লাউ শাকে কত ক্যালরি এবং ২০টি উপকারিতা সম্পর্কে জানুন
প্রিয় পাঠক, লাউ শাকে কত ক্যালরি কত থাকে এবং গর্ভাবস্থায় লাউ শাক খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চেয়ে আর্টিকেলটিতে ক্লিক করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলে আপনি জানতে পারবেন লাউ শাকে কত ক্যালরি থাকে এবং গর্ভাবস্থায় লাউ শাক খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।
যেখানে আরও জানতে পারবেন, লাউ শাক খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং লাউ শাক রান্না করার রেসিপি সম্পর্কে।
ভূমিকা
লাউ শাক বাংলাদেশে অনেক জনপ্রিয় ও সহলভ্য একটি সবজি হিসেবে পরিচিত। এটি যেকোন পরিবেশে বা যেকোন মাটিতে বেড়েে উঠে। লাউ শাক এত সহজলভ্য হওয়া সত্বেও পুষ্টিগুনে ভরপুর ও খেতে সুস্বাদু। এটি স্বাস্থ্য উন্নতিতে কাজ করে। এটি রান্না করা খুবই সহজ এবং যেকোন তরকারিতে রান্না করা যায়।
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা
এছাড়া লাউ শাকের আরো নানা উপকারিতা রয়েছে। লাউ শাক বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে সমস্ত আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।আশা করি লাউ শাক নিয়ে আপনার যত প্রশ্ন ও জল্পনা-কল্পনা রয়েছে তা উত্তর পেয়ে যাবেন।
গর্ভাবস্থায় লাউ শাক খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় লাউ শাক খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায় কারণ ডাক্তাররা গর্ভবতী মহিলাদের ফলিক এসিড খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। সে ক্ষেত্রে লাউশাকে প্রচুর পরিমাণে ফলিক এসিড থাকে যা খেলে গর্ভাবস্থায় বাচ্চাদের জন্য উপকারী। কারণ লাউ শাকে থাকা ফলিক এসিড বাচ্চার মস্তিষ্ক বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
গর্ভবতী মায়েদের গর্ভে থাকা শিশুর স্পাইনাল কার্ভের ব্যাহত হয়ে প্যারালাইসিস হতে পারে ফলিক এসিডের অভাবে। গর্ভবতী মায়েদের ফলিক এসিড জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। এছাড়াও লাউশাকে আরো বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা রয়েছে যেমন শরীরকে হাউড্রেট রাখে, রক্ত উৎপাদনে সাহায্য করে, দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে ,শক্তি সঞ্চয় করে, যকৃতের সুস্থতা, দেহের স্বাভাবিক গঠন, হার্ট ও কিডনি ভালো রাখে এবং পেটের বিভিন্ন সমস্যায় লাউ শাক অত্যন্ত উপকারী।
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা
একজন গর্ভবতী মায়েদের সুস্থ্য রাখতে লাউ শাক বিশিষ্ট খাবার খাওয়া প্রয়োজন। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন লাউ শাক রান্না করে খেলে গর্ভবতী মায়েরা অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা পেয়ে থাকেন। লাউশাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। লাউ শাকের আঁশ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং পাইলস ভালো করতে সাহায্য করে।
লাউ শাক পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যা গর্ভবতী মায়েদের তরলের মাত্রা ঠিক রাখে। এছাড়াও লাউ শাক হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়ে রক্ত তৈরি করতে সাহায্য করে।। লাউ শাকে থাকা ক্যালসিয়াম হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে। হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে গর্ভাবস্থায় লাউ শাক খাওয়া অত্যন্ত উপকারী।
লাউ শাকে কত ক্যালরি
সাধারণত প্রতি ১০০ গ্রাম লাউ শাকে ১৪ থেকে ২০ ক্যালোরি থাকে। এতে প্রোটিন থাকে প্রায় ০.৭ গ্রাম, ফাইবার রয়েছে ০.৬ গ্রাম। এতে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট যার পরিমান ৩.৪ গ্রাম। আরো রয়েছে ফ্যাট ০.১ গ্রাম। এছাড়া লাউ শাকে রয়েছে ভিটামিন-সি, ভিটামিন বি-৯, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম এবং পটাশিয়ামের মত নানা পুষ্টিকর উপাদান।
