গর্ভাবস্থায় কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা - কাঁচা কলা আমাশয় নির্মূলের উপায়
প্রিয় পাঠক,গর্ভাবস্থায় কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা এবং কাঁচা কলা আমাশয় হলে কিভাবে খেতে হয় এবং কি পরিমান খেতে হয় সে সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। আর আমাদের আটির্কেলটি এই অজানা প্রশ্নের উত্তর গুলো নিয়ে। যেখানে জানতে পারবেন, গর্ভাবস্থায় কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা এবং কাঁচা কলা আমাশয় হলে কিভাবে খেতে হয়।
আরো জানতে পারবেন কাঁচা কলা খেলে কি গ্যাস হয়, কাঁচা কলার খোসার উপকারিতা এবং কাঁচা কলা রান্না করে খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত।
ভূমিকা
আজকে আমাদের আর্টিকেলের মূল বিষয় হলো কাঁচা কলা। কাঁচা কলা এমন একটি খাবার যা সব রকমের তরকারিতে খাওয়া যায়। কাঁচা কলা অনেক পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবার। পাকা কলাতে যেমন অনেক পুষ্টিসমৃদ্ধ হয়ে থাকে কাঁচা কলা ও তেমনি পুষ্টিসমৃদ্ধ। যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারি।
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় নাশপাতি খাওয়ার উপকারিতা
কাঁচা কলাতে রয়েছে ভিটামিন , ফাইবার এবং খনিজ সহ আরো অনেক উপকারি উপাদান। নিয়মিত কাঁচা কলা খেলে কি হয় তা জানতে সমস্ত আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আশাকরি কাঁচা কলা সম্পর্কে যাবতীয় সকল তথ্য জানতে পারবেন।
গর্ভাবস্থায় কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা
একজন নারীর গর্ভাবস্থা কালীন সময়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সময় এই সময় যেমন নিজের সর্বোচ্চ খেয়াল রাখার প্রয়োজন হয় তেমনি নবাগত সন্তানের শরীর স্বাস্থ্য এবং সুস্থতা নিয়েও চিন্তা করতে হয়।গর্ভাবস্থায় সবচেয়ে চিন্তার বিষয় হচ্ছে কি খেলে সবচেয়ে ভালো অর্গানিক এবং ফরমালিন মুক্ত ভিটামিন মিনারেল ইত্যাদি শরীরে গ্রহণ করা যাবে।সেক্ষেত্রে কাঁচা কলা একটি খুবই ভালো গুণাবলী সম্পূর্ণ খাবার সবজি।
যেহেতু আমাদের দেশে সব মৌসুমে কলা গাছ জন্মায় তাই কাঁচা কলা একদম ফরমালিন মুক্ত যা গর্ভকালীন সময়ে খাওয়া নিরাপদ।কাঁচা কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে যা আপনার নবাগত শিশুর হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে এবং চুল হাত পায়ের নখ এমন কি চোখের পাপড়ি ঘন করতে খুবই কার্যকরি ক্যালসিয়াম উপাদানটি কাঁচা কলা থেকে পেতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা
কাঁচা করাতে পটাশিয়ামের উপস্থিত রয়েছে, হৃদপিণ্ড বা হার্টের পেশি শক্ত করতে পটাশিয়াম কার্যকরী একটি উপাদান।হৃদস্পন্দন স্বাভাবিকভাবে চলাচলের জন্য পটাশিয়াম রক্তের চলাচল স্বাভাবিক রাখে। ম্যাগনেসিয়াম ও ফসফেট এর উপাদান রয়েছে কাঁচা কলাতে এই দুই উপাদান শরীরের পেশি তৈরি করতে ব্রেন মস্তিষ্কের গঠন সুঠাম করতে খুবই দরকারি একটি উপাদান।
ভিটামিন বি, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি -৬ ইত্যাদি উপাদান বিদ্যমান কাঁচা কলা তে।ক্যান্সার প্রতিরোধ করতেও কাঁচা কলার ব্যবহার রয়েছে।যেহেতু কাঁচা কলা ফরমালিন মুক্ত আমরা সহজেই হাতে নাগালে পেয়ে থাকি এতে, এত এত পরিমাণ গুণাবলী রয়েছে গর্ভবতী মায়েদের জন্য তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা তে ১ টি কাঁচা কলা বিভিন্ন উপায়ে খেতে পারেন।
একটি মাঝারি আকারের কলার ওজন প্রায় ১০০ গ্রাম হতে পারে। এতে ৯০ গ্রাম ক্যালরি আছে যা একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য উদ্ভিদ থেকে আগত অর্গানিক ক্যালরি। এই ক্যালোরি শরীরের জন্য খুবই ভালো।
