কাঁচা ছোলা খেলে কি ওজন কমে যায় জানুন ১০টি উপায়
জানতে চান? কাঁচা ছোলা খেলে কি ওজন কমে? আবার সিদ্ধ ছোলা খেলে কি হয়? আপনি ঠিক আর্টিকেলটিতে ক্লিক করছেন। যেখানে জানতে পারবেন কাঁচা ছোলা খেলে কি ওজন কমে নাকি কমে না। কাঁচা ছোলা খেলে কি গ্যাস হয় নাকি হজমে উন্নতি হয়। আবার সিদ্ধ ছোলা খেলে কি হয় এবং কাঁচা ছোলা খেলে কি মোটা হওয়া যায় সে বিষয়ে বিস্তারিত।
মনোযোগ সহকারে সমস্ত আর্টিকেলটি পড়ুন, আশা করি কাঁচা ছোলা খেলে কি ওজন কমে এই বিষয় সহ ছোলা বিষয়ে নানা উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে পারবেন।
ভূমিক
ছোলা বা চানা যার বৈজ্ঞানিক নাম Cicer arietinum। ছোলা সাধারণত ২ ধরনের হয়ে থাকে। ছোট ও বাদামী রঙ্গের যে ছোলা সেটি দেশী ছোলা এবং আকারে অনেকটা বড় ও ফেকাসে রঙ্গের ছোলাকে কাবলি ছোলা বলে। ছোলা বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশে চাষ হয়ে থাকে এবং এটি আমাদের প্রতিদিনের খাবারের অংশ হিসেবে পরিচিত।
আরো পড়ুনঃ হানি নাটস খেলে কি হয়
ইসলাম ধর্মানুসারিদের রমজান মাসে ছোলা ছাড়া ইফতারে কিছুটা অপূর্নতা রয়ে যায়। ছোলা খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি এতে রয়েছে আমাদের শরীর উপযুগী নানা রকমের পুষ্টি। যা আমাদের শক্তি যোগানোর পাশাপাশি বিভিন্ন রোগ নিরাময় করতে সাহায্য করে। সমস্ত আর্টিকেলটি পড়ুন ছোলার উপকারিতা বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে পারবেন।
কাঁচা ছোলা খেলে কি ওজন কমে
কাঁচা ছোলা আমাদের স্বাস্থ্য অনুযায়ী পরিমান করে খেলে আমাদের ওজন কমার সম্ভাবনা রয়েছে আবার পরিমানের চেয়ে বেশি খেলে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা ও রয়েছে। তবে রান্না করা ছোলার থেকে কাঁচা ছোলাতে ক্যালোরি অনেক পরিমানে থাকে। চলুন জেনে নেই কাঁচা ছোলা খেলে ওজন কমার কিছু কারণ সম্পর্কে-
দীর্ঘ সময় ধরে না খেয়ে নিজেকে পূর্ন রাখার জন্য কাঁচা ছোলা খেতে পারেন। কারণ কাঁচা ছোলাতে রয়েছে অনেক পরিমানে ফাইবার। ফাইবার সাধারণত আমাদের হজম প্রক্রিয়া ধীরগতিতে করে এবং আমাদের দীর্ঘ সময় ধরে না খেয়ে থাকতে সাহায্য করে। দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার কারণে আমাদের শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি প্রবেশ না করাতে আমাদের ওজন কমতে পারে।
আমাদের দৈহিক চাহিদা পূরণে মেটাবলিজম প্রয়োজন এবং সুস্থ্য সুন্দর জীবন যাপনে আমাদের ওজন কমিয়ে ফিট থাকা প্রয়োজন। এই দুই সমস্যার এক সমাধান নিয়মিত কাঁচা ছোলা খাওয়া। কাঁচা ছোলাতে স্বাস্থ্য উপযোগী ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। যা আমাদের দৈহিক মেটাবলিজম বাড়াতে এবং আমারে ফ্যাট কমিয়ে ফিট রাখে।
আমাদের ওজন কমাতে বাহিরের তৈরী খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত এবং এর বিকল্প হিসেবে কাঁচা ছোলা খাওয়া যেতে পারে। কারণ কাঁচা ছোলাতে রয়েছে অধিক মাত্রায় প্রোটিন। যা আমাদের ক্ষুধা কমানোর পাশাপাশি আমাদের শারীরিক গঠনে কাজ করে। কাঁচা ছোলাতে থাকা প্রোটিন দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে। যার কারণে আমরা বাহিরের খাবার থেকে বিরত থাকতে পারি।
সিদ্ধ ছোলা খেলে কি হয়
ছোলা কাঁচা হোক বা সিদ্ধ দুই ভাবে খাওয়াই স্বাস্থ্যের জন্য উপকরি। তবে সিদ্ধ ছোলার থেকে কাঁচা ছোলাতে ক্যালোরি বেশি থাকে। আপনার শরীরে কম ক্যালোরি প্রয়োজন হলে সিদ্ধ ছোলা এবং বেশি ক্যালোরি প্রয়োজন হলে কাঁচা ছোলা খেতে পারেন। চলুন জেনে নেই সিদ্ধ ছোলা খেলে কি উপকারিতা পাওয়া যায়-
- সিদ্ধ ছোলা খেলে এতে থাকা ভিটামিন ও মিনারেল রোগের সংক্রামন এড়াতে সাহায্য করে।
