লিচু খেলে কি ওজন বাড়ে - লিচুর বিচি খেলে কি হয়

প্রিয় পাঠক, লিচু খেলে কি ওজন বাড়ে এবং লিচুর বিচি খেলে কি হয় সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। আরো জানতে চেয়েছেন- গর্ভাবস্থায় লিচু খাওয়ার উপকারিতা, লিচু খেলে কি গ্যাস হয় এবং লিচু খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। আমি আপনাদের জানাবো কি ওজন বাড়ে নাকি কমে সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা।
লিচুর বিচি খেলে কি হয়
পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ পড়ুন আশা করি লিচু খেলে কি ওজন বাড়ে এই প্রশ্নের উত্তরসহ লিচু বিষয়ে সকল প্রশ্নের উত্তর।

ভূমিকা

লিচু কেবলমাত্র খেতে সুস্বাদুই নয়, এটি পুষ্টিগুণেও ভরপুর এবং স্বাস্থ্যসম্মত। লিচু মিষ্টি স্বাদ ও রসালো হওয়ার কারণে সবার কাছে অনেক বেশি জনপ্রিয়। এটি গ্রীষ্মকালীন একটি ফল, গ্রীষ্মকালে লিচু দেহের হাইড্রেশন বজায় রাখতে সহায়ক। লিচুতে প্রায় ৮০ ভাগ পানি থাকে, যে কারণে এর চাহিদা অনেক বেশি। লিচুতে ভিটামিন, পটাসিয়াম সহ অন্যান্য উপাদান থাকে।
লিচু অন্য ফলে তুলনায় সহজলভ্য এবং স্বাস্থ্য উন্নতিতে বেশ উপকারি। তবে অন্য খাবারের মত অতিরিক্ত লিচু খাওয়া উচিত নয়। এতে নানা অসুবিধা হতে পারে।

লিচু খেলে কি ওজন বাড়ে

লিচু খেলে ওজন বাড়ে না বরং লিচু খেলে আমাদের শরীরে পুষ্টিগুনে সাথে সাথে শক্তি সঞ্চয় হয়। লিচুতে থাকা উপাদান গুলো ওজন না বাড়িয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে। লিচুতে রয়েছে ভিটামিন, খনিজ সহ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। তবে লিচু মাত্রাাতিরিক্ত খেলে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চলুন জেনে নেয়া যাক-
লিচু খেলে কি ওজন বাড়ে
লিচু একটি পানি জাতীয় ফল। লিচুতে পানি থাকার পাশাপাশি রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন এবং ফ্যাট রয়েছে এছাড়াও লিচুতে ভিটামিন-সি, কপার, পটাশিয়াম, ভিটামিন বি এবং ডায়েটরি ফাইবারের উপস্থিতি পাওয়া যায়। কাজেই আমরা বলতে পারি লিচু পরিমিত খেলে ওজন বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বরং কমতে পারে।

লিচুতে ক্যালরির পরিমাণ অনেক কম থাকে। সাধারণত একটি লিচুতে প্রায় ৭ থেকে ৮ ক্যালোরি থাকে। দিনে তিন থেকে চারটি লিচু খেলে আমাদের ওজন স্বাভাবিক থাকবে। তবে এর বেশি লিচু খেলে ক্যালরি ইনটেক বৃদ্ধি পায়, যার কারণে আমাদের ওজন বের যেতে পারে।
খুব তাড়াতাড়ি আমাদের শরীরে শক্তি যোগানোর ক্ষেত্রে শর্করা প্রয়োজন হয়। যে চাহিদা লিচু খুব সহজে মিটাতে পারে। তবে উচ্চ শর্করাযুক্ত খাবার অনেক বেশি খেলে রক্তের শর্করা মাত্রা বেড়ে যায়। যার কারণে আমাদের ওজন বাড়তে পারে।

সূর্যের হাইড্রেট রাখতে লিচু খাওয়ার বিকল্প অন্য খাবার খুব কমই হয়ে থাকে। কারণ লিচুতে প্রায় ৮০ শতাংশ পানি থাকে। যা আমাদের শরীরকে হাইড্রেট রাখার পাশাপাশি, আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে।

ফাইবারের একটি ভালো উৎস লিচু। লিচুতে থাকা ফাইবার আমাদের দীর্ঘক্ষণ ধরে হাওয়া থেকে দ্রুত রাখে। যার কারণে আমাদের শরীরে ক্যালরি প্রবেশ করতে পারে না। ক্যালরি শরীরে প্রবেশ না করলে আমাদের ওজন বাড়ার সম্ভাবনা খুব কম থাকে।

লিচুর বিচি খেলে কি হয়

আমরা সাধারনত লিচু খেয়ে এর বিচি ফেলে দেই। অনেক অনিচ্ছাকৃত লিচু বিচি খেয়ে ফেলেন। তখন চিন্তায় পড়েন যে লিচুর বিচি খাওয়ার ফলে তার কোন সমস্যা হবে কিনা? এক কথায় বলতে গেলে লিচু বিচি খাওয়া সাধারণত নিরাপদ। এটি খেলে কেমন কোন সমস্যা হয় না। তবে কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। চলুন জেনে নেই লিচুর বিচি খেলে কি কোন ক্ষতি হয় নাকি হয় না-

