বাচ্চাদের কমলা খাওয়ার উপকারিতা - কমলা খেলে কি গ্যাস্ট্রিক হয়

প্রিয় পাঠক, বাচ্চাদের কমলা খাওয়ার উপকারিতা এবং কমলা খেলে কি গ্যাস্ট্রিক হয় কিনা? সে সম্পর্কে জানতে চেয়ে আর্টিকেলটিতে ক্লিক করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আমি আপনাদের জানাবো বাচ্চাদের কমলা খাওয়ার উপকারিতা ও কমলা খেলে কি গ্যাস্ট্রিক হয় কি না তার বিস্তারিত আলোচনা। 
বাচ্চাদের কমলা খাওয়ার উপকারিতা
আরো জানাবো, কমলা খেলে কি ঠান্ডা লাগে, গর্ভাবস্থায় কমলা খাওয়ার উপকারিতা এবং কমলা খাওয়ার নিয়ম ও কমলার অপকারিতা সম্পর্কে।

ভূমিকা

কমলা একটি সাইট্রাস জাতীয় ফল। বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য বিশ্বব্যপি কমলা অনেক বেশি জনপ্রিয়। কামলা থাকা অনেক পুষ্টিগুনের মধ্যে সাইট্রিক অ্যাসিড ও ভিটামিন সি অন্যতম। কমলা খেতে অনেকটা মিষ্টি ও রসালো হয়ে থাকে। রোগ প্রতিরোধ সহ নানা স্বাস্থ্য উপকারিতায় কমলা সেই প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

বাচ্চাদের কমলা খাওয়ার উপকারিতা

কমলা শুধু ্বাচ্চাদের জন্য নয়, সব বয়সের মানুষের জন্যই উপকারি। কমলা অত্যান্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর একটি ফল। তাই কমলা সবার পছন্দের তালিকায় সবার উপরে থাকে। কমলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ফাইবার, পটাশিয়াম, ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা বাচ্চ সহ সবার স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় একটি খাবার। চলুন জেনে নেই বাচ্চাদের কমলা খাওয়ার উপকারিতা-
বাচ্চাদের কমলা খাওয়ার উপকারিতা
কমলা বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। কারণ কমলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি। যা বাচ্চাদের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে এবং বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধে কাজ করে। কমলা বাচ্চাদের খাওয়ালে ঠান্ডা লাগা, সর্দি, ফ্লু সহ অন্যান্য রোগের সংক্রমণ থেকে বাচ্চাদের রক্ষা করে।
ছোট বাচ্চারা সব থেকে বেশি কোষ্ঠকাঠিন্যতে ভোগে। কারন তাদের হজমশক্তি অনেকটাই কম হয়ে থাকে। এই সমস্যা থেকে বাঁচতে বাচ্চাদের কমলা খাওয়ানো উচিত। কমলাতে রয়েছে অধিক পরিমানে ফাইবার। যা বাচ্চাদের হজমশক্তি উন্নত করে, কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি মেলায় এবং বাচ্চাদের নিয়মিত মলত্যাগ হয়।

আমরা এমন এক সময়ে বাস করছি যেখানে অধিকাংশ বাচ্চারা রাতকানা রোগে ভোগে। বাচ্চাদের রাতকানা রোগ থেকে মুক্তি পেতে এবং দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে নিয়মিত কমলা খাওয়ানো উচিত। কারন কমলাতে রয়েচে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ। ভিটামিন এ রাতকানা রোগ খেকে ভালো করে এবং দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে।
অনেক বাচ্চা জন্মগত বা জন্মের পর অনেক বেশি ওজনের এবং মোটা হয়ে থাকে আরার কিছু বাচ্চা একদম চিকন। কমলাতে প্রয়োজনীয় ক্যালোরি রয়েছে, যা বাচ্চাদের অনেক বেশি মোটা বা অনেক বেশি চিকন হওয়া খেকে বাচিয়ে স্বাভাবিক ওজনে রাখতে সাহায্য করে। কাজেই বাচ্চাদের নিয়মিত কমলা খেতে দিন।