কাঁচা কলা আমাশয়
কাঁচা কলা আমাশয় বা ডাইরিয়া রোধে বেশ কার্যকারি। আমাশয় বা ডায়রিয়া মূলত স্বাস্থ্য উপযোগী নয় এমন খাদ্যের কারণে বা বিভিন্ন পরজীরীর কারনে হয়ে থাকে। এর প্রতিকার হিসেবে আমরা কাঁচা কলা খেতে পারি এবং তা ফলপ্রদ হয়ে থাকে। নিম্নে কাঁচা কলা আমাশয় বা ডায়রিয়াতে কিভাবে কাজ করে তা উল্লেখ করা হলো-
আমাশয় হলে শরীর থেকে অনেক শক্তির ক্ষয় হয়। কাঁচা কলাতে অধিক পরিমানে পটাশিয়াম থাকে। পটাশিয়ামের কারনে আমাশয় বা ডাইরিয়া হওয়া ফলে আমাদের শরীর থেকে যে শক্তি হারিয়ে যায় তা পূর্নতা দান করে এবং পূনরায় শক্তি যোগাতে সাহায্য করে।
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম
কাঁচা কলাতে রয়েছে ট্যানিন নামক এক ধরনের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান। কাঁচা কলা খেলে এই উপাদানের কারনে আমাশয় দ্রুত ভালো হয় এবং কোন ব্যথা থাকলে তা কমিয়ে দেয়। কাঁচা কলাতে আরো রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান যা আমাশয় সাড়াতে কার্যকারি।
কাঁচা কলাতে আরো রয়েছে পেক্টিন। পেক্টিন মল স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে। কাঁচা কলা খাওয়ার ফলে এই পেক্টিন উপাদানের কারনে আমাশয় বা ডাইরিয়া খুব দ্রুত সেরে যায়। কাঁচা কলাতে বিদ্যমান ভিটামিন-সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে আমাশয় নিয়ন্ত্রনে কাজ করে।
আমাশয় শুধু কাঁচা কলা খেলেই সেড়ে যায় না। কাঁচা কলা খাওয়ার পাশাপাশি আরো নান ধরনের স্বাস্থ্যসম্মত সুষম খাবার খাওয়া উচিত। এছাড়া যথেষ্ট পরিমানে বিশ্রামের প্রয়োজন। এগুলো পাশাপাশি ডাক্তারের পরার্মশ নেয়া উচিত এবং নিয়ম মেনে ঔষধ খাওয়া জরুরি।
কাঁচা কলার খোসার উপকারিতা
প্রিয় পাঠক, কলার খোসাতে সাধারণত ২০থেকে ৩০ শতাংশ আঁশ থাকে আঁশযুক্ত খাবার শরীরের পাচনতন্ত্রের জন্য খুবই উপকারী। কাঁচা কলার খোসায় রয়েছে শ্বেতসার জাতীয় উপাদান। শ্বেতসার শরীরে সঞ্চিত শক্তি হিসাবে কাজ করে। শ্বেতসার গ্লুকোজ এ পরিণত হয়ে শক্তি উৎপাদন করে কাঁচা কলাতে এর ওজনের ১৫% শ্বেতসার থাকে।
কাঁচা কলার খোসা কখনই ফেলবেন না কারন শরীরে পেশী গঠন ও মজবুত করতে কাঁচা কলাতে অবস্থিত আঁশ যুক্ত খাবার খাওয়া খুব উপকারী। কাঁচা কলা সেদ্ধ করার পাশাপাশি আপনা আপনিই এর খোসা গুলো ও সেদ্ধ হয়ে যায়। সেদ্ধ কাঁচা কলার খোসা ভর্তা করে খাওয়া যায়।এটি খুব স্বাস্থ্যকর খাবার ওজন কমাতে খুব সাহায্য করে কাঁচা কলার খোসা।
বিটা-ক্যারোটিন নামক উপাদান এর উপস্থিতি থাকার কারনে কাঁচা কলা খেলে ছেলে দের শুক্রাণু সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।কাঁচা কলা আঁশযুক্ত হওয়ায় রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। কাঁচা কলা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরা ত্বক এর উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে শরীরের ইমিউন বুস্ট করতে কাঁচা কলা খোসা খুব উপকারী।
ত্বকের বলি রেখা দূর করে কাঁচা কলার খোসা কারন এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে। ত্বক এ ফাঙ্গাল ইনফেকশন থেকে মুক্তি পেতে কাঁচা খোলা খোসা পেস্ট করে স্থানে নিয়মিত ব্যবহারের ফলে ফাংগাল ইনফেকশন যেমন দাদ, খোশ-পাঁচড়া, দাউদ থেকে মুক্ত পাওয়া যায়। চুল কালো ঘন করতে কাঁচা কলার খোসা ভেজানো পানি ব্যাবহার করা যায় এতে চুল এর উজ্জ্বলতা বাড়ে, নতুন চুল গজায় এবং অনেক দ্রুত চুল লম্বা হয়।
কাঁচা কলা খেলে কি গ্যাস হয়
কাঁচা কলা স্বাস্থ্য উপযোগী একটি খাবার। যা আমাদের শারীরিক উন্নতিতে কাজ করে। তবে কাঁচা কলা খাওয়ার ফলে অনেকের পেটে গ্যাসের সমস্য, হজমে সমস্যা এবং পেট ফুলে যেতে পারে। এর মূল কারন হলো এতে থাকা ফাইবার, শকর্রা বা কার্বোহাইড্রেট। যে উপাদান গুলো আমাদের পেটে গ্যাসের সমস্যা তৈরী করতে পারে। চলূন আরো বিস্তারিত জানা যাক।
