বাচ্চাদের জন্য ঘি এর উপকারিতা - রাতে ঘি খেলে কি হয়
প্রিয় পাঠক, বাচ্চাদের জন্য ঘি এর উপকারিতা এবং রাতে ঘি খেলে কি হয় এ বিষয়ে অবগত নন বলেই আর্টিকেলটিতে ক্লিক করেছেন। আমি আপনাদের জানাবো বাচ্চাদের জন্য ঘি এর উপকারিতা এবং রাতে ঘি খেলে কি হয় এবং ঘি খাওয়ার উপযুক্ত সময় সহ প্রতিদিন ঘি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।
সমস্ত আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন আশা করি বাচ্চাদের জন্য ঘি এর উপকারিতা সহ ঘি বিষয়ে যাবতীয় সকল কিছু জানতে পারবেন।
ভূমিকা
দুধ থেকে তৈরী অনন্য স্বাদের একটি খাবার ঘি। দুধ র্দীঘ সময় জাল দেওয়ার পর আমরা এই উপাদানটি পেয়ে থাকি। হিন্দুদের নিকট ঘি একটি অমৃত খাবার। ঘি সাধারণত রান্নাসহ নানা ঔষধি কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ঘি এর বাদামী রং এবং এর সুস্বাদু স্বাদের কারণে সব বয়সী মানুষের কাছে অতি জনপ্রিয় একটি খাবার।
বাচ্চাদের জন্য ঘি এর উপকারিতা
শিশুদের স্বাস্থ্য বিকাশে ঘি অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাবার। যা বাচ্চাদের শারীরিক ও মানসিক উন্নতিতে সহায়তা করে। এতে থাকা প্রয়োজনীয় ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর কারনে বাচ্চারা সুস্থ্য জীবন-যাপন করতে পারে। চলুন জেনে নেই বাচ্চাদের জন্য ঘি এর উপকার সম্পর্কে বিস্তারিত-
সব বয়সের মানুষের মধ্য বাচ্চাদের হজম প্রক্রিয়াতে বেশি সমস্যা হয়ে থাকে। বাচ্চাদের নিয়মিত পরিমান মত ঘি খাওয়ালে এতে থাকা বাটিরিক অ্যাসিডের কারণে বাচ্চাদের হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকে। যার কারনে বাচ্চারা কোষ্ঠকাঠিণ্য থেকে মুক্তি পায়।
বাচ্চাদের নানা ধরনের সংক্রামন এড়াতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ঘি খাওয়ানো যেতে পারে। ঘিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বাচ্চাদের ইমিউন সিস্টেমকে ভালো রেখে রোগ ক্ষমতা বাড়ায় এবং বিভিন্ন সংক্রামন রোধে কাজ করে। ঘি সাধারণত বাচ্চাদের সর্দি, কাশি, ঠান্ডা লাগা ও পেটের সমস্যা দূর করতে সহায়ক।
হাড়ের স্বাভাবিক গঠন ও হাড় শক্তিশালী করতে বাচ্চাদের ঘি খাওয়ানো যেতে পারে। কারণ ঘিতে রয়েছে ভিটামিন ডি। আর আমরা সকলেই জানি ভিটামিন ডি হাড়ের গঠন ভালো করতে এবং হাড় শক্তিশালী করতে কাজ করে।
আরো পড়ুনঃ বাচ্চাদের কমলা খাওয়ার উপকারিতা
ঘিতে থাকা ওমেগা ৩ ফ্যাটি বাচ্চাদের মানসিক বিকাশে কাজ করে এবং মস্তিস্কে থাকা কোষগুলোকে কার্যকারি করে তোলে এবং মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া ও ঘিতে অধিক পরিমানে ক্যালোরি পাওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি এমন ধরনের ফ্যাট পাওয়া যায় যা বাচ্চাদের বেড়ে উঠতে সাহায্য করে।
ঘিতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-ই এবং ভিটামিন কে পাওয়া যায়। যা বাচ্চাদের দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখে, ত্বকের শুষ্কতা দূর করে ত্বকে ময়েশ্চারাইজ প্রদান করে।
রাতে ঘি খেলে কি হয়
ঘি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারি একটি খাবার। তবে রাতে ঘি খেলে আমাদের যেমন উপকার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ঠিক তেমনি কিছু অসুবিধা ও রয়েছে। চলুন জেনে নেয়া যাক রাতে ঘি খাওয়ার ফলে আমাদের কি কি উপকার এবং ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে-
উপকারিতা:
- রাতে ঘি খেলে আমাদের ঘুম ভালো হয়। কারণ ঘিতে থাকা ল্যাকটিক অ্যাসিড ও ট্রাইপ্টোফ্যান নামক একধরনের উপাদান মেলাটোনিন হরমনকে কমাতে সাহায্য করে। যার কারনে আমাদের ঘুম অনেক ভালো হয়।
