খালি পেটে মাল্টা খাওয়ার ১৫টি উপকারিতা সম্পর্কে জানুন
প্রিয় পাঠক, খালি পেটে মাল্টা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের অনেকের অজানা। আবার অধিকাংশ গর্ভবতী মায়েরা জানেন না গর্ভাবস্থায় মাল্টা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। তাই আপনাদের অবগতির জন্য আজকের এই আর্টিকেল। যেটির মূল বিষয় হলো খালি পেটে মাল্টা খাওয়ার উপকারিতা এবং গর্ভাবস্থায় মাল্টা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।
যেখানে আরো জানতে পারবেন, মাল্টা খেলে কি ঠান্ডা লাগে নাকি লাগে না আবার মাল্টা খেলে কি গ্যাস হয় নাকি হয়না এছাড়া ও কমলা ও মাল্টার মধ্যে পার্থক্য সহ মাল্টা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে পারবেন।
ভূমিকা: খালি পেটে মাল্টা খাওয়ার উপকারিতা - গর্ভাবস্থায় মাল্টা খাওয়ার উপকারিতা
মাল্টা একটি পুষ্টিকর ও সুস্বাদু খাবার এবং এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারি একটি ফল। মাল্টা সাধারণত রসালো ও মিষ্টি সমৃদ্ধ হয়ে থাকে। যে কারনে বাচ্চা থেকে বড় সব বয়সের মানুষ এটি খেতে অনেক পছন্দ করে। মাল্টা একটি সাইট্রাস প্রজাতির ফল। মালটা উৎপাদনে শীর্ষ দেশ চীন। যেখান থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাল্টা সরবরহ করা হয়।
আরো পড়ুনঃ বাচ্চাদের কমলা খাওয়ার উপকারিতা
মাল্টাতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন, ফাইবার ও খনিজ সহ নানা পুষ্টি উপাদান যেকারনে মাল্টাকে সুপার ফুড ও বলা হয়ে থাকে। এছাড়া ও নিয়মিত মাল্টা খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের অভাব পূর্ন হয়। মাল্টার আরো অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে, তা জানতে সমস্ত আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আশা করি উপকৃত হবেন।
খালি পেটে মাল্টা খাওয়ার উপকারিতা
মাল্টা একটি পুষ্টিসমৃদ্ধ ফল। খালিপেটে মাল্টা খেলে নানা উপকারিতা পাওয়া যায়। আামাদের দৈনিন্দিন জীবনে সেগুলোর প্রভাব দেখতে পাই। মাল্টা যেকোন সময় খেলে উপকার পাওয়া যায়। কিন্তু খালি পেটে মাল্টা খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি হয়ে থাকে। যাদের গ্যাসের সমস্যা রয়েছে তারা খালি পেটে মাল্টা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। চলুন জানি খালি পেটে মাল্টা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে-
আমাদের লিভার ও কিডনি ভালো রাখতে খালি পেটে মাল্টা খাওয়ার যেতে পারে। খালি পেটে মাল্টা খেলে আমাদের শরীর থেকে একধরনের টক্সিন নামক ক্ষতিকর পদার্থ বের হয়ে যায়। যার ফলে আমাদের কিডনি ও লিভার ভালো থাকে এবং এদের কার্যক্ষমতা বেড়ে যায়। তাই কিডনি ও লিভারের যত্নে মাল্টা খাওয়া জরুরি।
দেহের পানির ভারসম্যতা বজায় রাখতে এবং আমাদের শরীরকে হাইড্রেট রাখতে সকালে খালি পেটে মাল্টা খাওয়া যেতে পারে। আমরা সকলেই জানি মাল্টা একটি রসালো এবং পানি জাতীয় ফল। তাই খালি পেটে মাল্টা খাওয়ার ফলে শরীরে পানিশূন্যতার অভার পূর্ন হয় এবং হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করে।
আরো পড়ুনঃ ওজন কমাতে লেবু পানি খাওয়ার নিয়ম
মাল্টায় থাকা ভিটামিন সি এর কারনে আমাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। খালি পেটে মাল্টা খাওয়ার ফলে আমাদের শরীর দ্রুত ভিটামিন সি বিস্তার করতে পারে এবং বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। এছাড়া খালি পেটে মাল্টা খেলে, মাল্টাতে থাকা ফাইবার হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য সহ পেটের নানা সমস্যা দূর করে।
ত্বকে উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে এবং ত্বককে মসৃন রাখতে খালি পেটে মাল্টা খাওয়া যেতে পারে। কারন মাল্টায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ত্বকের উজ্জ্বলতা এবং মসৃনতা প্রদান করে থাকে। এছাড়া ওজন কমাতে ও মাল্টা বেশ উপকারি। মাল্টা কম ক্যালোরি সম্পূন্ন খাবার হওয়ায় এটি অধিক পরিমানে খেলেও আমাদের ওজন না বেড়ে স্বাভাবিক থাকে বা কমে যায়।