কিন্তু লাউ শাকের ক্যালোরি বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে। লাউ শাকের জাত অনেক ধরনের হয়ে থাকে, জাত ভেদে লাউ শাকের পুষ্টিগুন বা ক্যালোরি কম বেশি হতে পারে। এছাড়া ও ক্যালোরি নির্ভর করে লাউ শাকের কচি থাকা বা পরিপক্কতার উপর। লাউ শাক যত পরিপক্ক হবে, তত ক্যালোরি বৃদ্ধি পাবে।
লাউ শাকের ক্যালোরি পরিবর্তিত হতে পারে সেখানকার পরিবেশের উপর ভিত্তি করে। মাটি ও পানি উপর ভিত্তি করে ও ক্যালোরি আলাদা হতে পারে। এছাড়া লাউশাক রান্না করার পর ও এর ক্যালোরির কম বেশি হতে পারে। লাউ শাক একটি স্বাস্থ্যকর এবং কম ক্যালোরি সমৃদ্ধ খাবার হওয়াতে অনেকেই তাদের ডায়েট চার্টে খাদ্যা তালিকা হিসেবে রাখেন।
লাউশাক কম ক্যালোরি সম্পূর্ণ খাবার এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু কোন খাবারের সাথে খাচ্চেন তার উপর নির্ভর করে ক্যালোরি কম বেশি হতে পারে। লাউ শাক আমাদের শরীরের যথেষ্ট পরিমানে ভিটামিন ও মিনারেল সরবরাহ করে থাকে এবং বিভিন্ন রোগের সংক্রামন এড়িয়ে রোগ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি আমাদের সুস্থ্য রাখে।
লাউ শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা
লাউ শাকের অপকারিতার চেয়ে উপকারিতা অনেক বেশি। লাউ শাক আমাদের স্বাস্থ্য উপযোগী এবং পুষ্টিকর একটি সবজি। যা সবার খাবার তালিকায় বা ডায়েট চার্টে রাখা অন্যতম একটি খাবার। তবে কিছু ক্ষেত্রে এর অপকারিতা ও রয়েছে। নিম্নে লাউশাকের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
লাউ শাকের উপকারিতা:
- লাউ শাকে থাকা ভিটামিন সি আমাদের দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে এবং চোখে অন্যান্য সংক্রামন থেকে রক্ষা করে।
- লাউ শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমানে পটাশিয়াম, যা আমাদের রক্ত চাপ নিয়ত্রনে রাখে।
- লাউ শাকে বিদ্যমান ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে সাহয্য করে এবং হাড়কে শক্তিশালী করে তোলে।
- লাউ শাকে প্রচুর পরিমানে পানি থাকে, যা আমাদের শরীর শীতল রাখতে সাহায্য করে।
- লাউ শাকে আরো রয়েছে ভিটামিন-সি, য ত্বকে থাকে মৃত কোষগুলোকে অপসরণ করে নতুন কোষের সৃষ্টি করে। ফলে ত্বকে উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে ত্বক হয় কোমল ও মসৃন।
- এতে রয়েছে ফাইবার, যা আমাদের রক্তের র্শকরার মাত্রা নিয়ত্রনে রাখে এবং ডায়েবেটিস ধেকে রক্ষা করে।
- লাউ শাকে রয়েছে ফাইবার, যা হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং কোষ্ঠকাঠিণ্য দূর করতে সাহায্য করে।
- লাউ শাকে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আামাদের শরীরে থাকা ক্ষতিকর বর্জ্য বের করে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
- এছাড়া ও লাউয়ে থাকা ফাইবার ও পটাশিয়াম আমাদের হার্ট ভালো রাখে।
- লাউ শাকে ভিটামিন-সি, ভিটামিন-এ এবং ভিটামিন-ই রয়েছে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- লাউ শাকে ফাইটো-নিউট্রিয়েন্ট রয়েছে যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
লাউ শাকের অপকারিতা:
- অতিরিক্ত লাউ শাক খেলে সমস্যা হয়, যার কারণে পেটে গ্যাসের সৃষ্টি হয়।
- অনেকের লাউ শাকে অ্যালার্জি থাকে, যাদের লাল শাক খাওয়ার ফলে এলার্জি সমস্যা দেখা দেয়।
- লাউ শাকে থাকা পটাশিয়াম আমাদের উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে দেয়। কিন্তু অতিরিক্ত রক্তচাপ কমে গেলে আমাদের শারীরিক সমস্যা হতে পারে।
- লাউ শাকে যথেষ্ট পরিমাণে পানি থাকে অতিরিক্ত লাউ শাক খাওয়ার ফলে, আমাদের শরীরে প্রচুর পানি জমা হয় যা পরবর্তীতে ইউরুনের মাধ্যমে শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি এবং ইলেক্ট্রোলাইট বের হয়ে যায়।
- লাউ শাকে থাকা পটাশিয়াম হৃদ রোগীদের ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
- গর্ভাবস্থায় বা স্তন্যদানকারী মহিলার লাউ শাক খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা উচিত।