সায়ানাইড এক ধরনের বিষাক্ত যৌগ যা লিচুতে বিদ্যমান। তবে লিচুর বিচিতে যে পরিমাণ সায়ানাইড থাকে তা অনেক কম। যা আমাদের কেমন করে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে না। আপনি অনিচ্ছাকৃত লিচুর বিচি খেয়ে ফেললে তেমন কোনো ঝুঁকি থাকে না। তবে আপনি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে অনেকগুলো লিচুর বিচি খেয়ে ফেলেন সেক্ষেত্রে সায়ানাইড পরিমাণ বেড়ে গিয়ে আপনার স্বাস্থ্য ঝুঁকিত করতে পারে।
লিচুর বিচি অনেকটা শক্ত আবরণে ঢাকা থাকে, যা আমাদের পেটে গেলে সহজে হজম হয় না। তাই লিচুর বিচি খাওয়ার ফলে আমাদের বমি বমি ভাব, পেট ফোলা বা ডায়রিয়ার মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। লিচুর বিচির পরিমাণ যদি একটি হয়ে থাকে তাহলে অসুস্থ্যতা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

অনেক সময় অনিচ্ছাকৃত লিচুর বিচি খাওয়ার ফলে তা আমাদের শ্বাসনালীতে আটকে যায়। যার কারণে আমাদের শ্বাসকষ্ট হওয়া সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ ক্ষেত্রে ছোট বাচ্চাদের এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করানো উচিত। শিশুদের শাসনালীতে লিচুর বিচি আটকে যাওয়ার ফলে বাচ্চাদের মৃত্যু সহ অনেক বড় ধরনের ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে।

হাইপোগ্লািইসিন-এ নামক একধরনের ক্ষতিকর পর্দাথ লিচুর বিচিতে থাকে। বিশেষ করে কাঁচা বা অপরিপক্ক লিচুর বিচিতে বেশি থাকে। যা খাওয়ার ফলে আমাদের রক্তে র্শকরার মাত্রা কমে য়ায়। বিশেষ করে ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এটি বেশি হয়ে থাকে।

উপরিউক্ত আালোচনা থেকে বোঝা যায়, লিচুর বিচি না খাওয়াই উত্তম। ইচ্ছকৃত লিচুর বিচি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। ছোট বাচ্চাদের সাবধান করুন।

গর্ভাবস্থায় লিচু খাওয়ার উপকারিতা

লিচু খাওয়া সবার জন্যই উপকার, গর্ভাবস্থায় লিচু খাওয়াও তার ব্যতিক্রম নয় বরং কিছু প্রয়োজনীয় পুষ্টি গর্ভবতী মা ও গর্ভে থাকা শিশুর জন্য স্বাস্থ্যসম্মত। লিচুতে ভিটামিন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ফাইবারসহ অনেক প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান থাকে যা গর্ভবতী মায়ের জন্য বেশ উপকারী। চলুন জেনে নেয়া যাক গর্ভাবস্থায় লিচু খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে-

অকাল গর্ভপাত রক্ষার্থে এবং শিশুর নিউরাল টিউব ‍ডিফেক্ট প্রতিরোধে ফলেটের(ভিটামিন-বি৯) প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। ফলেট লিচুতে প্রচুর পরিমানে বিদ্যমান। যা গর্ভবতী মাকে সুরক্ষা প্রদানের পাশাপাশি অকাল গর্ভপাত রোধে কাজ করে এবং শিশুর নিউরাল টিউব ভালো রাখে।
গর্ভবতী মায়ের ভ্রূণের টিস্যু বৃদ্ধি করতে পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে লিচুর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। কারণ লিচুতে রয়েছে ভিটামিন সি, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে সাথে ভ্রনের টিস্যু বৃদ্ধি করে।

লিচুতে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে যা গর্ভবতী মায়ের জন্য বেশি উপকারী। লিচুতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। যা একজন গর্ভবতী মায়ের অনেক বেশি প্রয়োজন।

লিচুতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা গর্ভবতী মায়ের কোষের সংক্রমন রোধ করে কোষগুলোকে রক্ষা করে। লিচুতে থাকা শতকরা ৮০ ভাগ পানি, যা গর্ভাবস্থায় শরীর হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করে।

লিচুতে থাকে পটাশিয়াম যা গর্ভবতী মায়ের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে এবং পেশির সংকোচন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। যা গর্ভাবস্থায় অনেক বেশি প্রয়োজন।