- ঘিতে থাকা পুষ্টিকর উপাদান আমাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রনে রাখে যার কারনে আমাদের সর্দি, কাশি বা ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা খুব কম থাকে।
- ঘি আমাদের শরীর থেকে বিভিন্ন ক্ষতিকর টক্সিন দূর করতে সক্ষম। শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন বের করে লিভার ভালো রাখে এবং আমাদের রক্ত পরিষ্কার রাখে।
- রাতে ঘি খাওয়ার ফলে আমাদের বিভিন্ন অঙ্গের ব্যথা কমাতে বেশ উপকারি কারণ ঘিতে রয়েছে ওমেগা ৩ ফ্যাটি ও বিভিন্ন ব্যথানিধন কারী উপাদান। যার কারনে বিভিন্ন ব্যথা সেরে যেতে ঘি ভালো কাজ করে। এবং এতে থাকা ভিটামিন কে-২ হাড় শক্তিশালী করে তোলে।
- রাতে ঘি খেলে আমাদের সারাদিনের পরিশ্রমের ফলে শরীরে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানে যে ঘাটতি হয় তা পূর্ন করে। কারণ ঘি তে ভিটামিন, খনিজ সহ নানা ঘাটতি পূর্ন কারী উপাদান রয়েছে।
অপকারিতা:
- রাতে অতিরিক্ত মাত্রায় ঘি খেলে ওজন বেড়ে যেতে পারে।
- রাতে ঘি খাওয়ার ফলে পেটে গ্যাস বা অ্যাসিডিটির সমস্যা হতে পারে।
- পরিমানে চেয়ে বেশি খেলে হজমে সমস্যা হতে পারে।
ঘি এর ক্ষতিকর দিক
অপরিমিত ঘি খাওয়াতে আমাদের শরীরে নানা সমস্যা দেখা দেয়। ঘি এর পুষ্টিগুন সঠিক মাত্রায় পেতে ঘি খাওয়া বিষয়ে অতিরিক্ত বা অপরিমিত গ্রহনে সজাগ থাকতে হবে। চলুন জেনে নেই ঘি এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে-
- হৃদরোগীদের ঘি খাওয়া সংযম করা উচিত। কারণ ঘিতে থাকা স্যাচুরেটেড ফ্যাট হৃদরোগীদের কোলেস্টেরলের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়, যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
- মাত্রাতিরিক্ত ঘি খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে ক্ষতিকর বর্জ্যের পরিমান বেড়ে যায় এবং আমরা কিডনি সমস্যা বা পিত্তথলির সমস্যায় ভূগতে পারি।
- অতিরিক্ত ঘি খেলে আমাদের ওজন বেড়ে যেতে পারে। কারণ ঘিতে প্রচুর পরিমানে ফ্যাট থাকে, যা পরিমানের চেয়ে বেশি খেলে পেট বেড়ে যাওয়া এবং ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে।
- ঘি অনেক বেশি পরিমানে খেলে আমাদের হজম প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি হয়। যার কারণে হজমে সমস্যা সহ, পেট ফাঁপা বা গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয়।
- ঘি খাওয়ার ফলে উচ্চ রক্তচাপ বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। যার কারণে আমাদের হার্ট বা ব্রেন স্টোক সহ দেহের অন্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে।
- ডায়াবেটিস রুগীদের ঘি এড়িয়ে চলা উচিত। অতিরিক্ত ঘি খাওয়ার কারণে ডায়াবেটিস বেড়ে যেতে পারে। খেলেও ডাক্তারের পরামর্শ বা পরিমিত খাওয়া উচিত।
- অনেকের দুধে অ্যালার্জি থাকে, সেই সূত্রে তাদের ঘি না খাওয়াই উত্তম। ঘি খাওয়ার ফলে অ্যালার্জির সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। হাত পা ফুলে যাওয়া সহ নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন।
ঘি খেলে কি মোটা হয়
পরিমান মত ঘি খেলে ওজন বাড়া বা মোটা হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই নেই। তবে ঘি তে উচ্চমাত্রায় ক্যালোরি ও চর্বি রয়েছে। অধিক মাত্রায় খেলে ওজন বেড়ে যায়। স্বাভাবিক মাত্রায় ঘি খাওয়ার সাথে মোটা হওয়ার কোন সম্পর্ক নেই। দিনে কি পরিমান খাচ্ছেন খাওয়ার আগে বা পরে কোন ধরনের খাবার খাচ্ছেন তার উপর নির্ভর করে।
