পাকা আমে কোন এসিড থাকে - আমে কোন কোন ভিটামিন থাকে
প্রিয় পাঠক, পাকা আমে কোন এসিড থাকে এবং আমে কোন কোন ভিটামিন থাকে সে সম্পর্কে জানতে চেয়ে আর্টিকেলটিতে ক্লিক করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আশা করি পাকা আমে কোন এসিড থাকে, আমে কোন কোন ভিটামিন থাকে এবং পাকা আমের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারবেন।
আরো জানতে পারবেন, পাকে আমের পুষ্টিগুনসহ পাকা আমে কি কি ভিটামিন আছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।
ভূমিকা
ফলের রাজা আম। আম খেতে যেমন সুস্বাদু, এটি পুষ্টি গুনেও ভরপুর। আমের রসালো গুণের কারণে এটি সবার কাছে অনেক বেশি জনপ্রিয়। বাংলাদেশে আমের উৎপাদন অনেক বেশি হয়ে থাকে, যে কারণে এটি সহজলভ্য। আমে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, পটাশিয়াম, ফাইবার সহ অনেক উপাদান পাওয়া যায়।
আরো পড়ুনঃ লিচুর বিচি খেলে কি হয়
আম একটি গ্রীষ্মকালীন ফল। উত্তপ্ত গরমে আমাদের শরীরকে সচে রাখতে পাকা আমের বিকল্প নেই। গ্রীষ্মকালে যখন আমের মৌসুম শুরু হয়, তখন কম দামে অধিক মাত্রায় আম পাওয়া যায়। আমি অনেক প্রকারভেদ রয়েছে, যেমন ফজলি, ল্যাংড়া, আম্রপালি, হিমসাগর, কাটিমন এবং গোপাল ভোগ সহ নানা প্রজাতির আম।
পাকা আমে কোন এসিড থাকে
আমে অনেক এসিড বিদ্যমান। তার মধ্যে পাকা আমে সাইট্রিক এসিড এবং টারটারি এসিড অনেক বেশি থাকে। এছাড়া ও পাকা আমে ম্যলিক এসিড, টার্টারিক এসিড, স্যুকসিনিক এসিড এবং অ্যাসকরবিক এসিডের উপস্থিতি পাওয়া যায়। চলুন জেনে নেই পাকা আমে থাকা এসিড সম্পর্কে বিস্তারিত-
সাইট্রিক এসিড: সাইট্রিক এসিডের কারণে আম টক স্বাদের হয়ে থাকে। সাইট্রিক এসিড আমের রং ও স্বাদের ভারসাম্য ধরে রাখে। এছাড়া এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুনাবলী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
টার্টারিক এসিড: আমে টার্টারিক এসিড থাকার কারণে আম তেতো ভাব হয়। টার্টারিক এসিড আমাদের দাঁতের যত্নে বেশ উপকারী।
আরো পড়ুনঃ কমলা খেলে কি গ্যাস্ট্রিক হয়
ম্যালিক এসিড: ম্যালিক এসিড এর প্রভাবে আম টক হয়ে থাকে। এছাড়াও ম্যালিক এসিড আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং পেটে গ্যাস কমাতে সহায়তা করে।
অ্যাসকরবিক এসিড: অ্যাসকরবিক এসিড আমের ভিটামিন এসিড নামে পরিচিত। ভিটামিন সি আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, আমাদের ত্বকে উজ্জ্বলতা প্রদান করে এবং ক্যান্সারের মত অসুখ থেকে রক্ষা করেন।
স্যুকসিনিক এসিড: স্যুকসিনিক এসিড আমি থাকার কারণে আম মিষ্টি হয়। স্যুকসিনিক এসিড আমাদের শরীরে শক্তি সঞ্চরণ করতে সহায়তা করে।
আমে কোন কোন ভিটামিন থাকে - পাকা আমে কি কি ভিটামিন আছে - পাকা আমের পুষ্টিগুণ
গ্রীষ্মকালে আম আমাদের খাদ্য তালিকার অন্তরভূক্ত হয়ে যায়। আম স্বাস্থ্যকর খাবার হওয়ার পাশাপাশি আমে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন থাকে। আমে ভিটামিন এ থেকে ভিটামিন কে পর্যন্ত সব ভিটামিনের উপস্থিতি পাওয়া যায়। যা আমাদের স্বাস্থ্য উন্নতিতে কাজ করে এবং মেধা বিকাশে সাহায্য করে। চলুন জেনে নেই আমে কোন কোন ভিটামিন থাকে-
ভিটামিন এ: আমে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ থাকে। যা আমাদের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে, ত্বকে উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আমে প্রায় ২৭৪০ মাইক্রগ্রাম ভিটামিন এ থাকে, যা আমাদের দৈনিক খাদ্য চাহিদার ২০ শতাংশ পূর্ণ করে।
আরো পড়ুনঃ কাঁচা রসুন খেলে কি ক্ষতি হয়
ভিটামিন বি: থায়ামিন (বি১), রিবোফ্লাভিন (বি২), নায়াসিন (বি৩), প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড (বি৫), পাইরিডক্সিন (বি৬), ফোলেট (বি৯) এবং কোবালমিন (বি১২)। আমে থাকা এই ভিটামিন-বি এ উপাদান গুলো আমাদের শরীরের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করার সাথে সাথে আমাদের স্বাস্থ্য উন্নতি তে ভূমিক রাখে।