কাঁচা কালাতে ফাইবার থাকার কারনে আমাদের পাকস্থলিতে যে হজম প্রক্রিয়া রয়েছে তা ধীর গতিতে হয়ে থাকে। এ সময় পাকস্থলীতে গ্যাসের সৃষ্টি হয়ে যা আমাদের পেট ফাঁপা এবং অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যে কারনে কাঁচা কলা সিদ্ধ করে বা তরকারিতে খাওয়া উচিত। কলা সিদ্ধ করলে ফাইবার নরম হয়। যার কারনে গ্যাসের সমস্যা দূর হয়।
কাঁচা কলাতে প্রচুর পরিমানে শর্করা রয়েছে যা গ্যাসের কারণ হতে পারে। কাঁচা কলায় থাকা শর্করা আমাদের পেটে নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি করে। পেটে অতিরিক্ত ব্যাকটেরিয়া হওয়ার কারনে পেটে গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। এছাড়া অতিরিক্ত শর্করাতে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য হলে মল থলিতে দীর্ঘ সময় মল জমে থাকার কারনে পেটে গ্যাস হতে পারে।
কাঁচা কলা রান্না করে খাওয়ার উপকারিতা
কাঁচা কলা রান্না করলে এর স্বাদ ও কার্যকারিতা অনেক বেড়ে যায়। কাঁচা কলা সুষম খাবারের একটি অংশ। আমাদের নিয়মিত খাদ্য তালিকায় কাঁচা কলা রাখা জরুরি। যা আমাদের দৈহিক চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করে। কাঁচা কলা নানা উপায়ে রান্না করা যায়। নিম্নে কাঁচা কলা রান্না করে খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
কাঁচা কলা রান্না করার ফলে ভিটামিন-এ, ভিটাসিন-বি৬ এবং ভিটামিন-সি এর পরিমান বেড়ে যায়। এর কারনে আামদের চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়ায়। কাঁচা কলা আমাদের ত্বকের কোষগুলো ভালো রাখে এবং নতুন কোষ বৃদ্ধি করে। যার কারণে আমাদের ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ পড়তে দেয় না এবং ত্বক উজ্জল করতে সাহায্য করে।
কাঁচা কলা রান্না করার ফলে এতে থাকা ফাইবার নরম হয়ে অতি তাড়াতাড়ি হজম হয়। যার কারনে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। কাঁচা কলাতে আরো রয়েছে পটাশিয়াম যা রান্না করলে এতে থাকা পটাশিয়ামের পরিমান আরো বেড়ে যায়। আর এই পটাশিয়ামের কারণে উচ্চ রক্তচাপের নিয়ন্ত্রনে আনা যায়।
কাঁচা কলা আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে। কারন কাঁচা কলাতে ফাইবারের পরিমান অনেক বেশি থাকে। যা আমাদের ক্ষুধা কমিয়ে, অনেক বেশি খাওয়া থেকে বিরত রাখে। যা আমাদের ডায়েট রুটিনের জন্য বেশ উপযোগী। কাঁচা কলাতে ক্যালোরি অনেক কম থাকে যার কারণে অনেক বেশি খেলেও ওজন বাড়ার সম্ভাবনা অনেক কম থাকে।
লেখকের মন্তব্য: গর্ভাবস্থায় কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা - কাঁচা কলা আমাশয়
প্রিয় পাঠক, আশা করি গর্ভাবস্থায় কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা ও কাঁচা কলা আমাশয় নির্মূলের উপায় সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন। কাঁচা কলা আমাদের স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য এক অপরিহার্য খাবার। কিন্তু গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং আমাশয় নির্মূলে শুধু কাঁচা কলার উপর নির্ভরশীল হবেন না।
এতক্ষণ আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। এরকম তথ্যবহুল বা আপনার উপকারে আসে এমন আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন এবং কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত দিন। নিজে ভাল থাকুন, অন্যকে ভালো রাখুন। পৃথিবী হোক সুন্দরময়।
অ্যামপ্লি ইনফোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url