- সিদ্ধ ছোলা আঁশ জাতীয় খাবার হওয়াতে এটি খেলে আমাদের হজম ভালা হয় এবং পায়খানা স্বাভাবিক হয়।
- সিদ্ধ ছোলা ওজন কমাতে কার্যকারি কারণ এতে ক্যালোরি কম থাকে এবং পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে।
- সিদ্ধ ছোলা রক্তের শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক রাখে, যা ডায়েবিটিস রোগীদের জন্য বেশ উপকারি।
- সিদ্ধ ছোলাতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
- সিদ্ধ ছোলা আমাদের শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল গুলো দূর করে স্বাস্থ্য অবস্থার উপর ভিত্তি করে ভালো কোলেস্টেরল বাড়াতে ভূমিক রাখে।
- সিদ্ধ ছোলা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে বেশ কার্যকারি একটি খাবার।
- সিদ্ধ ছোলাতে থাকা প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট আমাদের শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়ক।
- সিদ্ধ ছোলাতে থাকে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ও মিনারেল, যা আমাদের ত্বকের জন্য উপকারি।
কাঁচা ছোলা খেলে কি গ্যাস হয়
কাঁচ ছোলা খেলে গ্যাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে কাঁচা পানিতে ভিজিয়ে না রেখে খেলে গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। ছোলার সাথে তেল বা চর্বি খাবার খেলে ও পেটে গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। এছাড়া ও নানা কারণে গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। নিম্নে আরো কিছু গ্যাস হওয়ার করণ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
মানব দেহে যে হজম এনজাইম রয়েছে তা ছোলাতে থাকা অলিগোস্যাকারাইড কার্বোহাইড্রেটকে হজম করতে দীর্ঘ সময় নেয়। যার কারনে এই কার্বোহাইড্রেট আমাদের পেটে অনেক সময় ধরে জমা থাকার কারনে বিভিন্ন ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি করে। এ জন্যই কাঁচা ছোলা খেলে আমাদের পেটে গ্যসের সমস্যা হতে পারে।
কাঁচা ছোলা যদি ভালো ভাবে না ধুয়ে খাওয়া হয়, এতে থাকা স্টার্চ বা ক্ষতিকর ক্যামিকেলের কারণে আমাদের পেটে গ্যাস দেখা দিতে পারে। অনেকে আবার ছোলা ভেজানো পানি ও খেয়ে থাকেন। এই করনে ও গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। কাজেই কাঁচা ছোলা খাওয়ার আগে ভালো ভাবে ধুয়ে নিন এবং ছোলা ভেজানো পানি এড়িয়ে চলুন।
কাঁচা ছোলাতে থাকা ফাইবারের কারনে আমাদের পেটে গ্যাস হতে পারে। কাঁচা ছোলাতে থাকা অসংখ্য ফাইবার যা হজম হয় না বা হজম হতে অনেক সময় নেয়। এজন্য আমাদের পাকস্থলীতে ব্যাকটেরিয়া গুলো বাসা বাধে এবং এর পরিমান বাড়ার সাথে সাথে পেটে গ্যাসের সমস্যা, পেট ফোলা এবং পেটে ব্যথা অনুভব হতে পারে।
কাঁচা ছোলাতে আমাদের পেটে প্রদহের সৃষ্টি করে এমন একধরনের লেক্টিন নামক প্রোটিন থাকে যা আমাদের পেটে প্রদাহ ও গ্রাস বৃদ্ধি করে। কাঁচা ছোলা অভস্ত্য না হলেও পেটে গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। একদিনে অধিক পরিমানে বা না চিবিয়ে কাঁচা ছোলা খাওয়ার কারনে ও পেটে গ্যাস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
কাঁচা ছোলা বুটের উপকারিতা কি
ছোলা বুট কাঁচা হোক বা সিদ্ধ এর পুষ্টিগুন নষ্ট হয় না বরং বৃদ্ধি পায়। কাঁচা ছোলা বুটের নানা স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে যা আমাদের শারীরিক উন্নতিতে সাহায্য করে। নিম্নে কাঁচা ছোলা বুটের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
- হাড় ভালো রাখতে কাঁচা ছোলা বুট খাওয়া যেতে পারে। এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম যা হাড়কে প্রয়োজনীয় পুষ্টিযুগিয়ে হাড় ভালো রাখে এবং হাড় শক্তিশালী করে তোলে।