গর্ভাবস্থায় মাল্টা খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় মায়েদের খাবারের প্রতি সচেতন হওয়া উচিত। এসময় অনেক খাবার রয়েছে যেগুলো খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি এবং কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো গর্ভবতী মায়ের জন্য ক্ষতির কারন হতে পারে। যার মধ্যে রয়েছে অ্যালার্জি বা তেল-চর্বি জাতীয় খাবার। যা খাওয়ার ফলে মায়েদের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
অপরদিকে তাজা শাক-সবজি ও ফল গর্ভবতীয় মায়ের স্বাস্থ্য চাহিদা পূরণে এবং সুস্থ্য রাখতে বেশ ফলপ্রদ হয়ে থাকে। তেমনি একটি ফল হলো মাল্টা। যা গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্য উন্নতিতে ভূমিকা রাখে। এছাড়া ও মাল্টা শিশু বিকাশে কাজ করে। চলুন জেনে নেই গর্ভাবস্থায় মাল্টা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে-
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ একটি ফল হচ্ছে মাল্টা। মাল্টা শিশুর হাঁড় এবং সংযোগকারী টিস্যু বিকাশের জন্য খুবই উপকারী একটি খাবার। গর্ভাবস্থায় ত্বকের সৌন্দর্য ধরে রাখতে মাল্টা অত্যন্ত কার্যকারি খাবার। গর্ভাবস্থায় মাল্টা খেলে মা ও শিশু নানা ধরনের রোগ বা সংক্রামন থেকে মুক্তি পায় কারন মাল্টা খাওয়ার ফলে গর্ভবতী মায়ের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া উচিত
গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য মায়েদের কমন একটি সমস্যা। অধিকাংশ গর্ভবতী মায়ের এই সমস্যা দেখা দেয়। সে ক্ষেত্রে মাল্টা খেলে গর্ভবতী মায়েদের কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে কাজ করে। মাল্টা রয়েছে ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ক্যারোটিনয়েড ইত্যাদি। অনেক সময় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের ক্ষতিকর জীবাণু গুলো বের করে মা এবং শিশুর স্বাস্থ্যে সুরক্ষা প্রদান করে থাকে।
মাল্টার মধ্যে রয়েছে প্রাকৃতিক চিনির উৎস যা খেলে গর্ভবতী মায়ের প্রয়োজনীয় শক্তি বৃদ্ধি হয়। গর্ভবতী মহিলাদের মাল্টা খাওয়ার ফলে ভ্রুনের নিউরাল টিউব ক্ষয় প্রাপ্ত হওয়া থেকে রক্ষা পায়। মাল্টা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে এবং সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। তাই গর্ব অবস্থায় মাল্টা খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন এটা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী।
মাল্টা খাওয়ার নিয়ম
মাল্টা একটি স্বাস্থ্যসম্মত ফল। যা খাওয়ার ফলে আমাদের দৈহিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি আমাদের শারীরিকভাবে সুস্থ রাখে। কিন্তু এই মালটা খাওয়ার কিছু নিয়ম রয়েছে। যে নিয়মগুলো মেনে চললে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। অন্যথায় মালটা খাওয়ার ফলে আমাদের ক্ষতি হতে পারে। চলুন জেনে নেই মালটা খাওয়ার কিছু নিয়ম সম্পর্কে-
প্রথমে বাজার থেকে তাজা ও ফরমালিনমুক্ত মাল্টা কিনতে হবে। এরপর পরিষ্কার পানি দিয়ে মাল্টাগুলো ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। কারণ মাল্টাতে ধূলা ময়লা বা রাসায়নিক পদার্থ থাকতে পারে। তারপর মাল্টাগুলো খোসা ছড়িয়ে বা খোস সমেত ছোট ছোট করে কেটে নিন। অতিরিক্ত স্বাদের জন্য কাঁচা লবন বা বিটলবন ব্যবহার করতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম
মাল্টা সারাদিনের যেকোন সময় খাওয়া যেতে পারে। তবে মাল্টা খাওয়ার উত্তম সময় হলো সকালের নাস্তায় এবং দুপুরে খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে বা পরে। এছাড়া বিকাল নাস্তা হিসেবে ও মাল্টা খাওয়া যেতে পারে। তবে রাতে মাল্টা খাওয়া এড়িয়ে চলাই ভালো। করণ অনেকের রাতে ফল খেলে এসিডিটির সমস্যা হয় ও হজম শক্তির ব্যাঘাত ঘটে, এতে করে ঘুম অনেকটাই কম হয়।