প্রতি এক চা চামচে প্রায় ১১০ ক্যালোরি থাকে। এটি যদি আপনি অল্প পরিমান গ্রহন করেন তাহলে ওজন বাড়বে না বরং ওজন কমাতে সাহায্য করবে। আপনার ওজন যদি আপনার হাইটের তুলনায় বেশি হয়ে থাকে তাহলে ঘি না খাওয়াই ভালো বা অল্প পরিমানে খেতে পারেন। ওজন বেশি অবস্থায় ঘি খেলে ওজন বাড়ার সাথে মোটা হয়ে যাবেন।
আরো পড়ুনঃ বাচ্চাদের আপেল খাওয়ার নিয়ম
প্রতিদিন সুষম খাবার খাওয়া, শারীরিক পরিশ্রমের পাশাপাশি ঘি খেলে ওজন বাড়া বা মোটা হওয়ার কোন সম্ভবনা নেই। আপনি নিয়মিত ব্যায়াম করার আগে বা পরে ঘি খেলে মোটা হওয়ার থেকে বিরত থাকতে পারবেন। ঘি তে স্যাচুরেটেড ফ্যাট অধিক পরিমানে রয়েছে। যা কারণে পরিমিত না খেলে শরীরে ফ্যাট জমে মোটা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ঘি খাওয়ার উপযুক্ত সময়
ঘিয়ের পুষ্টিগুন সম্পর্কে আমাদের সকলেরই জানা। কিন্তু এই ঘি খাওয়ার কিছু নিয়ম বা উপযুক্ত সময় রয়েছে, যে নিয়ম বা সময়ে ঘি খেলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। চলুন জেনে নেই কোন সময়ে কি পরিমান ঘি খেলে আমাদের স্বাস্থ্য উন্নতির জন্য ভালো হবে-
সকালে খালি পেটে ১ চা চামচ পরিমান ঘি খাওয়া যেতে পারে। যা আমাদের পেট ভালো রাখে। সকালে খালি পেটে ঘি খেলে পেটে যত সমস্যা রয়েছে তা নিরাময় করতে কাজ করে এবং আমাদের হজমশক্তি স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন সকালে এক চামচ পরিমান ঘি খাওয়ার চেষ্টা করুন এবং খাওয়া শেষে চা বা গরম পানি খাওয়া যেতে পারে।
রাতে ঘুমানো আগে গরম দুধের সাথে ঘি মিশিয়ে খেতে পারেন। এক গ্লাস পরিমান খাঁটি গাভীর দুধে এক চা চামচ পরিমান ঘি নিয়ে ভালো করে মিশিয়ে খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। গরম দুধের সাথে ঘি আপনাকে অনেক ভালোভাবে ঘুমাতে সাহায্য করবে। আপনার হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক হবে এবং আপনার পায়খানায় কোন সমস্যা থাকলে তা নিরাময় করবে।
আরো পড়ুনঃ রাতে মধু খাওয়ার নিয়ম
গরম ভাতের সাথে ঘি খাওয়া যেতে পারে। এতে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃুদ্ধি করে বিভিন্ন অজানা রোগের থেকে রক্ষা করবে। আপনার শরীরে থাকা পানির অপূর্নতা পূর্ন করতে সাহায্য করবে। গরম ভাতে ঘি খাওয়ার ফলে আপনার শরীর হাইড্রেট থাকবে। বিশেষ করে গরমের দিনে দিনে শরীর হাইড্রেট রাখতে ঘি বেশ কার্যকারি।
ব্যায়াম করার পর ঘি খেতে পারেন। যার কারনে আপনার শক্তির ঘাটতি পূর্ন করে ক্লান্তি দূর করে এবং পূনরায় কাজ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এছাড়া আপনি চা বা কফির সাথে ঘি মিশিয়ে খেতে পারেন। যাতে আপনার চা, কফির স্বাদ বৃদ্ধি হওয়ার সাথে সাধে আপনাকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগাতে সাহায্য করবে।
লেখকের মন্তব্য: বাচ্চাদের জন্য ঘি এর উপকারিতা - রাতে ঘি খেলে কি হয়
প্রিয় পাঠক, উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বাচ্চাদের জন্য ঘি এর উপকারিতা ও রাতে ঘি খেলে কি হয় তা বুঝতে পেরেছেন। ঘি আমাদের স্বাস্থ্য উন্নতিতে কাজ করে তবে অধিক মাত্রায় খাওয়া উচিত নয়। বাজারে পাওয়া ঘি ভেজালযুক্ত হয়ে থাকে। বাহিরের তৈরীকৃত ঘি না কিনে ঘরোয়া পদ্ধতিতে সকল পুষ্টি উপাদান বেশি পাওয়া যায়।
এতক্ষণ আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। এরকম তথ্যবহুল বা আপনার উপকারে আসে এমন আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন এবং কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত দিন। নিজে ভাল থাকুন, অন্যকে ভালো রাখুন। পৃথিবী হোক সুন্দরময়।
অ্যামপ্লি ইনফোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url