- বার্ধক্য এড়াতে এবং ত্বক ভালো রাখতে কাঁচা ছোলা বুট এক অপরিহার্য খাবার। এত থাকা ভিটামিন ও মিনারেল আমাদের ত্বক ভালো রাখে এবং বয়সের ছাপ এড়াতে সাহায্য করে।
- কাঁচা ছোলা বুট রক্তশূনতা রোধে কার্যকারি। কাঁচা ছোলা বুটে প্রচুর পরিমানে আয়রন থাকে। যা আমাদের রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়িতে তোলে যার কারণে রক্তশূনতার ঘাটতি পূরন হয়।
- হাত পা জ্বালাপোড়া রোধে কাঁচা ছোলাবুট বেশ কাজ করে। করণ কাঁচা ছোলা বুটে রয়েছে সালফার। যা হাত পা জ্বালাপোড়া থেকে বাঁচায় এবং আমাদের মস্তিস্ক ঠান্ডা রাখে।
- কাঁচা ছোলা বুট পানিতে দীর্ঘ সময় ভিজিয়ে খাওয়ার ফলে আমাদের আমাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং মনোযোগ বেড়ে যায়।
- চুল পড়া রোধে আমরা ভেজা ছোলা বুট খেতে পারি। কারণ ভেজা ছোলা বুটে জিঙ্ক, ভিটামিন-এ, ম্যাঙ্গানিজ এবং ভিটামিন-বি৬ প্রচুর পরিমানে থাকে যা চুল পড়া রোধের পাশাপাশি চুতে অকালে পেকে যাওয়াতে বাধা প্রদান করে।
- স্তন্যদানকারী মায়েরা দুগ্ধ বেশি হওয়ার জন্য ছোলা খেতে পারেন।
কাঁচা ছোলা খেলে কি মোটা হওয়া যায়
কাঁচা ছোলা খেলে সাধারণত মোটা হওয়া যায় না। কাঁচা ছোলা খেলে মোটা হওয়া অনেক গুলো বিষয়ের উপর নির্ভর করে। ছোলা একটি স্বাস্থ্যসম্মত খাবার, যাতে অধিক পরিমানে ভিটামিন, প্রোটিন, ফাইবার এবং মিনারেলের উপস্থিতি পাওয়া যায়। কাঁচা ছোলা কি পরিমান খাচ্ছেন, কোন খাবারের সাথে খাচ্ছেন এই বিষয় গুলোর উপর নির্ভ করে মোটা হওয়া বা স্বাস্থ্য স্বাভাবিক থাকা। মোটা না হওয়ার কারণসমূহ-
কাঁচা ছোলাতে অতি পরিমিত ক্যালোরি রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁচা ছোলাতে ৮৫ থেকে ৯০ ক্যালোরি বিদ্যমান থাকে। যা স্বাভাবিক মাত্রায় খেলে মোটা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কিন্তু পরিমানে বেশি খেলে ওজন বাড়তে পারে।
কাঁচা ছোলা উচ্চ প্রোটিন সম্পূর্ন হয়ে থাকে। নিয়মিত কাঁচা ছোলা খেলে অতিরিক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকি। কারন এতে থাকা প্রোটিন আমাদের দীর্ঘ সময় ধরে পূর্নতা প্রদান করে এবং ক্ষুধা লাগার প্রবণতা কমিয়ে দেয়। দীর্ঘ সময় কাজ করার শক্তি যোগায়।
অধিক ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার হলো কাঁচা ছোলা। কাঁচা ছোলা পরিমিত খেলে এতে থাকা ফাইবার আমাদের হজমশক্তি ধীরগতিতে কাজ করে এবং আমাদের রক্তে থাকা শর্করার মাত্রা কমিয়ে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
কাঁচা ছোলা খেলে মোটা হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই কম। কারণ কাঁচা ছোলা সাধারণত কম ফ্যাট বিশিষ্ট একটি খাবার। তাই আমরা যদি কাঁচা ছোলা প্রতিদিন পরিমান মত খাই আমাদের ওজন বাড়বে না ববং কমবে।
লেখকের মন্তব্য: কাঁচা ছোলা খেলে কি ওজন কমে - সিদ্ধ ছোলা খেলে কি হয়
প্রিয় পাঠক, আশা করি কাঁচা ছোলা খেলে কি ওজন কমে তা জেনেছেন এবং সিদ্ধ ছোলা খেলে কি হয় সে বিষয়ে ও অবগত হয়েছেন। উপরিউক্ত নিয়মগুলো অনুসরণ করে ছোলা খাওয়ার চেষ্টা করুন। অতিরিক্ত মাত্রায় ছোলা খাবেন না এবং খাওয়ার আগে অবশ্যই ছোলা ভালো ভাবে ধুয়ে নিবেন, যাতে ক্ষতিকর ময়লাা বা ক্যামিকেল বের হয়ে যায়।
এতক্ষণ আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। এরকম তথ্যবহুল বা আপনার উপকারে আসে এমন আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন এবং কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত দিন। নিজে ভাল থাকুন, অন্যকে ভালো রাখুন। পৃথিবী হোক সুন্দরময়।
অ্যামপ্লি ইনফোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url