গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খাওয়ার ১৫টি উপকারিতা সম্পর্কে জানুন
প্রিয় পাঠক, গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খাওয়ার উপকারিতা এবং ত্বকের যত্নে ভাতের মাড়ের উপকারিতা সম্পর্কে অবগত নন বলেই আর্টিকেলটিতে ক্লিক করেছেন। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি জানতে পারবেন- গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খাওয়ার উপকারিতা এবং ত্বকের যত্নে ভাতের মাড়ের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত।
এছাড়া আরো জানতে পারবেন- ভাতের ফ্যান খেলে কি মোটা হয় না চিকন হয় এবং বাচ্চাদের ভাতের মাড় খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
ভূমিকা: গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খাওয়ার উপকারিতা - ত্বকের যত্নে ভাতের মাড়ের উপকারিতা
অনেকেই ভাতের মাড় বা ভাতের ফ্যানের সাথে পরিচিত, যা কেউ না কেউ কোন এক সময় খেয়ে থাকে। বিশেষ করে যারা গ্রাম অঞ্চলে বাস করেন, তারা এখনো এই ভাতের মাড় পান করে থাকেন। ভাতের মাড় একটি পুষ্টিগুন সম্পূর্ন খাবার। কিন্তু আমরা এর উপকারিতা না জেনেই ফেলে দিয়ে থাকি। কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন, যারা ভাতের মাড় সম্পর্কে জানেনই না।
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া উচিত
তাদের সুবিধার্থে বলতে চাই- ভাত রান্ন্ করার শেষ পর্যায়ে এক ধরনের আঠালো পানি বের করা হয়, সেটিকেই ভাতের মাড় বলা হয়। ভাতের মাড় পানি শূন্যতা দূর করা সহ এতে রয়েছে শর্করা ও ভিটামিন বি সহ আরো অন্যান্য পুষ্টি গুনাগুন। গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খাওয়ার উপকারিতা ও অনেক, গর্ভবতী মায়েরা নিজেদের সুস্থ্য রাখতে ভাতের মাড় পান করে থাকেন।
গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খাওয়ার উপকারিতা
আপনি যদি একজন গর্ভবতী মা হয়ে থাকেন, তাহলে নিজে সুস্থ্য থাকতে েএবং সন্তানকে ভালো রাখতে নিয়মিত ভাতের মাড় খেতে পারেন। ভাতের মাড়ে নানা পুষ্টি উপাদান রয়েছে। ভাতের মাড় যেকোন অবস্থাতেই খাওয়া যায়। আপনি সরাসরি ও খেতে পারেন অথবা অন্য কোন রান্নার সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন আবার ভাতের মাড়ের সাথে গুড় মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
আপনি যদি শরীরিক ভাবে পানি শূন্যতা ভোগেন, তাহলে নিয়মিত ভাতের মাড় খেতে পারেন। কারণ ভাতের মাড়ে রয়েছে পানিশূন্যতা পূর্নকারী নানা উপাদান। যা আমাদের শরীরের পানি শূন্যতা রোধ করে এবং শরীরকে হাইড্রেট রাখে। এছাড়া ভাতের মাড় গর্ভবতী মায়েদের শারীরিক দূর্বলতা দূর করে, তৎক্ষণাৎ শক্তি প্রদান করে।
ভাতের মাড় আমাদের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রন করে সহায়ক, কারণ ভাতের মাড়ে প্রচুর পরিমানে ফাইবার উপাদান পাওয়া যায়। যা আমাদের শরীর থেকে দূষিত কোলেস্টেরল বের করতে সাহায্য করে এবং শরীর উপযোগী কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। তাই কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রনে রাখতে নিয়মিত ভাতের মাড় সেবন করুন।
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় নাশপাতি খাওয়ার উপকারিতা
আপনি যদি একজন ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। তাহলে এর প্রতিশোধক হিসেবে ভাতের মাড় খেতে পারেন। কারন ভাতের মাড় আঁশ জাতীয় একটি খাবার যা আমাদের দেহের শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সহায্য করে। যার কারণে আপনার ডায়াবেটিস কমাতে বেশ গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে।
ভাতের ফ্যান বা মাড়ে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং বিভিন্ন সংক্রামন এড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট আমাদের ত্বকে থাকা কোষের ক্ষয় রোধ করে এবং নতুন কোষ বৃদ্ধি করে এছাড়া আমাদের ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না।
