বয়স অনুযায়ী বাচ্চার ওজন কত হওয়া উচিত দেখুন তালিকাসহ

প্রিয় পাঠক, বয়স অনুযায়ী বাচ্চার ওজন কত হওয়া উচিত এবং জন্মের সময় শিশুর ওজন কম হলে করনীয় কি সে বিষয়ে জানতে চান। কিন্তু কোথাও সঠিক তথ্য পাচ্ছেন না? তাহলে এই আর্টিকেটি কেবলমাত্র আপনার জন্য। যেখানে জানতে পারবেন বয়স অনুযায়ী বাচ্চার ওজন কত হওয়া উচিত এবং জন্মের সময় শিশুর ওজন কম হলে করনীয় কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত। 
জন্মের সময় শিশুর ওজন কম হলে করনীয়
আরো জানতে পারবেন, বাচ্চার ওজন বৃদ্ধির খাবার, বয়স অনুযায়ী মেয়ে বাচ্চার ওজন কত হওয়া উচিত।

ভূমিকা

বাচ্চাদের ওজন অনেক কারনেই কম হতে পারে। বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর ওজন ২.৫ কেজি বা তার বেশি হলে বাচ্চার ওজন ঠিক আছে। আর ‍যদি এর কম হয় সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরার্মশ বা মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত। ছয় মাস পূর্ন হওয়ার আগে আবদি বাচ্চাদের মায়ের দুধ ছাড়া বা ডাক্তারের পরার্মশ ছাড়া ওজন বাড়াতে অন্য কোন খাবার খাওয়ানো উচিত নয়।
বাচ্চার বয়স ছয় মাস বা তার বেশি হলে বাচ্চাকে বিভিন্ন ফল, ডিম, দুধ ওজন বাড়ানোর ক্ষেত্রে খাওয়ানো যেতে পারে। সমস্ত আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন, বাচ্চাদের বয়স অনুযায়ী ওজন বা উচ্চতা কত হওয়া উচিত। এসকল বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন। আশা রাখি আপনার উপকারে আসবে।

বয়স অনুযায়ী বাচ্চার ওজন কত হওয়া উচিত - বাচ্চাদের ওজন চার্ট - শিশুর ওজন ও উচ্চতা বৃদ্ধির চার্ট - বয়স অনুযায়ী বাচ্চার ওজন ও উচ্চতা

আপনার সন্তান সুস্থ্য ও সঠিকভাবে বেড়ে উঠছে কি না তার উচ্চতা এবং ওজনের প্রতি নজর দেয়া জরুরি। বাচ্চা বেড়ে ওঠার সাথে ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার একটি যোগসূত্র রয়েছে। আপনার সন্তান যদি উচ্চতা অনুযায়ী ওজন বৃদ্ধি পায়, তাহলে আপনার সন্তান সুস্থ্য স্বাভাবিক রয়েছে। আর যদি তা না হয় সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরার্মশ আনুযায়ী চিকিৎসা এবং খাবার খাওয়ানো উচিত। নিম্নে বাচ্চার বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী ওজন কত হওয়া উচিত তা আলোচনা করা হলো-
বয়স অনুযায়ী বাচ্চার ওজন কত হওয়া উচিত
এখানে শুধু ছেলে বাচ্চাদের বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী ওজন কত হওয়া উচিত তা বলা হলো। নিচে মেয়ে বাচ্চাদের বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী ওজন কত হওয়া উচিত সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

