বাংলাদেশের জিআই পণ্য কয়টি ও কি কি তা জানুন ২০২৪
প্রিয় পাঠক, বাংলাদেশের জিআই পণ্য কয়টি ও কি কি সে সম্পর্কে জানতে চান? আপনি ঠিক আর্টিকেলটিতে ক্লিক করেছেন। যেখানে বাংলাদেশের জিআই পণ্য কয়টি ও কি কি সে সম্পর্কে জানার পাশাপাশি জিআই পণ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। বাংলাদেশে জিআই পণ্য কয়টি ২০২৪ সালে চলুন জানা যাক।
বাংলাদেশের জিআই পণ্য কয়টি ও কি কি এই সম্পর্কে জানতে সমস্ত আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আশা করি উপকৃত হবেন।
ভূমিকা
জিআই পূর্ণ মূলত চারটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে করা হয়। এর প্রথমটি হচ্ছে পণ্যটি অবশ্যই ঐতিহাসিক হতে হবে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে জিআই পূর্ণ অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। তৃতীয়ত কোন পণ্য তৈরির ক্ষেত্রে ঐতিহ্যবাহী দক্ষতা বা কৌশলের ওপর ভিত্তি করে হয়। চতুর্থ বিষয়টি হলো খ্যাতিক বা সুনাম।
বাংলাদেশের জিআই পণ্য কয়টি ও কি কি - বাংলাদেশের জি আই পণ্য কয়টি ও কি কি
১. বাংলাদেশের জামদানি শাড়ী: বাংলাদেশের প্রথম জি আই বা ভৌগোলিক নির্দেশন হিসেবে স্বীকৃতি পায় ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১৯ তারিখ। তার জন্য নিবন্ধন করা হয় ১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সালে।
২. বাংলাদেশের ইলিশ: দ্বিতীয় জি আই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায় বাংলাদেশেল ইলিশ। এটি জি আই পণ্য হিসেবে কার্যকর করা হয় ১৭ আগষ্ট ২০১৭ সালে। এজন্য লিখিত ভাবে নিবন্ধন করা হয় ১৩ নভেম্বর ২০১৬ সালে।
৩. খিরসাপাত আম: ২ ফেব্রুয়ারী ২০১৭ সালে খিরসাপাত আম জি আই পণ্য হিসেবে পাওয়ার জন্য আবেদন করায় হয় এবং তৃতীয় জি আই পণ্য হিসেবে ২৭ জানুয়ারি ২০১৯ সালে স্বীকৃতি পায় বিখ্যাত খিরসাপাত আম।
৪. ঢাকাই মসলিন শাড়ি: ২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর ঢাকাই মসলিন শাড়ি বাংলাদেশের চর্তুথ জি আই পন্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ঢাকাই মসলিন শাড়ি জি আই পণ্য হিসেবে পাওয়ার জন্য আবেদন জমা হয় ২ জানুয়ারী ২০১৮ সালে।
৫. বাগদা চিংড়ি: বাগদা চিংড়ি জি আই পণ্য হিসেবে পাবার লক্ষে ৪ জুলাই ২০১৯ সালে নিবন্ধন করা হয় এবং এটি বাংলাদেশের ৫ম জি আই পণ্য হিসেবে অনুমোদন পায় ২৪ এপ্রিল ২০২১ সালে।
৬. রাজশাহীর সিল্ক: বাংলাদেশের ৬ষ্ঠ জি আই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায় রাজশাহীর সিল্ক। এটি স্বীকৃতি পায় ২৬ এপ্রিল ২০২১ সালে। রাজশাহীর সিল্ক এর জন্য আবেদন দাখিল করা হয় ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ সালে।
বাংলাদেশের জিআই পণ্য কয়টি ২০২৪ - বাংলাদেশের জি আই পণ্য কয়টি ২০২৪ - বর্তমানে বাংলাদেশের জিআই পণ্য কয়টি ২০২৪
৭. রংপুরের শতরঞ্জি বা হস্তশিল্প: ২৬ এপ্রিল ২০২১ সালে স্বীকৃত পাওয়া ২য় পণ্য এবং জি আই পন্য হিসেবে ৭ম জি আই পণ্য শতরঞ্জি বা হস্তশিল্প। রংপুরের শতরঞ্জি জি আই পণ্য হিসেবে নিবন্ধন করা হয় ১১ জুলাই ২০১৯ সালে।
৮. কালিজিরা চাল: ২৬ এপ্রিল ২০২১ সালে স্বীকৃত পাওয়া ৩য় পণ্য এবং জি আই পন্য হিসেবে ৮ম জি আই পণ্য কালিজিরা চাল। এটি জি আই পণ্য হওয়ার লক্ষে আবেদন করা হয় ৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৭ সালে।
৯. দিনাজপুরের কাঁটারিভোগ: দিনাজপুরের কাঁটারিভোগ জি আই পণ্য হিসেবে নিবন্ধন করা হয় ৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৭ সালে এবং বাংলাদেশের ৯ম জি আই পন্য হিসেবে স্বীকৃত পায় দিনাজপুরের কাঁটারিভোগ চাল। যা ২৬ এপ্রিল ২০২১ সালে কার্যকর করা হয়।