লাউ শাকের রেসিপি
লাউ শাকের রেসিপি খুব সহজ। লাউ শাক বিভিন্ন উপায়ে এবং বিভিন্ন তরকারিতে খাওয়া য়ায়। আর লাউ শাকে থাকা নান পুষ্টিকর উপাদান আমদের সুস্বাস্থ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চলুন জেনে নেই লাউ শাকের রেসিপি সম্পর্কে-
প্রথমে লাউ গাছ থেকে কচি ডালযুক্ত পাতাগুলো ভালোভাবে কেটে নিতে হবে। এরপর পরিষ্কার পানি দিয়ে তিন থেকে চার বার ধুয়ে নিতে হবে, যাতে কোন ময়লা বা ধূলাবালি না লেগে থাকে। এবার একটা ননস্টিক কড়াইতে পরিষ্কার করা কচি লাউ শাক ও ডগা গুলো হালকা লবণ দিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট সিদ্ধ করে নিতে হবে।
আরো পড়ুনঃ ড্রাগন ফল খাওয়ার সঠিক সময়
যদি সিদ্ধ করা লাউ শাকে পানি থাকে তাহলে একটি ছাকনি দিয়ে ছেকে নিতে হবে। এরপর কড়াইতে সামান্য পরিমাণ তেল দিয়ে পেঁয়াজকুচি, মরিচের গুড়া দিয়ে কসিয়ে নিতে হবে। হালকা বাদামি রং ধারণ করলে সিদ্ধ করা লাউ শাকগুলো ঢেলে দিতে হবে। এবার আপনার স্বাদমতো লবণ দিয়ে ভালোভাবে ভেজে নিতে হবে।
চুলা মিডিয়াম আঁচে রেখে কিছুক্ষন নাড়াচাড়ার পর দেখবেন লাউ শাক রান্না হয়ে গিয়েছে। এবার চুলাটি বন্ধ করে নামিয়ে ফেলুন। হয়ে গেলো আপনার সুস্বাদু ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খারার লাউ শাক রান্না। এবার গরম ভাতের সাথে পরিবেশণ করুণ। এভাবে খুব সহজেই আপনি লাউ শাকের রেসিপি রান্না করে খেতে পারেন।
লাউ শাকের অপকারিতা
লাউ শাকের যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমন অপকারিতা রয়েছে। অনেক সময় বিভিন্ন কারণে লাউ শাকের কিছু অপকারিতার সম্মুখীন হতে হয়। চলুন লাউ শাকের অপকারিতা গুলো কি কি জেনে নেই।
- গ্যাসঃ লাউশাকে এঞ্জাইম ও ফাইবার থাকায় বেশি পরিমাণে খেলে পেটে গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। বেশি পরিমাণে গ্যাস হলে পেট ব্যথা ও পেট ফাঁপা সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে।
- এলার্জিঃ অনেক সময় অনেকেরই লাউশাকে এলার্জি থাকে। যদি লাউ শাক খেলে ত্বক চুলকায় ও চোখে পানি আসে তাহলে বুঝতে হবে এলার্জির কারণ। লাউশাকে এলার্জি থাকলে তা খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
- ডায়াবেটিস রোগীঃ যদি কারো ডায়াবেটিক থাকে তাহলে লাউ শাক খেলে সমস্যা হতে পারে।
- অক্সালিক অ্যাসিডঃ লাউ শোকে প্রচুর পরিমাণে অক্সালিক এসিড থাকে যা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি খেয়ে ফেললে ক্যালসিয়াম সংক্রান্ত সমস্যা ও কিডনি ক্ষতির সম্ভাবনা তৈরি করে।
কিছু কিছু মানুষের লাউ শাক খেলে এরকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। বেশিরভাগ মানুষের লাউ শাক খেলে সমস্যা হয় না। যদি লাউ শাক খেলে এরকম সমস্যা দেখা দেয় তাহলে পরবর্তীতে লাউ শাক খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। লাউ শাক খেলে সমস্যায় পড়লে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
লেখকের মন্তব্য: লাউ শাকে কত ক্যালরি - গর্ভাবস্থায় লাউ শাক খাওয়ার উপকারিতা
প্রিয় পাঠক, আশা করি লাউ শাকে কত ক্যালরি থাকে এবং গর্ভাবস্থায় লাউ শাক খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন। লাউ শাক আমাদের শরীরের জন্য উপকরি। কিন্তু লাউ শাক খাওয়ার আগে এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। লাউ শাক রান্না করার আগে অবশ্যই ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। এতে কোন কীটনাশক ছিটানো রয়েছে কিনা সে ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করুন।
এতক্ষণ আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। এরকম তথ্যবহুল বা আপনার উপকারে আসে এমন আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন এবং কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত দিন। নিজে ভাল থাকুন, অন্যকে ভালো রাখুন। পৃথিবী হোক সুন্দরময়।
অ্যামপ্লি ইনফোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url