ত্বকের যত্নে ভাতের মাড়ের উপকারিতা
ভাতের মাড় এমন একটি উপাদান, যা পুষ্টিগুন না জেনে আমরা এটি খাওয়া থেকে বিরত থাকি। ভাতের মাড় আমাদের শারীরিক উন্নতির পাশাপাশি আমাদের ত্বকের জন্য ও বেশ উপকারি হয়ে থাকে। এটি আমাদের ব্রণের সমস্যা থেকে শুরু করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি সহ আরো নানা উপকারে আসে। চলুন জেনে নেই ত্বকের যত্নে ভাতের মাড়ের উপকারিতা সম্পর্কে-
আমাদের চারপাশে নানা ধরনের ধূলাবালি, বিভিন্ন গাড়ির ধোয়া ও রান্নার করার সময় যে ক্ষতিকর তাপ আমাদের ত্বকে লাগে তার করনে আমাদের ত্বকের উপরে একটি আস্তরণ পড়ে যায়। যার ফলে আমাদের ত্বক অনেকটা মলিন দেখায়। এই মলিনতা কাটিয়ে ত্বক উজ্জ্বল করতে নিয়মিত ভাতের মাড় খাওয়া যেতে পারে। কারণ এতে রয়েছে ভিটামিন সহ নানা খনিজ উপাদান।
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা
আমাদের ত্বকের শুষ্কতা দূর করে ত্বক সতেজ বা হাইড্রেট রাখতে ও ভাতের মাড় কার্যকারি একটি খাবার হিসেবে পরিচিত। সপ্তাহে ১ থেকে ২ দিন পরিমান মত ভাতের মাড় খেলে ত্বকের শুষ্কতা দূর হয়ে ত্বকের সতেজতা ফিরে আসে। এছাড়া ত্বকে প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার প্রদানে নিয়মিত ভাতের মাড় খাওয়া যেতে পারে।
ভাতের মাড় ত্বকে থাকা ব্রণ ও ব্রণের দাগসহ অন্যান্য দাগ দূর করতে ও বেশ উপকারি। ভাতের মাড়ে রয়েছে অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি নামক সংক্রমণ রোধী উপাদান যা আমাদের ত্বকে থাকে ব্রণ সহ ব্রণের দাগ দূর করতে এবং অন্যান্য দাগ দূর করতে সক্ষম। এটি ত্বকের ছিদ্র গুলো ছোট করে ত্বক মসৃন রাখতে ও বেশ কার্যকারি ভূমিকা পালন করে।
এছাড়া ও ভাতের মাড় আমাদের ত্বককে সানবার্ন কমাতে এবং ত্বকে থাকা ব্রণ বা ফুসকড়ি হতে যে ব্যথার সৃষ্টি হয় তা কমাতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। এজন্য ভাতের মাড়ের সাথে দই বা মধু মিশিয়ে ত্বকে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রাখুন তারপর ধুয়ে ফেলুন। এতে করে আপনার ত্বকে থাকা সানবার্ন কমে যাবে এবং ত্বক প্রদহ থেকে মুক্তি পাবেন।
ভাতের মাড় খেলে কি মোটা হয় - ভাতের ফ্যান খেলে কি মোটা হয়
ভাতের মাড় খেলে সাধারণত মানুষ মোটা বা চিকন হয় না ববং এটি ওজন স্বাভাবিক রাখতে কাজ করে। ভাতের মাড় একটি কার্বহাইড্রেট বা পানি জাতীয় খাবার, যা আমাদের শরীরে শক্তি প্রদান করতে সক্ষম। তাই আমরা বলতে পারি ভাতের মাড় খাওয়ার সাথে মোটা হওয়ার কোন সম্পর্ক নেই। নিম্নে এ বিষয়ে আলোচনা করা হলো-
ভাতের মাড়ে অন্যান্য খাবারের তুলনায় ক্যালোরি অনেক কম থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম ভাতের মাড়ে ৬৫ থেকে ৮৫ ক্যালোরির উপস্থিতি পাওয়া যায়। যে কারনে ভাতের মাড় অনেক বেশি পরিমানে খেলে ও মোটা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম থাকে। ভাতের মাড় সঠিক মাত্রায় খেলে এটি আমাদের শারীরিক কার্যকলাপ স্বাভাবিক রাখে।
আরো পড়ুনঃ লাউ শাকে কত ক্যালরি এবং ২০টি উপকারিতা
ভাতের মাড়ের সাথে অন্যান্য খাবার খাওয়ার ফলে যদি হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক না থাকে তাহলে মোট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর যদি ভাতে মাড়ের সাথে হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকে তাহলে অধিক পরিমানে ভাতের মাড় খেলে ও কোন সমস্যা নেই। ভাতের মাড় সহজেই হজম হয় সাথে অন্যান্য খাবার হজম করতে সাহায্য করে।
ভাতের মাড় রক্তে থাকা শর্করার মাত্রা হঠাৎ করে বৃদ্ধি বা হ্রাস না করে স্বাভাবিক রাখে বলেই, ভাতের মাড় খাওয়ার ফলে ওজন বাড়ার কোন সম্ভাবনা নেই। তবে আমাদের মাথায় রাখতে হবে, কোন কিছুই মাত্রাতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয়। মোটা না হলে ও অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে আমাদের বদহজম বা পেটের অন্যান্য সমস্যা হতে পারে।
ভাতের মাড় কিভাবে খাবো