কমলা খেলে কি গ্যাস্ট্রিক হয়

কমলা খেলে গ্যস্টিক হয় এই কথাটি সত্য নয় বা কমলা খাওয়ার সাথে গ্যাস্টিকের সরাসরি কোন সম্পর্ক নেই। কমলা খাওয়া সবার জন্য উপকারি এবং স্বাস্থ্যকর । তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কমলা খেলে গ্যাস্টিকের সমস্যা হয়ে থাকে। চলুন জেনে নেই কমলা খাওয়ার পর কি কি কারনে গ্যাস্টিক হয়ে থাকে-
  • কমলাতে সাইট্রিক অ্যাসিড থাকে, যার কারনে আমাদের অনেকে পেটে অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে গ্যাস্টিকের সমস্যা দেখা দেয়।
  • অন্য খাবার বেশি খেলে যেমন যেমন বদহজম হয়, ঠিক তেমনি অতিরিক্ত পরিমানে কমলা খেলে পেটে বদহজম, পেট ফোলা বা গ্যাস্টিকের সমস্যা হয়ে থাকে।
  • খালি পেটে কমলা খেলে পেটে গ্যাস্টিক সহ পেটব্যথা বা বমি বমি ভাব হতে পারে।
  • তেল বা মশলা জাতীয় খাবারের সাথে কমলা খেলে গ্যাস হতে পারে।
  • অনেকের অনেক আগে থেকেই গ্যাস্টিকের সমস্য থাকতে পারে। কমলা খাওয়ার পর পেটে গ্যাসে আরো বাড়তে পারে।

কমলা খেলে কি ঠান্ডা লাগে

কমলা খেলে ঠান্ডা লাগে না। ঠান্ডা লাগে সাধারনত ভাইরাস জনিত কারনে। শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে ঠান্ড লাগার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি কমলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যার কারনে আমাদের রোগ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
কমলাতে এই উপাদান গুলো থাকার কারনে, আমাদের ঠান্ডা লাগা এবং অন্যান্য সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করে। কাজেই আমরা বলতে পারি কমলা খাওয়ার কারনে আমাদের ঠান্ডা লাগে না বরং ঠান্ডা থেকে মুক্তি দেয় এবং আমাদের শরীর থেকে ফ্রি র‌্যাডিকেল নামক ক্ষতিকর পদার্থ বের করে দেয়। যা অন্যান্য রোগের ঝুকি কমাতে সাহায্য করে।

কমলা পানি জাতীয় ফল হওয়ায়, কমলাতে প্রচুর পরিমানে পানি থাকে। যা আমাদের শরীরকে হাইড্রেড রাখে। কমলা কম ক্যালোরি যুক্ত খাবার হওয়ায়, সবাই খেতে পছন্দ করে। কমলা আমাদের ইমিউন সিস্টেমে ভালো কাজ করে, পাশা পাশি বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। সর্বপরি কমলা খেলে ঠান্ডা লাগে এর কোন বৈজ্ঞানিক প্রামান নেই।

কমলা খাওয়ার নিয়ম

কমলা আমাদের শরীরের জন্য অত্যান্ত উপকারি একটি ফল। এটি খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি পুষ্টিগুনে ভরপুর। তবে কমলা খাওয়ার কিছু নিয়ম কানুন রয়েছে, যা মেনে কমলা খেলে সঠিক পুষ্টিগুন পাওয়া যায়। নিয়মের বাহিরে খেলে হিতে বিপরিত হতে পারে। চলুন জেনে নেই কমলা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে-
আমরা অনেকেই খাদ্য তালিকায় কমলা যোগ করলেও কি পরিমান খেতে হবে, কখন খেতে হবে, কখন খাওয়া উচিত নয়। এই বিষয় গুলো না জানার কারনে আমরা কমলা থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুন পাই না এবং নিয়ম মেনে কমলা না খাওয়ার কারণে অনেক গ্যাস্টিকের সমস্যাসহ অন্যান্য রোগ দেখা দেয়।

কমলা খাওয়ার পরিমান:
  • ১ থেকে ৩ বছরের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে প্রতিদিন ১ টি কমলা ৩ থেকে ৫ টি কোয়া বা এই পরিমান কমলার জুস খাওয়ানো যেতে পারে।
  • ৪ থেকে ৮ বছরের বাচ্চাদের প্রতিদিন ১ টি বড় কমলা হাফ পরিমান কোয়া বা এই পরিমান কমলার জুস করে খাওয়ানো যেতে পারে।
  • ৯ থেকে ১৭ বছরের সন্তানদের প্রতি ১ টি কমলা বা এই পরিমান কমলার জুস করে খাওয়ানো যেতে পারে।
  • ১৮ বছরের বেশি হলে প্রতিদিন ১ থেকে ২ টি কমলা বা এই পরিমান কমলার জুস খাওয়া যেতে পারে।
কমলা খাওয়ার সময়:
কমলা কখনোই খালি পেটে খাওয়া উচিত নয় এত গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয়। প্রতিদিন সকালের নাস্তার সাথে কমলা খেতে পারেন। এটি আপনাকে সারাদিনে দীর্য সময় ধরে পূণতা প্রদান করবে এবং কাজ করার ক্ষেত্রে শক্তি যোগাবে। বিকালের নাস্তায় বা শারীরিক কসারতের পর কমলা খেতে পারেন। রাতে ও খেতে পারেন এতে করে আপনার ক্লান্তি দূর হবে এবং শাক্তি সঞ্চয় হবে।

