালীর সাধারন কারণ হতে পারে। আবার আজ ১ লিটার অন্য দিন ৩ লিটার পানি পান করলেও মূত্রনালীর সমস্যা হতে পারে বলে মনে করা হয়।

কাজেই আমাদের উচিত নিয়মিত পরিমান মত পানি পান করা। মূত্রনালীর রোগ বা সংক্রমন লক্ষণ পরিলক্ষিত হলে বা সন্দেহ হলে যেমন: মূত্রশয়ে ব্যথা বা চাপ অনুভব হলে, বারবার প্রস্রাব করলে, প্রস্রাবের সময় জ্বালা বা ব্যথা হলে, গোলাপী-লাল বা রক্ত মূত্র হলে বিলম্ব না করে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।

দৈনিক পানি পান করার নিয়ম - দিনে কত লিটার পানি খাওয়া উচিত

দিনের বেলায় নিয়মিত পানি পান করা অত্যন্ত জরুরি। আপনি তৃষ্ণার্ত বোধ বা না করুন প্রতি ঘন্টায় একবার পানি পান করার চেষ্টা করুন। খাবারের আগে ও পরে এক গ্লাস পরিমান বা তার বেশি পানি পান করুন। শারীরিক ব্যায়াম করার সময় এবং পরে যথেষ্ট পরিমাণ পানি পান করুন। গরম আবহাওয়ায় শরীর থেকে অতিরিক্ত ঘাম ঝরলে পর্যাপ্ত পানি পান করুন।

সাধারনত আমাদের শারীরিক পরিশ্রম বা অন্যান্য বিষয় গুলোর উপর পানি পান নির্ভর করে। তারপর ও কিছু বিশেষজ্ঞের মতে দিনে দুই থেকে আড়াই লিটার বা তার বেশি পানি পান করা উচিত। এতে আপনার শারীরিক শক্তি যোগানোর পাশাপাশি আপনাকে রাখরে ভিতর থেকে সতেজ ও প্রাণবন্ত। অতএব দিনে কমপক্ষে ২ লিটার বা তার বেশি পানি পান করুন।

রাতে পানি খাওয়ার নিয়ম

রাতে পানি খাওয়ার নিদিষ্ট কেন নিয়ম বা ইসলামিক শাস্ত্রে এর আলাদা কোন নির্দেশনা নেই। তবে রাতে গরম পানি পান করা উত্তম যা শরীর ও মস্তিষ্কের স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করে এবং ঘুম ভালো হওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন রাতে নিদিষ্ট সময়ে পানি পান করা স্বাস্থ্যর জন্য বেশ উপকারি।
রাতে পানি খাওয়ার নিয়ম
তবে রাতে প্রচুর পরিমানে পানি পান করা উচিত নয়, এতে বারবার প্রস্রাব করতে হতে পারে যা আপনার ঘুমের ক্ষতি করতে পারে। আপনি রাতে ঘুমানোর ১ থেকে ২ ঘন্টা আগে এক গ্লাস বা ২৫০ মিলি পানি পান করতে পারেন। আপনার যদি অনেক বেশি তৃষ্ণা পায় তবে ঘুমানোর আগে অল্প পরিমান পানি পান করুন।

রাতে পানি পান এড়াতে, দিনে পর্যাপ্ত পরিমান পানি পান করুন। এতে আপনাকে রাতে অনেক বেশি পানি পান করার প্রয়োজন হবে না। যাতে আপনার ঘুম অনেক ভালো হবে। আপনার যদি রাতে ঘন ঘন প্রস্রাব করার সমস্যা থেকে থাকে, তাহলে রাতে ঘুমানোর কয়েক ঘন্টা আগে পানি পান করা থেকে বিরত থাকুন।

লেখকের মন্তব্য: দৈনিক কত গ্লাস পানি পান করা উচিত - ইসলামে পানি খাওয়ার নিয়ম

প্রিয় পাঠক, আশা করছি দৈনিক কত গ্লাস পানি পান করা উচিত ও ইসলামে পানি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। পানি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় একটি পদার্থ যা আমরা পান করে থাকি। পানি পান ছাড়া কোন মানুষ স্বাভাবিক জীবন যাপন বা বাঁচতে পারে না। কাজেই আমাদের সকলের উচিত নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করা এবং পান করা।


এতক্ষণ আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। এরকম তথ্যবহুল বা আপনার উপকারে আসে এমন আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন এবং কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত দিন। নিজে ভাল থাকুন, অন্যকে ভালো রাখুন। পৃথিবী হোক সুন্দরময়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অ্যামপ্লি ইনফোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url