ছেলে বাচ্চাদের বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী ওজন:
বয়সউচ্চতাওজন
নবজাতক১ ফুট ৮ ইঞ্চি৩.৩ কেজি
৩ মাস২ ফুট৬.০ কেজি
৬ মাস২ ফুট ২.৭ ইঞ্চি৭.৮ কেজি
৯ মাস২ ফুট ৪.৫ ইঞ্চি৯.২ কেজি
১ বছর২ ফুট ৬ ইঞ্চি১০.২ কেজি
১ বছর ৬ মাস২ ফুট ৭.৮ ইঞ্চি১১.২৫ কেজি
২ বছর২ ফুট ৯.৭ ইঞ্চি১২.৩ কেজি
২ বছর ৬ মাস৩ ফুট১৩.৪৫ কেজি
৩ বছর৩ ফুট ১.৪ ইঞ্চি১৪.৬ কেজি
৩ বছর ৬ মাস৩ ফুট ২.৯ ইঞ্চি১৫.৬৫ কেজি
৪ বছর৩ ফুট ৪.৫ ইঞ্চি১৬.৭ কেজি
৪ বছর ৬ মাস৩ ফুট ৫.৯ ইঞ্চি১৭.৭ কেজি
৫ বছর৩ ফুট ৭.৩ ইঞ্চি১৮.৭ কেজি
৫ বছর ৬ মাস৩ ফুট ৮.৫ ইঞ্চি১৯.৭ কেজি
৬ বছর৩ ফুট ৯.৮ ইঞ্চি২০.৭ কেজি
৭ বছর৪ ফুট২২.৯ কেজি
৮ বছর৪ ফুট ২ ইঞ্চি২৫.৩ কেজি
৯ বছর৪ ফুট ৪ ইঞ্চি২৮.১ কেজি
১০ বছর৪ ফুট ৬.২ ইঞ্চি৩১.৪ কেজি
১১ বছর৪ ফুট ৭.২ ইঞ্চি৩২.২ কেজি
১২ বছর৫ ফুট ইঞ্চি৩৭ কেজি

জন্মের সময় শিশুর ওজন কম হলে করনীয়

সন্তান ছেলে হোক বা মেয়ে ওজন যদি ২.৫ কেজি থেকে ৫ কেজি পর্যন্ত হয়। তাহলে আপনার বাচ্চার ওজন ঠিক আছে। তবে আপনার বাচ্চার ওজন যদি ২.৫ কেজি কম হয় তাহলে সেক্ষেত্রে সেটি অস্বাভাবিক ওজন। এর মূল করণ হলো প্রিম্যাচিউর বা ইনট্রাউটেরাইন গ্রোথ রিটার্ডেশন। নিম্নে জন্মের সময় শিশুর ওজন কম হলে করনীয় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

প্রথমত শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরার্মশ নিতে হবে। ডাক্তার দেখার পর যে পরিক্ষা গুলো করাতে বলে তা করুন। পরিক্ষা নীরিক্ষা শেষে যে স্যালাইন বা ইনজেকশন লিখবেন তার সঠিক ব্যবহার এবং যে নিয়ম কানুন গুলো বলবেন তা মেনে চলতে হবে। বেশ কিছু ‍দিন চিকিৎসা গ্রহন করলে বাচ্চার স্বাভাবিক ওজন ফিরে আসবে।
দ্বিতীয়ত বাচ্চাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে মাতৃদুগ্ধ খাওয়াতে হবে। মাতৃদুধ কম ওজনের বাচ্চার জন্য অনেক কার্যকারি। মাতৃদুধে প্রচুর পরিমানে পুষ্টি ও অ্যান্টিবডি থাকে, যা শিশুর ওজন বৃদ্ধি করে এবং নানা রোধ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। কম ওজনের বাচ্চার জন্য মাতৃদুধের বিকল্প অন্য কিছু হয় না। তবে মায়ের দুধ অনেক কম হলে ডাক্তারের পরার্মশে বাচ্চাকে প্রক্রিয়াজাতকরণ দুধ খাওয়ানো যেতে পারে।