ভিটামিন সি: আমে ভিটামিন সি এর পুষ্টিকর উপাদান আমাদের রোগের হাত থেকে রক্ষা করে। ত্বক ভালো রাখে এবং কোলাজেন তৈরীতে কাজ করে। প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আমে ৩৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে। যা আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য চাহিদার ৪০ শতাংশ পূর্ন করে।
ভিটামিন ই: আমে থাকা ভিটামিন ই আমাদের শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। শরীরে থাকা কোষ গুলোকে ক্ষতি হওয়া থেকে রক্ষা করে। ত্বকের উন্নতিতে ভূমিকা রাখে এবং প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আমে প্রায় ১.৭০ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই থাকে।
ভিটামিন কে: পাকা আমে অধিক পরিমানে ভিটামিন কে থাকে। পাকা আমে বিদ্যমান ভিটামিন কে আমাদের হাড় ভালো রাখতে সাহায্য করে। রক্ত জমাট বাধতে সাহায্য করে। প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আমে প্রায় ৫.৫ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন কে থাকে।
শিশুদের আম খাওয়ার উপকারিতা
শিশুদের আম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারি। আম খেলে শিশুদের নানা ধরনের ভিটামিন এবং পুষ্টি চাহিদা পূর্ন হয়। এটি শিশুদের মেধা বিকাশে কাজ করে। রাসালো এবং মিষ্টি জাতীয় ফল হওয়াতে পাকা আম শিশুরা বেশি পছন্দ করে। চলুন জেনে নেই শিশিদের আম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে-
আমে অনেক পরিমানে ভিটামিন এ, সি এবং ই পাওয়া যায়। ভিটামিন-এ শিশুদের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে, ভিটামিন-সি শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে এবং ভিটামিন-ই শিশুদের ত্বক কোমল রাখতে সাহায্য করে। শিশুদের এর্লাজি থাকলে, আম খাওয়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
আরো পড়ুনঃ সুষম খাদ্য তালিকা
ছোট বাচ্চাদের পায়খানা অনেক শক্ত হয়। এর সমাধানে বাচ্চাকে আম খাওয়ানো উচিত। করণ আমে ফাইবার পাওয়া যায়, যা বাচ্চাদে হজম বৃদ্ধি করে পায়খানা নরম করে এবং পায়খানা স্বাভাবিক করে সহায়ক। তবে ১ বছরের ছোট শিশুদের আম খাওয়ানোর ক্ষেত্রে সর্তক হওয়া উচিত কারণ ছোট বাচ্চাদের হজম প্রক্রিয়া শক্তিশালি হয় না।
শিশুদের মেধা বিকাশ আম খাওয়ানো যেতে পারে। কারণ পাকা আমে রয়েছে ভিটামিন-বি৬ এবং ফলেট, যা শিশুদের মেধা বিকাশে কাজ করে। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং মনোযোগ বৃদ্ধি করতে সহায়ক পাকা আম।
বাচ্চাদের শক্তি বৃদ্ধিতে পাকা আমের বিকল্প খারার খুব কমই আছে। আমে অধিক পরিমানে কার্বোহাইড্রেট থাকে, যা শিশুদের শরীরে শক্তি যোগাতে সাহায্য করে। ছোট শিশুদের অতিরিক্ত আম খাওয়াবেন না এতে শিশুদের ওজন বৃদ্ধি সহ পেট খারাপ হতে পারে।
আমে থাকা ভিটামিন-সি এর প্রভাবে শিশুদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি পূর্ণ হওয়ার পাশাপাশি তাদের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালি করে এবং বিভিন্ন রোগের হাত থেকে বাচ্চাদের রক্ষা করে।
পাকা আমের অপকারিতা
আম খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য উপকারী এবং এটি অনেকটা স্বাস্থ্যসম্মত। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে পাকা আমাদের জন্য অপকারিতা বয়ে আনে। যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির কারন হয়ে থাকে। নিম্নে পাকা আমের অপকারিতা সম্পর্ক বলা হলো-
পাকা আমে স্বাভাবিকের তুলনায় একটু বেশি গ্লাইসেমিক ইনডেক্স থাকে। অতিরিক্ত আম খাওয়ার ফলে আমাদের রক্তে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বেড়ে যায়। যা ডায়াবেটিকস রোগীদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় নাশপাতি খাওয়ার উপকারিতা
পাকা আম অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়, যার কারনে আমাদের শরীর অনেক বেশি ঘেমে যায়। যা শরীরের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়া। বিশেষ করে গরম আবহাওয়ায় এটি বেশি হয়ে থাকে।