ভাতের মাড় খাওয়ার নিদিষ্ট কোন নিয়ম কানুন নেই। আপনি আপনার ইচ্ছামত যেকোন ভাবেই খেতে পারে। তবে এমন কিছু খাবার রয়েছে যে খাবার গুলোর সাথে ভাতের মাড় মিশালে তার পুষ্টিগুন আরো বেড়ে যায় এবং আমাদের সকলের স্বাস্থ্য উন্নতিতে কাজ করে। চলুন জেনে নেই ভাতের মাড় কিভাবে খাওয়া যায় সে সম্পর্কে ধারণা নেয়া যাক-
- ভাতের মাড় আপনি সরাসরি পান করতে পারেন। ভাত রান্না করার শেষ পর্যায়ে যে পানীয় ছেঁকে ভাত আলাদা করা হয় সেটিই মাড়। এই ভাতের মাড় অল্প লবণ মিশিয়ে খেতে পারেন।
- ভাতের মাড়ের সাথে মসুর ডাল বা মুগ ডাল রান্না করে খাওয়া যেতে পারে। এটি খাবারের পুষ্টিগুন আরো বাড়িয়ে তোলে।
- ভাতে মাড়ের সাথে চিড়া ভিজিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এটি খাওয়া অত্যন্ত স্বাস্থ্য সম্মত এবং আমাদের ক্ষুধা নিবারনে কাজ করে।
- স্যুপ রান্না করা সময় ভাতের মাড় ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে করে স্যুপের স্বাদ আরো দ্বিগুন করে তোলে।
- ভাতের মাড়ের সাথে দই মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এই মিশ্রনটি হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়ক।
- যেকোন ধরনের ফলের সাথে ভাতের মাড় মিশিয়ে খেলে, এটি স্বাদ বৃদ্ধি পায় এবং পুষ্টিগুন ও বেড়ে যায়।
ভাতের মাড়ের ক্ষতিকর দিক
ভাতের মাড়ের যেমন স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে তেমনি এর ক্ষতিকর দিক ও রয়েছে। যে বিষয়গুলোতে আমাদের সচেতন না হলে শরীরে গুরুতর সমস্যার দেখা দিতে পারে। তাই এই সকল সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ভাতের মাড়ের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে ধারনা রাখা জরুরি। চলুন জেনে নেই ভাতের মাড়ের ক্ষতিকর দিক-
ভাতের মাড় যদি স্বাস্থ্যকর পরিবেশে সংরক্ষন করা না হয় সেক্ষেত্রে এটি থেকে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। যেটি খাওয়ার ফলে আমাদের পেটে অস্বস্তি, পেট খারাপ বা পেটে গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই ভাতের মাড় খাওয়ার পূর্বে এটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশে সংরক্ষন করা এবং দীর্ঘ সময় পর্যন্ত রাখা মাড় খাওয়া উচিত নয়।
ভাতের মাড় প্রায় সব বয়সের মানুষের জন্য খাওয়া নিরাপদ। কিন্তু কারো কারো ক্ষেত্রে ভাতের মাড় থাকা ফাইবারের কারেনে হজমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। যাদের এ ধরনের সমস্যা রয়েছে তাদের উচিত ভাতের মাড় না খাওয়া। এছাড়া যাদের ভাতের মাড়ে এলার্জির সমস্যা দেখা দেয় তাদের ও ভাতের মাড় এড়িয়ে চলা উচিত।
ভাতের মাড় মাত্রাতিরিক্ত খাওয়ার ফলে অনেকের রক্তের শর্করা মাত্রা বৃদ্ধি এবং ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। এছাড়া ভাতের মাড় অতিরিক্ত পান করার ফলে আমাদের ঠান্ডা লাগা বা জ্বর-সর্দির মত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
লেখকের মন্তব্য: গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খাওয়ার উপকারিতা - ত্বকের যত্নে ভাতের মাড়ের উপকারিতা
প্রিয় পাঠক, আশা করি গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে এবং ত্বকের যত্নে ভাতের মাড়ের উপকারিতা সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। ভাতের মাড় দীর্ঘ সময় রেখে খাওয়া উচিত নয়। ভাতের মাড় ভাত থেকে আলাদা করার ১ থেকে ২ ঘন্টার মধ্যে খাওয়া উচিত। ভাতের মাড় একটি পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার তাই সপ্তাহে একরার হলেও ভাতের মাড় খাওয়া প্রয়োজন।
এতক্ষণ আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। এরকম তথ্যবহুল বা আপনার উপকারে আসে এমন আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন এবং কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত দিন। নিজে ভাল থাকুন, অন্যকে ভালো রাখুন। পৃথিবী হোক সুন্দরময়।
অ্যামপ্লি ইনফোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url