সকালে কিচমিচ খাওয়ার উপকারিতা - শুকনো কিসমিস খেলে কি হয়
প্রিয় পাঠক, সকালে কিচমিচ খাওয়ার উপকারিতা এবং শুকনো কিসমিস খেলে কি হয় তা জানতে চেয়ে আর্টিকেলটিতে ক্লিক করেছেন। যেখানে জানতে পারবেন, সকালে কিচমিচ খাওয়ার উপকারিতা এবং শুকনো কিসমিস খেলে কি হয়, রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে কি হয় এবং সকালে খালি পেটে কিসমিস খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।
সমস্ত আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন, যেখানে সকালে কিচমিচ খাওয়ার উপকারিতা সহ কিসমিস বিষয়ে সকল অজানা তথ্য জানতে পারবেন।
ভূমিকা
কিসমিসের ইংরেজী হলো Raisins. কিসমিস মিষ্টি একধরনের খাবার। যা কাঁচা আঙ্গুর শুকিয়ে তৈরী করা হয়। কিসমিসের ব্যবহার সেই প্রাচীনকাল থেকেই। কিসমিস স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি এক পুষ্টিকর খাবার। এটি নানা ধরনের ডিসে ডিকোরেশনের কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। কিসমিস ছাড়া সেমাই রান্না কিছূটা অসম্পূর্ন মনে হয়।
আরো পড়ুনঃ খালি পেটে কাজু বাদাম খেলে কি হয়
কিসমিস নানা পুষ্টিগুন সম্পূর্ন খাবার। যাতে রয়েছে প্রচুর পুরিমানে ভিটামিন, শর্করা, ফাইবার এবং খনিজ। যা আমাদের শরীরের জন্য বেশ কার্যকারি একটি খাবার। এতে থাকা পুষ্টি উপাদান আমাদের সুন্দর স্বাভাবিক জীবন-যাপনে ভূমিকা রাখে।
সকালে কিচমিচ খাওয়ার উপকারিতা
কিচমিচ একটি শুকনো ফল। কোন ফলকে যখন শুকানো হয় তখন তার পুষ্টিগুন বেড়ে যায়। আমাদের স্বাস্থ্য উন্নতিতে কাজ করে। ১০০ গ্রাম কিচমিচে প্রায় ২৯০ গ্রাম ক্যালোরি পাওয়া যায়। এ থেকে আমরা বুঝতে পারি কিচমিচ একটি উচ্চ ক্যালোরি সম্পূর্ন খাবার। নিম্নে সকালে কিসমিচ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
সকালে কিচমিচ খাওয়ার ফলে এতে থাকা গ্লুকোজ আমাদের শরীরে শক্তি যুগীয়ে শারীরিক দূর্বলতা দূর করে। যাতে আপনি আপনার কর্মক্ষেত্রে সঠিক শক্তি পেয়ে থাকেন। কিচমিচে আরো রয়েছে ফ্রুকটোজ যা আপনার দাঁত মজবুত করে এবং যাদের ডায়েবেটিস রয়েছে তাদের জন্য বেশ উপকারি একটি খাবার।
সকালে কিচমিচ খাওয়ার ফলে আমাদের হাড় অনেক শক্ত হয়। কারণ কিচমিচে রয়েছে অধিক পরিমানে ক্যালসিয়াম। যা আমাদের হাড় শক্ত করার পাশাপাশি পেশিগুলো কার্যকারি করে তোলে। এতে আরো রয়েছে আয়রন। আয়রন আমাদের রক্তশূন্যতা দূর করে এবং আমাদের মাংসপেশির ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে।
সকালে কিচমিচ খেলে আমাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। কারন এতে বিদ্যমান রয়েছে পটাশিয়াম। যা আমাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করার পাশাপাশি আমাদের মাথাব্যথা, বুকব্যথা সহ নানা ধরনের সমস্যা দূর করে। সকালে কিচমিচ খেলে এতে থাকা ভিটামিন-সি আমাদের ত্বক ভালো থাকে এবং বয়সের ছাপ এড়িয়ে উজ্জলতা প্রদানে বেশ কার্যকারি।
প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত
আপনার হয়তো অনেকেই কিসমিসের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জেনেছেন, তবে প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত সে সম্পর্কে জানতে পারবেন এ পোস্টটি পড়লে। প্রত্যেকেরই জানা প্রয়োজন প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত এবং কি ভাবে খাওয়া উচিত। চলুন বিস্তারিত জেনে নেই।
পূর্ণবয়স্কদের শারীরিক গঠিন অনুযায়ী প্রতিদিন ৫০ গ্রাম কিসমিস খাওয়া উচিত। কিসমিসের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন বি৬, প্রোটিন, ফাইবার, পটাশিয়াম, আয়রন ইত্যাদি। প্রতিনিয়ত কিসমিস খেলেই মিলবে নানা উপকার। তবে বেশি পরিমাণে কিসমিস খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। ছোট বাচ্চাদের জন্য ছয় থেকে সাতটি কিসমিস যথেষ্ট।
আরো পড়ুনঃ ফুসফুস পরিষ্কার করার খাবার
