আকিকার দিন গণনার নিয়ম ও মেয়েদের আকিকার নিয়ম জেনে নিন
প্রিয় পাঠক, আকিকার দিন গণনার নিয়ম সম্পর্কে এবং মেয়েদের আকিকার নিয়ম সম্পর্কে আবগত নন বলেই আর্টিকেলটিতে ক্লিক করেছেন। আজকে আমি আপনাদের জানাবো বাচ্চা জন্ম হওয়ার পর থেকে আকিকার দিন গণনার নিয়ম সম্পর্কে এবং মেয়ে বাচ্চা জন্ম নিলে সেই মেয়েদের আকিকার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত।
এছাড়া আরো জানাবো- আকিকার গোস্ত বন্টনের নিয়ম যে, কিভাবে আকিকার গোস্ত সবার মাঝে ভাগ করে দিবেন এছাড়া ছেলেদের আকিকা দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে ও জানতে পারবেন।
ভূমিকা: আকিকার দিন গণনার নিয়ম - মেয়েদের আকিকার নিয়ম
ইসলাম ধর্মে আকিকা পালক করার বিধান রয়েছে। এটি পালন করা সুন্নাত। কোন বাচ্চা জন্ম নেয়ার সাত দিনের মধ্যে আকিকা পালন করা উত্তম। আকিকা পালনে ছেলে বাচ্চা হলে ২ টি পশু ও মেয়ে বাচ্চা হলে একটি পশু কুরবানি করার বিধান রয়েছে। এছাড়া এই কুরবানীর মাংস তিন ভাগে ভাগ করা হয়।
আরো পড়ুনঃ কোরআন থেকে ছেলেদের নাম অর্থসহ
আকিকা পালন করার মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং নবজাতক শিশুর জন্য আল্লাহর রহমত কামনা করা হয়। আকিকার দিন বাচ্চার নাম রাখা হয়। আকিকা সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে সমস্ত আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আশা করি আকিকা বিষয়ে যাবতীয় সকল তথ্য জানতে পারবেন।
আকিকার দিন গণনার নিয়ম
আকিকা পালনে নিদিষ্ট কোন সময়সীমা নেই, তবে ছেলে বাচ্চা হলে জন্মেপর সপ্তম দিনে এবং মেয়ে বাচ্চা হলে ১৪ তম দিনে আকিকা পালন করা উত্তম। এছাড়া আকিকা ২১ তম দিনে ও পালন করা যেতে পারে। তবে ২১ দিন অতিবাহিত হলে যেকোন দিন আকিকা পালন করা যেতে পারে। চলুন জানি আকিকার দিন গণনার নিয়ম।
বাচ্চা যেদিন জন্ম নেবে সেদিন থেকে হিসাব না করে তার পরদিন থেকে হিসাব করা শুরু করুন, তাহলে যেদিন যেয়ে সাত দিন হয়, সেটি বাচ্চা জন্ম নেয়ার ৭ তম দিন। চলুন আরো ভালো ভাবে জানা যাক- ধরুন আপনার বাচ্চার জন্ম হয়েছে শনিবার, তাহলে তারপর থেকে আগামী ৭ দিন পর যে শনিবার আসবে সেটি আপনার বাচ্চার জন্মের ৭ দিন।
সহজ ভাবে বলতে গেলে আনার সন্তানের জন্ম যে বারে পরবর্তী সেই বারেই আপনার সন্তানের ৭ দিন পূর্ন হবে। আর এই দিনে বাচ্চার আকিকা করা উত্তম। একই ভাবে আপনার সন্তানের আকিকা যদি ১ি৪ দিনে করতে চান, তাহলে জন্ম নেয়ার পরদিন থেকে ১৪ দিন হিসাব করুন অথবা যে বাবে জন্ম মাঝখানে একবার সেই বার আসলে পরের সপ্তাহের একই বারে বাচ্চার ১৪ দিন পূর্ন হবে।
এই একই পদ্ধতি ২১ দিনের বেলাতে ও অনুসরণ করুন। বাচ্চা জন্মনোর ২১ দিন বা ৩ সপ্তাহ পেয়ে যাবেন। তবে এতদিন দেরি না করে ৭ দিনেই বাচ্চার আকিকা এবং নাম রাখার চেষ্টা করুন। না হলেও সমস্যা নেই যেহেতু আকিকা কেবল মাত্র আল্লাহর রহমত বা বরকত কামনা করা, সেহেতু আপনার সুবিধা মত আকিকা পালন করার চেষ্টা করুন।
মেয়েদের আকিকার নিয়ম - আকিকার গোস্ত বন্টনের নিয়ম
ইসলামে শুধু ছেলেদের নয় মেয়েদের ও আকিকা করার বিধান রয়েছে। মেয়েদের আকিকা পালন করা ওয়াজিব। তবে ছেলেদের থেকে মেয়েদের আকিকা পালনে অল্প কিছু পার্থক্য রয়েছে। ছেলেদের বেলায় ৭ দিনের বেলায় আকিকা করা উত্তম এবং মেয়েদের বেলায় ১৪ তম দিনে আকিকা করা উত্তম হিসেবে ধরা হয়।
