গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম ও পরিমাণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
প্রিয় পাঠক, গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান এবং চিয়া সিড খাওয়ার পরিমাণ কতটুকু হলে অনেক বেশি উপকারিতা পাওয়া সম্ভব সে সম্পর্কে। আমাদের জানাতে আজকের এই আর্টিকেলটি সাজিয়েছি গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম এবং চিয়া সিড খাওয়ার পরিমাণ কতটুকু হওয়া উচিত।
এই আর্টিকেলটিতে আরো জানবেন- চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা এবং ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম সহ চিয়া সিড খাওয়ার সময় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।
ভূমিকা: গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম - চিয়া সিড খাওয়ার পরিমাণ
সালভিয়া নামক একধরনের গাছ থেকে চিয়া সিড পাওয়া যায়। বর্তমান সময়ে মানুষ অনেক স্বাস্থ্য সচেতন, সেজন্য স্বাস্থ্য ভালো রাখতে অনেকেই এই চিয়া সিড খেয়ে থাকেন। এই চিয়া বীজে নানা পুষ্টি উপাদান সহ শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ্য রাখতে নানা উপকারিতা প্রদান করে থাকে। এ জন্য অনেকেই চিয়া বীজকে সুপার ফুড হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন।
শক্তি ও সহনশীলতা বাড়াতে প্রাচীন অ্যাজটেক ও মায়ান সভ্যতার কিছু মানুষ চিয়া সিড ব্যবহার করতেন। চিয়া সিডের আরো অনেক উপকারিতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আশা করি চিয়া সিড বিষয়ে যাবতীয় সকল জানা অজানা তথ্য পেয়ে থাকবেন।
গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম - চিয়া সিড খাওয়ার সময়
গর্ভাবস্থায় মায়েরা অনেক পুষ্টিকর খাবার খেয়ে থাকেন। সেই খাবার গুলোর মধ্যে চিয়া সিড একটি। কিন্তু অনেক গর্ভবতী মায়েরা রয়েছেন যারা এই চিয় সিড খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানেন না। চিয়া সিড একটি স্বাস্থ্য উপযোগী খাবার, যা নিয়ম মেনে খাওয়া উচিত। নিম্নে সকল গর্ভবতী মায়েদের জন্য, গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
একজন গর্ভবতী মা দিনে ১ থেকে ২ টেবিল চামচ বা ২০ থেকে ৩০ গ্রাম পরিমান চিয়া সিড খেতে পারবেন। চিয়া সিড সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালে খাওয়া সবচেয়ে নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যসম্মত। এটি ভিজিয়ে রাখার ফলে, এতে ফাইবার বা আঁশ জাতীয় উপাদান বৃদ্ধি পায়। যার কারনে গর্ভবতী মায়ের হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকে। যা গর্ভাবস্থায় অনেক বেশি জরুরি।
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা
চিয়া সিড যেকোন সময় খাওয়া যেতে পারে, তবে সারারাত ভিজিয়ে সকালের নাস্তার সাথে খাওয়া যেতে পারে। সকালের নাস্তায় সাধারণত গর্ভবতী মায়েরা দই, ওটমিল খেয়ে থাকেন। এগুলোর সাথে ও মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। সকালের নাস্তায় চিয়া সিড খাওয়ার ফলে সারাদিনে গর্ভবতী মায়েরা সঠিক পুষ্টিগুন পেয়ে থাকেন।
চিয়া সিড দিনের অন্য সময়েও খেতে পারেন যেমন- সালাদ, স্যুপ ও স্মুদিতে যোগ করতে পারেন। গর্ভাবস্থায় মায়েদের মুখের রুচি অনেকটাই কমে যায় সেক্ষেত্রে চিয়া সিড দিয়ে পুডিং ও তৈরী করা যেতে পারে। যা মুখে স্বাদ যোগানোর পাশাপাশি পুষ্টি ও যোগাবে। এছাড়া চিয়া সিড পানিতে ভিজে সেই পানি ও সেবন করতে পারেন।
চিয়া সিড খাওয়ার পরিমাণ
চিয়া সিড প্রতিদিন পরিমান মত খাওয়া উচিত। পরিমানের চেয়ে অধিক পরিমানে খেলে পেটে গ্যাসের সমস্যা, পেট ফাঁপা সহ বদহজম ও হতে পারে। তাই পরিমিত চিয়াসিড খাওয়া উচিত। চিয়া সিড বিভিন্ন বয়সীদের জন্য আলাদা আলাদা খাওয়ার নিয়ম এবং পরিমান রয়েছে। চলুন জেনে নেই চিয়া সিড খাওয়ার পরিমান সম্পর্কে-
- ০ থেকে ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শিশুদের মায়ের বুকের দুধ ছাড়া অন্য কোন খাবার খাওয়ানো যাবেনা, চিয়া সিড তো অনেক দুরের কথা।
- ৬ মাস থেকে ২ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের চিয়া সিড খাওয়ানো উচিত নয়। তবে অন্যান্য সকল ধরনের স্বাস্থ্য উপযোগী খাবার খাওয়ানো যেতে পারে।
- ২ থেকে ৫ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের প্রতিদিন ৫ থেকে ৮ গ্রাম পর্যন্ত চিয়া সিড খাওয়ানো যেতে পারে। এর বেশি খাওয়ানো উচিত নয়।
- ৫ থেকে ১০ বছরের বাচ্চাদের প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ গ্রাম বা ১ টেবিল চামচ পরিমান চিয়া সিড খাওয়ানো যেতে পারে।
- ১১ থেকে ১৮ বছরের বাচ্চাদের প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ গ্রাম বা ১ থেকে ১.৫ টেবিল চামচ পরিমান চিয়া সিড খাওয়ানো যেতে পারে।