প্রতিদিন কিসমিস খেলে শক্তি এবং ক্যালরির বেড়ে যায়। কিসমিস খেলে আমাদের শরীরে এনার্জি সঞ্চয় হয়। প্রতিদিন ৫০ গ্রামের বেশি কিসমিস খেলে দৈহিক ক্ষতি হতে পারে। যদি কেউ বেশি পরিমাণে কিসমিস খেয়ে ফেলে তাহলে উপকার না হয়ে অপকার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিসমিস শরীরে দুর্বলতা রোধে বেশ উপকারী একটি খাবার।
কিসমিস খাওয়ার নিদিষ্ট কোন সময়সীম নেই। তবে প্রতিদিন সকাল বেলা এবং রাতে ঘুমানো আগে খাওয়া স্বাস্থ্য উপযোগী। একটি ১০ থেকে ১৫ টি কিসমিস সারা রাত ভিজিয়ে রেখে পানি সহ কিসমিস খাওয়া স্বাস্থ্য উন্নতিতে সবচেয়ে ভালো একটি উপায়। অতএব আমরা বলতে পারি প্রতিদিন ৫০ গ্রাম বা এক মুষ্টি পরিমান কিসমিস খাওয়া স্বাস্থ্য উপযোগী।
সকালে খালি পেটে কিসমিস খাওয়ার নিয়ম
সর্বপ্রথম ভালোভাবে কিসমিস গুলো ধুয়ে নিতে হবে। এরপর এক গ্লাস পরিষ্কার বিশিদ্ধ পানিতে কিসমিস গুলো দিয়ে দিতে হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে কিসমিস গুলোকে ছেকে নিতে হবে। এরপর কিসমিসের পানিগুলো হালকা গরম করে সকালে খালি পেটে খেয়ে নিতে হবে। কিসমিস পানি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকার।
সকালে খালি পেটে কিসমিস পানি খাওয়ার পর সাথে সাথে সকালের নাস্তা না খেয়ে অন্তত ৩০ মিনিট আগে বা পরে খেতে পারেন। যদি সকালে খালি পেটে কিছুদিন কিসমিস খাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে কিসমিসে থাকো স্বাস্থ্যকর পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। সকালে খালি পেটে কিসমিস খাওয়ার ফলে সারাদিনে কর্মক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় শক্তি পাওয়া যায়।
সকালে খালি পেটে কিসমিস খেয়ে দিনের কাজগুলো শুরু করাতে আমাদের মন মেজাজ অনেকটা সতেজ ও ফুরফুরে থাকে এবং কাজের প্রতি মনোযোগী করে তোলে। কিসমিস পানি খাওয়ার পর অবশিষ্ট যে কিসমিস গুলো থেকে যায় তা চিবিয়ে খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত। সকালে খালি পেটে কিসমিস খেলে কোলেস্টেরল থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
আরো পড়ুনঃ কাঁচা ছোলা খেলে কি ওজন কমে
এছাড়াও অনেকের হার্ট সমস্যা রয়েছে হার্ট ভালো রাখতে কিসমিস অত্যন্ত উপকারী। শরীরের ক্লান্তি এবং দুর্বলতা দূর করতে সকালে খালি পেটে কিসমিস খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। এইটা স্বাস্থ্যগত দিক দিয়ে অত্যন্ত উপকারী। প্রতিদিন সকালে কিসমিস খেলে রক্ত পরিষ্কার থাকে এবং ক্যান্সার থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে।
কিসমিসের মধ্যে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট। এছাড়াও সকালে খালি পেটে কিসমিস খেলে হজম শক্তি ও লিভার ভালো রাখতে সাহায্য করে। প্রতিনিয়ত সকালে খালি পেটে কিসমিস খাওয়ার এই নিয়ম গুলো মেনে চললেই উপকৃত হবেন।
রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে কি হয়
রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে কি হয় সে সম্পর্কে অনেকে জানতে চেয়েছেন। জানেন কি রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে কি হয়? রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে কিসমিস খেলে মিলবে নানা উপকারিতা। যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার জন্য ঘুম আসে না তাদের জন্য কিসমিস অত্যন্ত উপকারী। চলুন জেনে নেই রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে কি হয় তা বিস্তারিত-
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের অতি সহজ একটি মাধ্যম হলো নিয়মিত পরিমানমত কিসমিস খাওয়া। কিসমিসে সাধারণত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পটাশিয়াম সমৃদ্ধ একটি খাবার যা শরীরের লবণাক্তন ভারসাম্য বজায় রাখে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। রাতে কিসমিস খেলে অতিরিক্ত রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ও নিয়িমিত কিসমিস খাওযা যেতে পারে। শুকনোফল কিসমিস প্রতিনিয়ত ৫০ গ্রাম খেলে এতে থাকা ভিটামিন-এ এবং ভিটামিন কে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বৃদ্ধি করে এবং জ্বর. ঠান্ডা, কাশি ও অন্যান্য শারীরিক দুর্বলতা থেকে দূরে রাখতে কার্যকারি একটি খাবার কিসমিস।