বাচ্চাকে সঠিক তাপমাত্রায় রাখতে হবে। নবজাতকে সঠিক তাপমাত্রার জায়গা হলো তার মায়ে শরীরের সাথে রাখা। এতে করে বাচ্চার ওজন নিয়ন্ত্রনে থাকবে এবং শিশুর মানসিক বিকাশ ও শারীরিক উন্নতিতে ভূমিকা রাখবে। নবজাতক যদি কোন কারনে বা চিকিৎসার জন্য মায়ের থেকে দূরে থাকে, তাহলে শিশুকে ইনকিউবেটরে রাখা যেতে পারে। যেখানে নবজাতকের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকে।

বাচ্চার ওজন বৃদ্ধির খাবার - শিশুর ওজন কম হলে করনীয়

বাচ্চাদের ওজন বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলোর দিকে খেয়াল রাখতে হবে তবে এর মধ্যে বিশেষ করে খাবারের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। বাচ্চার ওজন বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত কয়েক রকমের ফল এবং আরো অন্যান্য স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়াতে হবে। বাচ্চার ছয় মাস বয়সের পর থেকেই কলা, মিষ্টি আলু, ডিম ইত্যাদি খাবার খেতে দেয়া উচিত। ছোট বাচ্চাদের ওজন বৃদ্ধির জন্য মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি সলিড খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে। যখনই সলিড খাবার খাওয়ানো যাবে তখন থেকেই বাচ্চার ওজন বৃদ্ধি পাবে।
বাচ্চার ওজন বৃদ্ধির খাবার
কলা: ছয় মাস বয়স হলেই ছোট বাচ্চা কলা খেতে পারে কলা খেলে খুব দ্রুত বাচ্চার ওজন বৃদ্ধি হয়। কলার মধ্যে রয়েছে পটাশিয়াম ভিটামিন সি কার্বোহাইড্রেট ও বিভিন্ন উপাদান। প্রতিদিন ছোট বাচ্চাকে একটা করে কলা খাওয়ালে বাচ্চার ওজন খুব সহজেই বৃদ্ধি পাবে।

মিষ্টি আলু: মিষ্টি আলুর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি, ফসফরাস ও পটাশিয়াম। মিষ্টি আলু একটি সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর খাবার। ছোট বাচ্চাদের জন্য মিষ্টি আলু অত্যন্ত উপকারী।
ডিম: ডিম আমিষ জাতীয় খাবার। বাচ্চারা আমিষ জাতীয় খাবার সবচাইতে বেশি পছন্দ করে। বাচ্চাকে প্রতিনিয়ত একটি করে ডিম খাওয়ালে বাচ্চার ওজন বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া ওজন বাড়ার পাশাপাশি ডিম খেলে প্রোটিনের চাহিদা ও পূরণ হয়। সিদ্ধ অথবা ভাজা দুই অবস্থায় ডিম বাচ্চাকে খাওয়ালে ওজন বাড়াতে ভূমিকা রাখবে।

শুকনো ফল: শুকনো ফলের মধ্যে রয়েছে খেজুর, কিসমিস, কাজুবাদাম, আখরোট ইত্যাদি প্রতিনিয়ত এই শুকনো ফল গুলো বাচ্চাকে খাওয়ানো শুরু করলে বাচ্চার ওজন এবং শারীরিক বৃদ্ধির উন্নতি ঘটে। খেজুর ও দুধ বাচ্চাকে একসাথে খাওয়ালে বাচ্চার মানসিক বিকাশের উন্নতি হয়। প্রতিনিয়ত বাচ্চাকে একমুঠো কিসমিস, কাজুবাদাম ও আখরোট খাওয়ালে বাচ্চার ওজন দ্রুত বৃদ্ধি হবে।

দুধ: দুধ খেলে বাচ্চার ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ হয়। প্রতিনিয়ত এক গ্লাস করে দুধ খাওয়ালে শিশুর স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে। দুধের মধ্যে রয়েছে প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট। শিশুর দৈহিক বিকাশ ঘটতে দুধ খাওয়া অত্যন্ত উপকারী। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় বাচ্চার জন্য এক গ্লাস দুধ অবশ্যই রাখতে হবে ওজন বৃদ্ধি এবং সুস্বাস্থ্যের জন্য।