পাকা আমে প্রাকৃতিক চিনি বেশি থাকার কারণেে এটি অনেকটা মিষ্টি হয়ে থাকে। অতিরিক্ত মিষ্টি আমাদের দাঁত ও শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
বাজারে পাওয়া আমগুলো মধ্যে বেশির ভাগ আম পাকাতে এবং দীর্ঘ সময় ধরে সংরক্ষন করতে প্রিজারভেটিভ বা রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয়। যা আমাদের স্বাস্থ্য উন্নতিতে বাধা প্রদান করে।
কিডনি রোগে আক্রান্ত রুগীদের পাকা আম খাওয়ার ক্ষেত্রে সর্তক থাকা উচিত। কারণ পাকা আমে অক্সালেট রয়েছে। যা কিডনি সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।
গর্ভাবস্থায় আম খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভবতী মা ও গর্ভে থাকা শিশুর জন্য আম খাওয়া উপকারি তো বটেই এটি গর্ভবতী মাকে স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ও শিশুকে বড় করতে ভূমিকা রাখে। গর্ভাবস্থায় আপ খাওয়ার আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে নিম্নে আলোচনা করা হলো-
- আমে ফোলেট বা ভিটামিন-বি৯ রয়েছে, যা ভ্রূণের সঠিক বিকাশে কাজ করে এবং নিউরাল টিউব ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে।
- আমে রয়েছে ভিটামিন-এ, যা গর্ভে থাকা শিশুর চোখ বিকাশে এবং গর্ভবতী মায়ের দৃষ্টিশক্তি ধরে রাখে।
- মায়ের নার্ভের কার্যক্রম ও পেশী শক্তি ধরে রাখতে পটাশিয়ামের প্রয়োজন। আমে অনেক পটাশিয়ামের উপস্থিতি পাওয়া যায়। যা নার্ভের কার্যক্রম ও পেশি শক্তি বজায় রাখতে সঠিক ভাবে কাজ করে।
- গর্ভবতী মা আম খাওয়ার ফলে তার শরীরে লোহিত রক্তকণিকা উৎপন্ন হয়। যা একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য অনেক বেশি প্রয়োজন।
- রক্তে আয়রনের মাত্রা বজায় রাখতে আম খাওয়া উপকারি। কারণ আমে প্রচর পরিমানে আয়রন পাওয়া যায়।
আম খাওয়ার নিয়ম
আম খাওয়া স্বাস্থ্য উপযোগী কিন্তু পরিমিত বা সঠিক নিয়ম মেনে না খেলে আমাদের স্বাস্থ্য ঝুকির সম্ভাবনা রয়েছে। আমদের সকলের উচিত নিয়ম মেনে এবং পরিমানমত আম খাওয়া। নিম্নে আম খাওয়ার সঠিক নিয়ম বলা হলো-
- বদহজম এড়াতে অপরিপক্ক আম পরিহার করুন।
- আম খাওয়ার আগে আম ভালো করে ধুয়ে নিন।
- দিনে ২ থেকে ৩ টি আমের বেশি খাওয়া উচিত নয়।
- ফরমালিনযুক্ত আম এড়িয়ে চলুন।
- বাজার থেকে আম কেনার সময় স্বাদ ও গন্ধ ঠিক আছে কিনা তা দেখুন।
- অধিক পাকা আম বা তেলতেলে আম খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- মাত্রাতিরিক্ত আম খাবেন না।
- খালি পেটে আম না খাওয়াই ভালো বরং খাবার পর খাওয়া উচিত।
- সব সময় দিনের বেলা আম খাওয়ার চেষ্টা করুন। রাতে আম কম হজম হয়।
- সকালে নাস্তার সাথে বা বিকালে আম খাওয়া উত্তম।
- আম সব সময় ঠান্ডা জায়গায় সংরক্ষন করুন।
- আম কেটে রেখে দীর্ঘ সময় পর খাওয়া এড়িয়ে চলুন। তবে কেটে ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে পারেন।
লেখকের মন্তব্য: পাকা আমে কোন এসিড থাকে - আমে কোন কোন ভিটামিন থাকে
প্রিয় পাঠক, আশা করি এতক্ষনে পাকা আমে কোন এসিড থাকে ও আমে কোন কোন ভিটামিন থাকে এবং শিশুদের আম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনেছেন। এছাড়া আম খাওয়ার নিয়ম এবং গর্ভাবস্থায় আম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। আম খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য যেমন উপকারি ঠিক তেমনি মাত্রাতিরিক্ত আম খাওয়া আমাদের ক্ষতির কারণ। ১ বছরের নিচে বাচ্চাদের ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া আম খাওয়ানো উচিত নয়।
এতক্ষণ আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। এরকম তথ্যবহুল বা আপনার উপকারে আসে এমন আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন এবং কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত দিন। নিজে ভাল থাকুন, অন্যকে ভালো রাখুন। পৃথিবী হোক সুন্দরময়।
অ্যামপ্লি ইনফোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url