১০. বিজয়পুরের সাদামাটি: এটি জি আই পণ্য হিসেবে আবেদন করা হয় ৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৭ সালে এবং ২৬ এপ্রিল ২০২১ সালের আরো একটি পন্য জিআই পণ্য অনুমোদন পায় বিজয়পুরের সাদামাটি। এটি ১০ম জি আই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
বাংলাদেশের জি আই পণ্য কতটি
১১. রাজশাহীর ফজলি আম: বাংলাদেশের ১১ তম জি আই পণ্য হিসেবে ২২ মে ২০২২ সালে স্বীকৃতি পায় রাজশাহীর ফজলি আম। রাজশাহীর বিখ্যাত ফজলি আম জি আই পণ্য হিসেবে নিবন্ধন করা হয় ৯ মার্চ ২০১৭ সালে।
১২. বগুড়ার দই: বগুড়ার বিখ্যাত দই জি আই পণ্য হিসেবে অনুমোদন পাওয়ার লক্ষে ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারী আবেদন করা হয় এবং ১২ তম জি আই পণ্য হিসেবে বগুড়ার দই ৫ জুলাই ২০২৩ সালে প্রকাশিত হয়।
১৩. শেরপুরের তুলসী মালা ধান: শেরপুরের তুলসী মালা ধান ২০২৩ সালের ৫ জুলাই বাংলাদেশের ১৩ তম জিআই পন্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়। শেরপুরের তুলসী মালা ধান জি আই পণ্য হিসেবে আবেদন জমা হয় ১১ এপ্রিল ২০১৮ সালে।
১৪. চাঁপাইনবাবগঞ্জের আশ্বিনা আম: ২০১৭ সালে ১৯ ফেব্রুয়ারী চাঁপাইনবাবগঞ্জের আশ্বিনা আম জি আই পণ্য হিসেবে আবেদন দাখিল করা হয়। ৫ জুলাই ২০২৩ সালে বাংলাদেশের ১৪ তম জি আই পণ্য হিসেবে সনদ পায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের আশ্বিনা আম।
১৫. চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া আম: বাংলাদেশের ১৫ তম জি আই পণ্য হিসেবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া আম অনুমোদন পায় ২০২৩ সালের জুলাই মাসের ৫ তারিখ। তার জন্য ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৭ সালে নিবন্ধন করা হয়।
১৬: সিলেটের শীতল পাটি: ১৬তম জি আই পণ্য হিসেবে পাবার লক্ষে ১৬ মার্চ ২০২১ সালে লিখিত ভাবে আবেদন করা হয় এবং ২০ জুলাই ২০২৩ সালে জি আই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায় সিলেটের শীতল পাটি।
১৭. নাটোরের কাঁচাগোল্লা: বাংলাদেশের ১৭ তম জি আই পণ্য হিসেবে নাটোরের কাঁচাগোল্লা সনদ পায় ৮ আগষ্ট ২০২৩ সালে। তার জন্য আবেদন করা হয়েছিলো ৩০ মার্চ ২০২৩ সালে।
১৮. টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম: জি আই পণ্য হিসেবে পাওয়ার জন্য নিবন্ধন করা হয় গত বছরের ৩০ মার্চ। প্রায় ১০ মাস অপেক্ষার পর টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম বাংলাদেশের ১৮ তম জি আই পণ্য হিসেবে ৯ জানুয়ারি ২০২৪ সালে অনুমোদন পায়।
বাংলাদেশের জি আই পণ্য কয়টি - বাংলাদেশের জিআই পণ্য কয়টি
১৯. কুমিল্লার রসমালাই: ৯ জানুয়ারি ২০২৪ একই দিনে কুমিল্লার রসমালাই ১৯ তম জি আই পণ্য হিসেবে সনদ পায়। কুমিল্লার রসমালাই জি আই পন্য হিসেবে পেতে ১৬ এপ্রিল ২০২৩ সালে লিখিত ভাবে আবেদন করা হয়েছিলো।
২০. কুষ্টিয়ার তিলের খাজা: কুষ্টিয়ার তিলের খাজা জি আই পণ্য হিসেবে পাওয়ার জন্য ১৭ এপ্রিল ২০২৩ সালে নিবন্ধন করা হয় এবং ৯ জানুয়ারী ২০২৪ সালে কুষ্টিয়ার তিলের খাজা বাংলাদেশের ২০ তম জি আই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
২১. বাংলাদেশের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল: এই দিনে ২১ তম জি আই পণ্য হিসেবে অনুমোদন পায় বাংলাদেশের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল। বাংলাদেশের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল জি আই পণ্য হিসেবে পাওয়ার জন্য গত ২৫ অক্টবর ২০১৭ সালে নিবন্ধন করা হয়ে ছিলো।
২২. যশোরের খেজুরের গুড়: ২৮ জানুয়ারী ২০২৮ সালে বাংলাদেশের ২২ তম জি আই পণ্য হিসেবে যশোরের খেজুরের গুড় ঘোষনা করা হয়। এর জন্য ২৩ মে ২০২৩ সালে জি আই পণ্যের জন্য আবেদন করা হয়ে ছিলো।