বয়স অনুযায়ী মেয়ে বাচ্চার ওজন কত হওয়া উচিত

মেয়ে বাচ্চা নবজাতক অবস্থায় ৩.২ কেজি ওজন হওয়া উচিত। যদি এব কম ওজন হয়ে থাকে তবে বাচ্চার জন্য তা ক্ষতির কারন হতে পারে। ওজন নির্ভর করে বাচ্চার বয়স এবং উচ্চতার উপর। আমরা একটি চার্টের মাধ্যমে জানবো উচ্চতা এবং বয়স অনুযায়ী মেয়ে বাচ্চার ওজন কত হওয়া উচিত।
বয়সউচ্চতা ওজন
নবজাতক১ ফুট ৭ ইঞ্চি৩.২ কেজি
৩ মাস১ ফুট ১১ ইঞ্চি

৫.৫ কেজি

৬ মাস২ ফুট ৩.২ ইঞ্চি৭.২ কেজি
৯ মাস২ ফুট ৪ ইঞ্চি৮.৭ কেজি
১ বছর২ ফুট ৫.৬ ইঞ্চি৯.৪ কেজি
১ বছর ৬ মাস২ ফুট ৭.৫ ইঞ্চি১১.২৬ কেজি
২ বছর২ ফুট ৯.৩ ইঞ্চি১১.৯ কেজি
২ বছর ৬ মাস৩ ফুট১৩.৪৪ কেজি
৩ বছর৩ ফুট ১ ইঞ্চি১৪.২ কেজি
৩ বছর ৬ মাস৩ ফুট ২.৯ ইঞ্চি১৫ কেজি
৪ বছর৩ ফুট ৪ ইঞ্চি১৬.১ কেজি
৪ বছর ৬ মাস৩ ফুট ৫.৯ ইঞ্চি১৭.৫ কেজি
৫ বছর৩ ফুট ৬.৮ ইঞ্চি১৭.৮ কেজি
৫ বছর ৬ মাস৩ ফুট ৮.৫ ইঞ্চি১৮.৭ কেজি
৬ বছর৩ ফুট ৯.২ ইঞ্চি১৯.৬ কেজি
৭ বছর৩ ফুট ১১.৬২১.৭ কেজি
৮ বছর৪ ফুট ২ ইঞ্চি২৪.৯ কেজি
৯ বছর৪ ফুট ৪ ইঞ্চি২৮.৪ কেজি
১০ বছর৪ ফুট ৬.৫ ইঞ্চি৩২.৪ কেজি
১১ বছর৪ ফুট ৮ ইঞ্চি৩৩.৮ কেজি
১২ বছর৫ ফুট ১০.৪ ইঞ্চি৩৮.৬ কেজি

লেখকের মন্তব্য: বয়স অনুযায়ী বাচ্চার ওজন কত হওয়া উচিত - জন্মের সময় শিশুর ওজন কম হলে করনীয়

প্রিয় পাঠক, আশা করি বয়স অনুযায়ী বাচ্চার ওজন কত হওয়া উচিত এবং জন্মের সময় শিশুর ওজন কম হলে করনীয় সে সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। বাচ্চার ওজন কম বেশি হলে ভয় পাবার কোন কারণ নেই, নিদিষ্ট চিকিৎসা এবং খাবারের মাধ্যমে বাচ্চার ওজন স্বাভাবিক হওয়া সময়ের অপেক্ষা মাত্র। বাচ্চাকে ওজন বাড়াতে অতিরিক্ত কিছু খাওয়ানো থেকে বিরত থাকুন।

এতক্ষণ আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। এরকম তথ্যবহুল বা আপনার উপকারে আসে এমন আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন এবং কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত দিন। নিজে ভাল থাকুন, অন্যকে ভালো রাখুন। পৃথিবী হোক সুন্দরময়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অ্যামপ্লি ইনফোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url