লিচু খেলে কি গ্যাস হয়

লিচু খেলে গ্যাস হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে পরিমানের অধিক লিচু খেলে গ্যাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গ্যাস থেকে বাচতে হলে নিয়মিত পরিমানমত লিচু খাওয়া উচিত। আমরা লিচু খেয়ে থাকি আমাদের শরীরে পুষ্টি যোগাতে। লিচু খাওয়া আমাদের পুষ্টি পর্যন্ত রাখা উচিত, তা যেন ক্ষতির কারণ হয়ে না দাঁড়ায়। চলুন জানি লিচু খেলে কি গ্যাস হয়-

লিচুতে পাওয়া যায় ফাইবার, যা আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত লিচু খেলে হজম শক্তি বাধা সৃষ্টি করে এবং পেটে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।

লিচুতে থাকা ফ্রুক্টোজ এর কারণে অনেকেরই হজমের সমস্যা হয়ে থাকে। খাবার হজম না হওয়ার কারনে পেটে গ্যাসের সমস্যা হতে পারে।

লিচু বা অন্যান্য খাবার অনেক তাড়াতাড়ি খাওয়ার কারণে, খাবারের সাথে সাথে পেটে বাতাস প্রবেশ করে। যার কারণে পেট ফোলা বা পেটে গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

অতিরিক্ত লিচু খাওয়ার কারণে, আমাদের পেটে লিচু হজম হওয়ার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত এনজাইম না থাকলে আমাদের পেটে গ্যাস বা অস্বস্তি হতে পারে।

লিচুতে ফাইবারের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে, আমাদের অনেকেরই অতিরিক্ত ফাইবার হজমি বাধা সৃষ্টি করে। যার কারণে আমাদের পেট খোলা বা পেটে গ্যাস হতে পারে।

লিচু খাওয়ার নিয়ম

লিচুর অনেক পুষ্টিকর একটি খাবার। লিচু খাওয়ার সঠিক নিয়ম মেনে চললে, লিচু পুষ্টিগুনের পাশাপাশি আমাদের পেটের সমস্যা থেকে শুরু করে আরো অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়। তাই লিচু খাওয়ার আগে লিচু খাওয়ার নিয়ম সর্ম্পকে জানুন এবং সেই নিয়ম অনুসরণ করে লিচু খান ভালো উপকারিতা পাবেন। নিম্নে লিচু খাওয়ার নিয়ম সর্ম্পকে বলা হলো-
লিচু খাওয়ার নিয়ম
লিচু খাওয়ার প্রথম ধাপ হলো লিচুর পরিমান। দিনে কতটুকু ‍লিচু খাবেন। অনেকের মতে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ টি লিচু খাওয়া নিরাপদ। এর বেশি লিচু খেলে রক্তে শর্করার মান বেড়ে যায়, যা কারনে আমাদের নানা সমস্যা সৃষ্টি হয়। তবে শারীরিক অবস্থা ভেদে এর পরিমান ভিন্ন হতে পারে।

খাবারের আগে ও পরে যেকোন একসময় লিচু থেতে পারেন। কখনোই খালি পেটে লিচু খাবেন না েএতে পেটে অম্লতা বা পেটে গ্যাস তৈরী হতে পারে। লিচু খাবার আগে অবশ্যই ভালো ভাবে ধুয়ে নিবেন। লিচুর গায়ে প্রিজারভেটিভ রাসায়নিক কেমিক্যাল থাকতে পারে।

সব সময় পাকা এবং তাজা লিচু কেনার চেষ্টা করুন। কাঁচা লিচুতে টক্সিন এর পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। যা আমাদের স্বাস্থ্য উন্নতিতে বাধা প্রদান করে। লিচুর বিচি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন, কারণ এতে রয়েছে সায়ানাইড নামক যৌগ যা অনেক বিষাক্ত হয়ে থাকে।

আপনার যদি লিচুতে এলার্জি থেকে থাকে, তাহলে লিচু খাওয়া থেকে বের হতে থাকুন। কারণ লিচুতে এলার্জি সম্পৃক্ত নানা উপাদান রয়েছে। যা আপনার অ্যালার্জি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে। কাজেই লিচু খাওয়ার আগে এলার্জি সম্পর্কে অবগত হন।

লেখকের মন্তব্য: লিচু খেলে কি ওজন বাড়ে - লিচুর বিচি খেলে কি হয়

প্রিয় পাঠক, আশা করি লিচু খেলে কি ওজন বাড়ে কি না এবং লিচুর বিচি খেলে কি হয় সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন এবং লিচু খাওয়ার নিয়ম ও লিচু খেলে কি গ্যাস হয় কি না সে সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। ফরমালিন বা প্রিজারভেটিভ মুক্ত লিচু করুন এবং উপরে উল্লেখিত নিয়ম অনুসরণ করে কিছু গ্রহণ করুন। তার জন্য পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

এতক্ষণ আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। এরকম তথ্যবহুল বা আপনার উপকারে আসে এমন আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন এবং কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত দিন। নিজে ভাল থাকুন, অন্যকে ভালো রাখুন। পৃথিবী হোক সুন্দরময়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অ্যামপ্লি ইনফোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url