২৩. নরসিংদীর অমৃতসাগর কলা: ২৯ আগষ্ট ২০২৩ সালে নরসিংদীর অমৃত সাগর কলা জি আই পণ্যের জন্য আবেদন করা হয়। ২০২৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারী নরসিংদীর অমৃতসাগর কলা জি আই পণ্য হিসেবে অনুমোদন পায়।
২৪. গোপালগঞ্জের রসগোল্লা: গোপালগঞ্জের রসগোল্লা ২২ আগষ্ট ২০২৩ সালে জি আই পণ্য হিসেবে নিবন্ধন করা হয়। ২০২৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারী গোপালগঞ্জের রসগোল্লা জি আই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
বর্তমানে বাংলাদেশের জিআই পণ্য কয়টি
২৫: রংপুরের হাঁড়িভাঙ্গা আম: রংপুরের হাঁড়িভাঙ্গা আম ১৫ ফেব্রুয়ারি জি আই পণ্যের জন্য আবেদন করা হয়। রংপুরের হাঁড়িভাঙ্গা আম ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ সালে জি আই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
২৬. মৌলভীবাজারের আগর: ১২ এপ্রিল ২০১৭ সালে মৌলভীবাজরের আগর জি আই পণ্য হিসেবে আবেদন করা হয়। মৌলভীবাজারের আগর ও ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ সালে জি আই পণ্য হিসেবে সনদ পায়।
২৭. মৌলভীবাজারের আগর আতর: মৌলভীবাজারের আগর আতর ১১ জুলাই ২০১৯ জি আই পণ্যের জন্য লিখিত ভাবে নিবন্ধন করা হয়। ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ সালে মৌলভীবাজারের আগর আতর জি আই পণ্য হিসেবে অনুমোদন পায়।
২৮. মুক্তাগাছার মন্ডা: ২ মে ২০২৩ সালে লিখিত ভাবে মক্তাগাছার মন্ডাকে জি আই পণ্যের জন্য আবেদন করা হয়। মুক্তাগাছার মন্ডা ও ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ সালে বাংলাদেশের পণ্য হিসেবে জি আই পণ্য হিসেবে সনদ পায়।
২৯: রাজশাহীর মিষ্টি পান: রাজশাহির মিষ্টি পান ১৭ জুলাই ২০২৩ সালে জি আই পণ্য হিসেবে নিবন্ধন করা হয়। ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ সালে রাজশাহীর মিষ্টি পান জি আই পণ্য হিসেবে অনুমোদন প্রাপ্ত হয়।
৩০. জামাল পুরের নকশিকাঁথা: ১৭ জুলাই ২০১৯ সালে জামালপুরের নকশিকাঁথা জিআই পণ্যের জন্য নিবন্ধন করা হয়। জামাল পুরের নকশিকাঁথা ১৬ ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশের জি আই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়
৩১. টাঙ্গাইল শাড়ী: বাংলাদেশের সর্বশেষ জি আই পণ্য টাঙ্গাইলের শাড়ী। যা চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি তে বাংলাদেশের ৩১ তম জি আই পণ্য হিসেবে নিবদ্ধিত হয়। যার ফল দুই মাস অপেক্ষার পর ৯ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে ৩১ তম জি আই পণ্য হিসেবে ঘোষনা করা হয়।
লেখকের মন্তব্য: বাংলাদেশের জিআই পণ্য কয়টি ও কি কি - বাংলাদেশের জিআই পণ্য কয়টি ২০২৪
প্রিয় পাঠক, আশা করি বাংলাদেশের জিআই পণ্য কয়টি ও কি কি এবং বাংলাদেশের জিআই পণ্য কয়টি ২০২৪ সালে তা জানতে পেরেছেন। জি আই পণ্য আমাদের অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ। এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ করার দায়িত্ব আমাদের প্রত্যেকের। আমরা সকলে মিলে জিআই পন্যের প্রতি যত্নশীল হই এবং দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠাময় ভূমিকা রাখি।
এতক্ষণ আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। এরকম তথ্যবহুল বা আপনার উপকারে আসে এমন আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন এবং কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত দিন। নিজে ভাল থাকুন, অন্যকে ভালো রাখুন। পৃথিবী হোক সুন্দরময়।
অ্যামপ্লি ইনফোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url