মানসিক প্রশান্তি যোগাতে এবং শান্তিপূর্ন ভাবে ঘুমাতে কিসমিসের গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নান মানসিক চিন্তায় অনেক সময় ঘুম আসতে চায় না, সেক্ষেত্রে রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে ঘুম আসছে সাহায্য করে। প্রতিদিন নিয়মিত কিসমিস খেলে মানসিক প্রশান্তি আনে।
দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে উপকারি একটি খাবার হলো কিসমিস। শিশুদের জন্য কিসমিস অত্যন্ত স্বাস্থ্য উপযোগী। কিসমিসে থাকা ভিটামিন এ এবং বিটা ক্যারোটিন উপাদানটি শিশুদের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে এবং ত্বক ভালো রাখতে কাজ করে।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রনে কিসমিস একটি কার্যকারি খাবার হিসেবে পরিচিত। অনেক মানুষই কোলেস্টেরলের সমস্যায় ভুগে সেক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেয়ে ঘুমালে দ্রুত কোলেস্টেরল দূর করতে সাহায্য করে।
অতিরিক্ত ওজন থেকে মুক্তি পেতে কিসমিস খাওয়া জরুরি। কিসমিস শরীরের অতিরিক্ত চর্বি ও মেদ কমাতে সাহায্য করে। রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে পেট ভরা থাকে এবং দ্রুত ওজন কমায়। যদি রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেয়ে না থাকেন তাহলে আজ থেকে শুরু করুন। যা খেলে দ্রুত শারীরিক শক্তি ও মানসিক বিকাশে কাজ করে।
কিসমিস খেলে কি মানুষ ফর্সা হয়
কিসমিস খাওয়ার সাথে ফর্সা হওয়ার কোন সর্ম্পক নেই। মানুষের গায়ের রং বিভিন্ন কারনে পরিবর্তন হতে পারে। তার মধ্যে মেলালিন হরমন এবং জিনগত কারনে হয়ে থাকে। কিসমিস সহ বিভিন্ন সুষম খাবার খাওয়া এবং শারীরিক কসারতের ফলে ত্বকে উজ্জ্বলতা ধরে রাখে সম্ভব। চলুন জেনে ত্বকে উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে কিছু করনীয়।- নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান করা উচিত। একজন সাধারন মানুষ দিনে সর্বনিম্ন ২ লিটার বা ৮ থেকে ৯ গ্লাস পানি পান করা প্রয়োজন।
- রোদে সানস্ক্রিন ক্রিম ব্যবহারের মাধ্যমে ত্বককে সূর্য থেকে রক্ষা করার মাধ্যমে ত্বকে উজ্জ্বলতা ধরে রাখা সম্ভব।
- বিভিন্ন পুষ্টিসর্ম্পূন ও সুষম খাদ্যের মাধ্যমে ত্বকে উজ্জ্বলতা ধরে রাখা সম্ভব। যার মধ্যে শাক সবজি, ফল এবং ড্রাই ফুড অন্যতম।
- ত্বকে উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করুন। নিয়মিত ব্যয়াম ত্বকে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করে। ফলে আমাদের ত্বক ভালো থাকে।
- ত্বকের প্রতি যত্নশীল হওয়া, নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার ও ময়েশ্চারাইজ করা উচিত। যাতে ত্বকে কোন ময়লা বা মেকাপ এর স্তর জমে না থাকে।
- মানসিক দুশ্চিন্ত একেবারে কমিয়ে দিন। প্রতিদিন রাত দশটা থেকে এগারোটার মধ্যে ঘুমানোর চেষ্টা করুন। এতে আপনার ত্বকে উজ্জলতা বজায় থাকবে।
লেখকের মন্তব্য: সকালে কিচমিচ খাওয়ার উপকারিতা - শুকনো কিসমিস খেলে কি হয়
প্রিয় পাঠক, আশা করি সকালে কিচমিচ খাওয়ার উপকারিতা এবং শুকনো কিসমিস খেলে কি হয় সে বিষয়ে অবগত হয়েছেন। কিসমিস খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারি এবং মানসিক বিকাশে কাজ করে। কিসমিস খাওয়ার আগে ভালো ভাবে ধুয়ে খাওয়া উচিতা এবং কিসমিস কেনার সময় কেমিক্যালমুক্ত কিসমিস ক্রয় করুন। অতিরিক্ত কিসমিস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
এতক্ষণ আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। এরকম তথ্যবহুল বা আপনার উপকারে আসে এমন আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন এবং কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত দিন। নিজে ভাল থাকুন, অন্যকে ভালো রাখুন। পৃথিবী হোক সুন্দরময়।
অ্যামপ্লি ইনফোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url