গর্ভাবস্থায় কমলা খাওয়ার উপকারিতা

কমলা খাওয়া গর্ভবতী মায়ের এবং গর্ভে থাকা শিশুর জন্য খুবই উপকারি। মা ও শিশুকে সুরক্ষা প্রদানের পাশাপাশি দরকারি পুষ্টিগুন সরবরাহ করে। তবে গর্ভবতী মায়ের কমলা খাওয়ার ব্যাপারে সর্তক হওয়া উচিত। নিম্নে গর্ভাবস্থায় কমলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বলা হলো:
  • কমলাতে থাকা ভিটামিন সি গর্ভবতী মায়ের শরীরের ট্যিসু সংক্রমনে রোধে কাজ করে এবং নতুন ট্যিসু বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
  • কমলা গর্ভে থাকা শিশুর মস্তিস্ক এবং মেরুদন্ড গঠনে সাহায্য করে।
  • কমলাতে থাকা ফাইবার গর্ভবতী মায়ের হজমশক্তি বৃদ্ধি করে।
  • গর্ভাবস্থায় শরীরে পর্যাপ্ত পানির প্রয়োজন হয়। কমলাতে অনেক পরিমানে পানি বিদ্যমান।
  • গর্ভাবস্থায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে কমলা অনেক কার্যকারি।
  • কমলায় থাকা পটাসিয়াম মায়ের হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়ায়।
  • কমলাতে প্রচুর পরিমানে ফলেট অ্যাসিড থাকে, যা নিউরালটিউব ডিফেক্টস প্রতিরোধ করে।
  • কমলায় থাকা ভিটামিন সি মায়ের সর্দি, কাশি হওয়া থেকে বিরত রাখে।
  • কমলাতে রয়েছে ভিটামিন ‍ডি, যা মা ও শিশুর হাড় ভালো রাখতে সাহায্য করে।

কমলার অপকারিতা

আমাদের জীবনে কমলার উপকারিতা অপরিসীম। তবে এর কিছু অপকারিতা ও রয়েছে। এই অপকারিতা গুলো বাড়তে বাড়তে একটা সময় অনেক বড় আকার ধারণ করে। তাই আমাদের কমলার উপকারিতা গুলো জানার পাশাপাশি এর অপকারিতা সম্পর্কে ও জানা উচিত। নিম্নে কমলার অপকারিতা সম্পর্কে বলা হলো-
  • কমলাতে রয়েছে প্রাকৃতিক চিনি এবং অ্যাসিড, যা আমাদের দাঁতের ক্ষতি করে। বেশি কমলা খাওয়ার ফলে আমাদের দাঁতে ক্ষয় ও ক্যাভিটি দেখা দেয়।
  • কমলা মাত্রাতিরিক্ত খেলে ডায়াবেটিস রোগীদের শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়।
  • কমলাতে অ্যালার্জি থাকলে শ্বাস কষ্ট হতে পারে।
  • কমলায় থাকা ফাইবারের কারনে পেটের সমস্যা হতে পারে।
  • অধিক কমলা খেলে কমলাতে থাকা ভিটামিন সি এর কারনে ডাইরিয়া হতে পারে।
  • কমলায় বিদ্যমান সাইট্রিক অ্যাসিড গ্যাস্টিকের সমস্যা তৈরী করতে পারে।
  • গর্ভবতী মায়েরা কমলা খেলে তাদের বমি বমি ভাব হতে পারে।

লেখকের মন্তব্য: বাচ্চাদের কমলা খাওয়ার উপকারিতা - কমলা খেলে কি গ্যাস্ট্রিক হয়

প্রিয় পাঠক, আশা করি বাচ্চাদের কমলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে এবং কমলা খেলে কি গ্যাস্ট্রিক হয় কিনা তা ইতিমধ্যে জানতে পেরেছেন। কমলা খাওয়ার নিয়ম, গর্ভাবস্থায় কমলা খাওয়ার উপকারিতা এবং কমলার অপকারিতা সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। কমলা আমাদের দরকারি একটি খাবার। নিয়মিত পরিমানমত কমলা সেবন করুন।

এতক্ষণ আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। এরকম তথ্যবহুল বা আপনার উপকারে আসে এমন আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন এবং কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত দিন। নিজে ভাল থাকুন, অন্যকে ভালো রাখুন। পৃথিবী হোক সুন্দরময়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অ্যামপ্লি ইনফোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url