ছেলেদের বেলায় যেমন ২ টি পশু কুরবানি দেওয়া হয়। সেখানে মেয়েদের বেলায় একটি পশু কুরবানি করলেই আকিকা সম্পূর্ন হয়। মেয়েদের আকিকাতে যেকোন ধরনের নিখুঁত প্রানী কুরবানী করা যায়। গরু, ছাগল, ভেড়া, বগড়ী, উট অথবা যে সমস্ত পশুর মাংস খাওয়া হালাল তার যেকোন একটি পশু কুরবানী করা যেতে পারে।
আরো পড়ুনঃ মুসলিম ছেলেদের আধুনিক নাম
তবে সেই আকিকা করা কুরবানী অবশ্যই আল্লাহর নামে জবাই করতে হবে এবং তা হতে হবে কেবল মাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। কুরবানী করা পশুর মাংস অবশ্যই তিন ভাগ করতে হবে। এক ভাগ নিজের পরিবারের জন্য, একভাগ প্রতিবেশি বা আত্মীয়দের জন্য এবং অন্য আরেকটি ভাগ গরিব দুঃখীদের জন্য।
এছাড়া আকিকার দিনে বাচ্চার মাথার চুল গুলো ফেলে দেওয়া হয়, যাকে বলে মাথা মুন্ডন করা বা ন্যাঁড়া করা। আর হাদিস মোতাবেক বাচ্চার এই চুলের পরিমান সোনা বা রুপা দান করতে হয়। এছাড়া এই দিনে জন্ম নেওয়া বাচ্চার একটি সুন্দর অর্থবহ নাম রাখা হয়। আশা করি মেয়েদের আকিকার নিয়েম সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন।
ছাগল দিয়ে আকিকার নিয়ম
আকিাকা করার উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর রহমত যাতে নবজাতক শিশুর উপর বর্ষিত হয় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ। যেখানে ছাগল হোক বা অন্য কোন প্রানী আপনি আল্লাহর রাস্তায় আপনার সার্মথ্য অনুযায়ী করবানী দিতে পারবেন। তবে ছাগল দিয়ে কুরবানী দেওয়ার ক্ষেত্রে ছেলে সন্তান ও মেয়ে সন্তানের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। চলুন জানা যাক-
ইসলামিক শরিয়াহ ভিত্তিক মেয়ে সন্তানের বেলায় যেমন একটি ছাগল কুরবানী দিলেই হয়ে যায়। ছেলে সন্তানের বেলায় তার দ্বিগুন বা দুইটি ছাগল কুরবানী দিতে হয়। ছেলে সন্তানের বেলায় কুরবানীকৃত ছাগলে বয়স এক বছর হতে হয় এবং মেয়ে সন্তানের বেলায় ৬ মাস বয়সী ছাগল হলেই আকিকার কুরবানী হয়ে যায়।
আকিকাতে কুরবানী করা ছাগল অবশ্যই পূর্নবয়ষ্ক, সুস্থ এবং নিখুঁত হতে হবে। এমন ছাগল উপযুক্ত নয়, যে ছাগলের লেজ নেই, শিং থাকলে একটি শিং রয়েছে অন্যটি নেই, পায়ের সমস্যা সহ কোন রোগে আক্রান্ত হলে তা কুরবানী হবে না। তাই আকিকা পালনে চেষ্টা করুন শারীরিক ভাবে সুস্থ এবং নিখুঁত ছাগল জবাই করার।
উপরিউক্ত নিয়মগুলো মেনে আপনি ছাগল দিয়ে আকিকার পালনের যে নিয়ম রয়েছে তা সর্ম্পণ করতে পারবেন। আপনার সামথ্য থাকলে ছাগল ছাড়া অন্য কোন পশু ও কুরবানী করা যেতে পারে। তবে অবশ্যই জাবাইকৃত ছাগল বা অন্য যেকোন পশুর মাংস তিন ভাগ করার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে এবং সঠিক ভাবে বন্টন করতে হবে।
ছেলেদের আকিকা দেওয়ার নিয়ম
ছেলে সন্তান জন্ম নেওয়াতে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং ছেলে সন্তানের মঙ্গল কামনায় আকিকা করা জরুরি। ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিক ছেলেদের আকিকা দেওয়ার কিছু নিয়ম রয়েছে, যেগুলো মেনে আকিকা সম্পূর্ণ করা হয়। চলুন জেনে নেই ছেলে সন্তান হলে তার আকিকা দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত।
ছেলে সন্তানের জন্ম হলে জোড়া কুরবানী করতে হয়। সেটা হতে পারে ছোড়া ছাগল, জোড়া গরু, জোড়া মহিষ সহ যেসকল পশু খাওয়া হালাল সেসকল পশুর অবশ্যই জোড়া কুরবানী দিতে হবে। আকিকাতে দেওয়া পশু অবশ্যই সুস্থ সবল হতে হতে হবে। কুরবানীর অযোগ্য এমন ধরনের পশু আকিকাতে কুরবানী দেওয়া যাবে না।