- ১৮ থেকে ৫০ বছরের প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দৈনিক ২০ থেকে ৩০ গ্রাম বা ২ থেকে ৩ টেবিল চামচ পরিমান চিয়া সিড খাওয়া যেতে পারে।
- ৫০ বছরের বেশি যাদের বয়স তারা প্রতিদিন ৩০ গ্রাম বা তার বেশি পরিমানে চিয়া সিড খেতে পারেন।
চিয়া সিড খেলে কি হয় - চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা
চিয়া সিড অত্যন্ত স্বাস্থ উপযোগী একটি খাবার। স্বাস্থ সচেতন মানুষরা নিয়মিত এই চিয়া সিড খেয়ে থাকেন। চিয়া সিডে প্রচুর পারিমানে পুষ্টিকর উপদান, ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান রয়েছে। যা নিয়মিত খাওয়ার ফলে, আমাদের স্বাস্থ্য উন্নতি ভূমিক রাখে এবং বেশি পরিমানে বা নিয়ম মেনে না খেলে শরীরের ক্ষতি করে। চলূন জেনে নেই চিয়া সিড খেলে কি হয় এবং চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে-
চিয়া সিড এর উপকারিতা বা চিয়া সিড খেলে কি হয়:
আমাদের অনেকের হার্টের সমস্যা হয়ে থাকে। নিয়মিত চিয়া সিড খাওয়ার ফলে আমাদের সেই হার্টের সমস্যা দূর করা বা ঝুঁকি কমানো সম্ভব। কারণ চিয়া সিডে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি যা আমাদের শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করে এবং দেহে থাকা বিভিন্ন মেদ বা চর্বি কমাতে সাহায্য করে। যার কারণে আমাদের হার্টে সমস্যা দূর হয়।
চিয়া সিডে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকার কারণে, আমাদের মস্তিষ্কে থাকা কোষগুলোর কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায় এবং আমাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। মেয়েদের মাসিক স্বাভাবিক রাখতে ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ভূমিকা রাখে। এছাড়া গর্ভবতী মায়েদের চিয়া সিড খাওয়ার ফলে এতে থাকা ওমেগা -৩ ফ্যাটি শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশে কাজ করে।
নিয়মিত চিয়াসিড খাওয়ার ফলে এতে থাকা ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম আমাদের হাঁড়ের ঘনত্ব বাড়াতে এবং শক্তিশালী করতে বেশ কার্যকারী হয়ে থাকে। চিয়াসিড খেলে এতে বিদ্যমান প্রোটিন ও ফাইবারের কারনে শরীরে প্রয়োজনীয় শক্তি সঞ্চয় হয় এর পাশাপাশি আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
আরো পড়ুনঃ জামের বিচির উপকারিতা ও অপকারিতা
চুল ও ত্বকের যত্নে ও চিয়াসিড উপকারি একটি খাবার। চিয়া সিডে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের সুরক্ষা নিশ্চিত করে এবং চুল বৃদ্ধিতে কাজ করে। এছাড়া রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রনে চিয়া সিডে থাকা ফাইবার বেশ কার্যকারি। যা আমাদের ডায়াবেটিস স্বাভাবিক রাখতে ও সহায়তা করে। এই সকল উপকারিতা পেতে নিয়মিত চিয়া সিড খাওয়া উচিত।
চিয়া সিডের অপকারিতা বা চিয়া সিড খেলে কি হয়:
চিয়া সিড অধিক পরিমানে খেলে পেটের সমস্যা দেখা দেয়। পেটে গ্যাস্টিক হজেমের সমস্যাসহ আরো নানা সমস্যা হতে পারে। চিয়া সিড মাত্রাতিরিক্ত সেবনে উচ্চরক্ত চাপ দেখা দেয়। এমতবস্থায় প্রচুর পরিমানে পানি পান করা উচিত। তবে যাদের নিম্ন রক্তচাপ তারা চিয়া সিড অধিক পরিমানে খেলেও খুব বেশি সমস্যা হয়না।
আপনার যদি চুলকারি, শ্বাসকষ্ট বা অ্যালার্জির সমস্যা থেকে থাকে, তাহলে চিয়া সিড এড়িয়ে চলাই উত্তম। চিয়া সিড খাওয়ার ফলে এই সমস্যা গুলো আরো বেড়ে যেতে পারে। চিয়া সিড অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে আমাদের ওজন অস্বাভাবিক ভাবে কমে যেতে পারে। যার কারনে শরীরে শক্তির ঘাটতি দেখা দেয় এবং কার্যক্ষমতা অনেকটাই কমে যায়।
লেখকের মন্তব্য: গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম - চিয়া সিড খাওয়ার পরিমাণ
প্রিয় পাঠক, আশা করি গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে এবং চিয়া সিড খাওয়ার পরিমাণ সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। চিয়া সিড কোন ঔষধ নয়। এটি পরিমিত খেলে উপকার পাওয়া যায় এবং পরিমানের অধিক খেলে শারীরিক ক্ষতি হয়। তাই আমাদের সকলের উচিত প্রতিদিন পরিমান মত চিয়া সিড খাওয়া। চিয়া সিড খাওয়া শুরু করা আগে অবশ্যই সমস্ত আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
এতক্ষণ আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। এরকম তথ্যবহুল বা আপনার উপকারে আসে এমন আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন এবং কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত দিন। নিজে ভাল থাকুন, অন্যকে ভালো রাখুন। পৃথিবী হোক সুন্দরময়।
অ্যামপ্লি ইনফোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url