পুষ্টিবিদদের মতে যাদের পেট ফাঁপা, এসিডিটি, আলসার এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে তাদেরকে রাতে মাল্টা বা অন্যান্য ফল না খাওয়াই উত্তম। তাই আমাদের উচিত রাতে মাল্টা না খেয়ে উপরে উল্লেখিত নিয়ম গুলো মেনে দিনের যেকোন একটি সময়ে খাওয়া। এত করে সর্বউৎকৃষ্ট ফলাফল পাবেন।
কমলা ও মাল্টার মধ্যে পার্থক্য
মাল্টা ও কমলা এমন একটি ফল, দেখতে প্রায় একই রকম হলেও স্বাদ ও পুষ্টিগুন সহ এই ফলগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। নিম্নে কমলা ও মাল্টার মধ্যে কিছু পার্থক্য তুলে ধরা হলো-
- কমলা সাধারণত আকারে ছোট বা মাঝারি এবং এর রং কমলা হয়ে থাকে। মাল্টা আকারে কমলার সমান বা বড় হয়ে থাকে এবং এর রং গাঢ় কমলা বা ফেকাসে কমলা হয়।
- কমলার খোসা অনেকটা পাতলা হয়ে থাকে যেকারণে খুব সহজেই ছাড়িয়ে খাওয়া যায় কিন্তু মাল্টার খোসা অনেকটা মোটা হওয়াতে এর খোসা ছাড়িয়ে খাওয়া যায় না।
- কমলা ও মাল্টা উভয়ই মিষ্টি এবং টক হয়ে থাকে। কিছু ক্ষেত্রে উভয়ই আবার তিতা হতে পারে।
- কমলাতে অনেক বীজ থাকে কিন্তু মাল্টাতে কোন বীজ থাকে না।
- কমলা সাধারণত খোসা ছাড়িয়ে সরাসরি খাওয়া যায়, জুস তৈরী করা যায় এবং বিভিন্ন মিষ্টি বা অন্যান্য খাবারে ব্যবহার করা হয়। মাল্টা না ছিলে কেঁটে সরাসরি খাওয়া যায়, জুস তৈরী করা যায় এবং বিভিন্ন সালাদে ব্যবহার হয়ে থাকে।
- কমলাতে ভিটামিন-সি, ভিটামিন-এ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবার থাকে। মাল্টাতেও ভিটামিন-সি, ফাইবার থাকে কিন্তু কমলাতে ভিটামিন-এ এর তুলনায় মাল্টাতে কিছুটা কম ভিটামিন-এ থাকে।
মাল্টা খেলে কি ঠান্ডা লাগে
মাল্টা খাওয়ার সাথে বৈজ্ঞানিক ভাবে ঠান্ডা লাগার কোন সম্পর্ক বা প্রমান পাওয়া যায়নি। তবে কিছু লোকে মাল্টা খাওয়ার ফলে পেটে অ্যাসিডিটি, বদহজম বা পেট জ্বালা পোড়া হতে পারে কিন্তু মাল্টা খেলে যে ঠান্ডা লাগে এই কথাটি সঠিক নয়। মাল্টাতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি, খনিজ সহ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
এই স্বাস্থ্যকর উপাদান গুলো থাকাতে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি আমাদের হজমশক্তি বৃদ্ধি হয় এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। তবে মাল্টা খাওয়ার পর যদি ঠান্ডা পানীয় বা ঠান্ডা জাতীয় কোন খাবার খাওয়া হয়। তবে আমাদের ঠান্ড লাগতে পারে। সেটি একান্তই ঠান্ডা খাবার খাওয়ার জন্য, মাল্টা খাওয়ার জন্য নয়।
আরো পড়ুনঃ মেথি চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা
শীত কালে বা ঠান্ডা অবস্থায় যদি আপনার শীতকালীন ঠান্ডা বা অ্যালার্জি লেগে থাকে, সেক্ষেত্রে মাল্টা খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। কারন আমরা সকলেই জানি মাল্টা রসালো এবং পানি জাতীয় ফল। যেটি খাওয়ার ফলে ঠান্ডা লাগা বা অ্যালার্জির সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। এমতবস্থায় মাল্টা খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরার্মশ নেয়া উচিত।
লেখকের মন্তব্য: খালি পেটে মাল্টা খাওয়ার উপকারিতা - গর্ভাবস্থায় মাল্টা খাওয়ার উপকারিতা
প্রিয় পাঠক, আশা করি খালি পেটে মাল্টা খাওয়ার উপকারিতা এবং গর্ভাবস্থায় মাল্টা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন। মাল্টা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারি একটি ফল। খালি পেটে মাল্টা খাওয়ার উপকারিতা বেশি। তবে মাল্টা মাত্রাতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয়। ঠান্ডা লাগা বা অ্যালার্জিতে মাল্টা পরিহার করুন।
এতক্ষণ আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। এরকম তথ্যবহুল বা আপনার উপকারে আসে এমন আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন এবং কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত দিন। নিজে ভাল থাকুন, অন্যকে ভালো রাখুন। পৃথিবী হোক সুন্দরময়।
অ্যামপ্লি ইনফোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url