ছেলে সন্তার জন্ম নেওয়ার সাত দিনের মধ্যে আকিকা করা সব চেয়ে ভালো। আকিকার দিনে বাচ্চার মাথা ন্যাড়া করে, সেই চুলের সমপরিমান সোনা বা রুপার অথবা সমতূল্য টাকা কোন এতিম খানা বা গরিব দুঃখীদের মাঝে বিতারণ করতে হবে। আর্থিক সমস্যা বা অন্য কোন সমস্যার কারনে ৭ দিনে সম্ভব না হলে ১৪ দিন, ২১ দিন অথবা সুবিধা মত যেকোন দিনে করা যেতে পারে।
আকিকার দিনে বাচ্চার নাম রাখা জরুরি। ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিক নাম রাখা এবং অর্থবহ নাম রাখতে হাদিসে উৎসাহিত করা হয়েছে। তাই বাচ্চার নাম আল্লাহর নামের সাথে মিলে রাখতে পারেন। যেমন- আব্দুর রহমান, আব্দুর রহিম। এছাড়া বাচ্চার প্রতি রহমত প্রদানে আল্লাহকে খুশি করতে তার রাস্তায় যে জোড়া কুরবানী করা হয়, সেই মাংস তিন ভাগে ভাগ করতে হয়। উপরে মাংস ভাগ করার নিয়ম রয়েছে, সেই অনুযায়ী মাংস ভাগ করুন।
কুরবানীর সাথে আকিকা দেওয়ার নিয়ম
অনেকেই ভেবে থাকেন একই পশুতে কুরবানী এবং আকিকা হবে কি না এবং এর বিধান কি। এছাড়া আকিকা ও কুরবানী একই সাধে হলে মাংস বন্টনের নিয়ম কি। আমি আপনারদের জানাতে চলেছি কুরবানীর সাথে আকিকা দেওয়ার নিয়ম সহ একই সাথে কুরবানী ও আকিকা জায়েজ না কি না জায়েজ তা ও জানতে পারবেন।
প্রথমেই বলে রাখি কুরবানী এবং আকিকা এক সাথে দেওয়া জায়েজ। তবে কুরবানীর সাথে আকিকা দেওয়ার নিয়ম হলো আলাদা আলাদা নিয়ত করতে হবে। এছাড়া আকিকার মাংস এবং কুরবানীর মাংস আলাদা আলাদা করে বন্টন করতে হবে। একই সাথে বন্টন করা যাবে না। কেবল মাত্র একটি পশুতে একাধিক আকিকা করা ও যাবে।
বড় ধরনের কোন পশুতে যদি ভাগে কুরবানী দেওয়া হয়, তাতে ও আকিকা করা যাবে। তবে মেয়ে সন্তান হলে এক ভাগ এবং ছেলে সন্তান হলে ২ ভাগে কুরবানী দিতে হবে এবং ভাগ গুলো অবশ্যই কুরবানীর মাংস থেকে আলাদা করতে হবে। এক্ষেত্রে আরো একটি বড় বিষয় হলো- আকিকার অংশটুকু আলাদা করার পর সবার অংশ সমান হতে হবে।
কারো অংম বেশি কারো অংশ কম এই নিয়মে ভাগে কুরবানি দেওয়া কারোরই কুরবানী জায়েজ হবে না। কুরবানী যদি ছয় থেকে সাত ভাগ ও হয়, সেক্ষেত্রে ও ভাগ সমান হতে হবে। কুরবানী ও আকিকা একই সাথে করা হলে উপরিউক্ত নিয়ম গুলো মেনে কুরবানী ও আকিকা দেওয়া জরুরি। অন্যথায় কুরবানী ও আকিকা একটি ও পালন করা হবে না।
লেখকের মন্তব্য: আকিকার দিন গণনার নিয়ম - মেয়েদের আকিকার নিয়ম
প্রিয় পাঠক, আশা করি আকিকার দিন গণনার নিয়ম সম্পর্কে এবং মেয়েদের আকিকার নিয়ম সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। আকিকা যেহেতু আল্লাহর রাস্তায় আল্লাহকে খুশি করতে এবং নবজাতক শিশুর উপরে আল্লাহর রহমত প্রদানে করা হয়। তাই এই আকিকাতে জবাই করা পশুর মাংস সমান তিন ভাগের বিষয়টি মেনে চলা জরুরি। আল্লাহ সবার আকিকা কবুল করুন।
এতক্ষণ আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। এরকম তথ্যবহুল বা আপনার উপকারে আসে এমন আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন এবং কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত দিন। নিজে ভাল থাকুন, অন্যকে ভালো রাখুন। পৃথিবী হোক সুন্দরময়।
অ্যামপ্লি ইনফোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url